সিলিয়া র্যাভেন্সক্রফট স্মরণ করার চেষ্টা করলেন এবং বললেন মিসেস অলিভার, হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।
তার মানে এই নয় যে সিলিয়ার কোনো ছবি তার চোখের সামনে ভেসে উঠল অথবা একেবারে ছোটোবেলার কোনো ঘটনার কথা। কিংবা খ্রিস্টের নামে নামকরণের সময়। ও হ্যাঁ সিলিয়ার খ্রিস্টিয়ান নামকরণের সময় তিনি গিয়েছিলেন। উপহার স্বরূপ একটা সুন্দর কুইন অ্যানি মার্কা রূপার ছাঁকনি দিয়েছিলেন, যাতে ভালোভাবে দুধ ছাঁকা যেতে পারে অথবা কখনও যদি অর্থের প্রয়োজন হয় ধর্মকন্যা সেটা বিক্রিও করতে পারে। কুইন অ্যানির সেই ছাঁকনিটার কথা তিনি মনে করতে পারেন-সতেরোশো এগারো হবে। ব্রিটানিয়ার ছাপ ছিল তাতে। অবাক লাগে কত সহজেই রূপার কফি পেয়ালা বা ছাঁকনির কথা স্মরণ করা যায় কিন্তু যে সন্তানটিকে উপহার দেওয়া হয় তাকে ঠিক মনে রাখা হয় না। তিনি আবারও বললেন, আমার ধারণা বহুদিন সিলিয়াকে আমি দেখিনি।
মিসেস বার্টন কক্স বললেন, ও এখন অবশ্যই আবেগপ্রবণ মেয়ে হয়ে উঠেছে। আমি বলতে চাইছি যে, সম্প্রতি ও ওর ধারণা পালটে ফেলেছে কারণ ও খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো ফল করেছে কিন্তু আমার মনে হয় ওর রাজনৈতিক ধারণা আজকের দিনের সব তরুণ তরুণীদেরই মতো রাজনৈতিক ধারণা জন্মাচ্ছে।
মিসেস অলিভার বললেন, রাজনীতি নিয়ে আমি খুব বেশি মাথা ঘামাই না কারণ তার কাছে রাজনীতি সবসময়েই অভিশাপ বলে মনে হয়।
দেখুন আমি আপনার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেই এমন একটা কিছু বলতে যাচ্ছি যার সঠিক উত্তর আমি আপনার কাছ থেকে জানতে চাই এবং আমি নিশ্চিত যে, আপনি তাতে কিছু মনে করবেন না। আমি অনেকের কাছ থেকে শুনেছি আপনি কতো দয়ালু এবং কেমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সব কিছু সম্পন্ন করে থাকেন।
মিসেস অলিভারের মনে বিস্ময় জাগছে কারণ যদি উনি টাকা ধার চেয়ে বসেন আমার কাছ থেকে এবং তিনি এও জানেন যে, অনেকে সাক্ষাৎকার শুরু করেন প্রথমে এইরকম মনভেজানো কথাবার্তা বলে।
দেখুন, আমার কাছে এটা একটা বিরাট মুহূর্তের ব্যাপার। কারণ সত্যিই আমি এমন একটা কথা ভাবি যা আমাকে অবশ্যই খুঁজে বার করতে হবে। ভাবুন সিলিয়া বিয়ে করতে যাচ্ছে অথবা সিলিয়া আমার ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছে, ডেসমন্ডকে।
মিসেস অলিভার বললেন, তাই বুঝি?
বর্তমানে অন্তত সেটা তাদের ধারণা। মানুষ সম্পর্কে প্রত্যেকেই জানতে চায় এবং সেটা আমি ভীষণভাবে জানতে চাই। এটা এমন একটা অস্বাভাবিক জিনিস যা যে কোনো মানুষকে জিজ্ঞেস করা যায় না। কারণ আমি বলতে চাই যে, একজন আগন্তুকের কাছে জিজ্ঞেস করা, না তা আমি পারব না। বরং আমি মনে করি না, আপনি একজন আগন্তুক প্রিয় মিসেস অলিভার।
মিসেস অলিভার ভাবলেন যে, আমার ইচ্ছা আপনি করুন। কারণ তার স্নায়ু দুর্বল হতে চলেছে। কিন্তু তার উৎকণ্ঠা সিলিয়া অবৈধ সন্তানের জন্ম দেয়নি তো অথবা একটা অবৈধ সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছে এবং তিনি কি এই ব্যাপারে কিছু জানতে চান বিস্তারিতভাবে? এবং সেটা খুবই বেমানান হবে। অপর পক্ষে মিসেস অলিভার ভাবলেন যে, পাঁচ-ছ বছর হল আমি ওকে দেখিনি এবং ওর বয়স এখন পাঁচশ কিংবা ছাব্বিশ হবে নিশ্চয়ই। সুতরাং খুব বলা সহজ আমি কিছুই জানি না।
সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লেন মিসেস বার্টন কক্স যেন দেখে মনে হল নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার।
আমি চাই আপনি আমাকে বলুন, কারণ আমি নিশ্চিত হই আপনি জানেন নতুবা আপনার বেশ ভালো ধারণা আছে কী করে সেই সব ঘটল। আচ্ছা বলতে পারেন ওর মা কি ওর বাবাকে খুন করেছিল কিংবা ওর বাবা ওর মাকে খুন করে?
মিসেস অলিভার যা কিছুই অনুমান করে থাকুন না কেন মিসেস বার্টন কক্সের দিকে অবিশ্বাস্যভাবে স্থির চোখে তাকিয়ে রইলেন। কিন্তু আমি তা জানি না–একটু থামলেন আমি বুঝতে পারছি না ব্যাপারটা আমি বলতে চাইছি কোনো কারণে
প্রিয় মিসেস অলিভার আপনি নিশ্চয়ই জানেন। মানে আমি বলতে চাই এমন ধরনের একটা বিখ্যাত কেন…এবং অবশ্যই আমি জানি এটা অনেকদিন আগের ঘটনা, মনে হয় অন্তত দশ বারো বছর আগেকার তো হবেই। সেই সময় কিন্তু দারণ আলোড়ন তুলেছিল। আমি নিশ্চিত যে আপনি মনে রেখেছেন এবং আপনার অবশ্যই মনে রাখা উচিত।
মিসেস অলিভারের স্নায়ুকোষগুলো তখন বেপরোয়াভাবে কাজ করতে শুরু করে দিয়েছিল কারণ সিলিয়া ছিল তাঁর ধর্মকন্যা এবং সেটা খুবই সত্য। সিলিয়ার মা ছিল মলি প্রেস্টন গ্রে এবং সে ছিল তার বন্ধু যদিও ঠিক অন্তরঙ্গ নয়। আর হ্যাঁ অবশ্যই একজন সৈনিককে বিয়ে করেছিল। সে কী যেন নাম ছিল তার–হ্যাঁ স্যার অমুক র্যাভেন্সক্রফট। নতুবা কোনো এক রাষ্ট্রদূত? না, অস্বাভাবিক এ সব জিনিস কেউ কখনও মনে রাখতে পারে না। শুধু তাই নয় তিনি যে নিজে মলির বিবাহবাসরে তার সহচরীরূপে উপস্থিত ছিলেন সে কথাও মনে করতে পারছেন না। তিনি ভেবেছিলেন, তার মনে আছে, যেমন গাউস চ্যাপেলে স্মার্ট বিবাহ অনুষ্ঠান, অথবা সে ধরনের একটা কিছু। যে কেউ সেটা ভুলে যেতেই পারে, কিন্তু তারপর বেশ কয়েক বছর তাদের সঙ্গে তার আর দেখা হয়নি। হয়তো কোথাও যেন চলে গিয়েছিল তারা মধ্যপ্রাচ্যে? পারসিয়ায়? ইরাকে? একসময়ে ইজিপ্ট? অথবা মালয়ে? যদি কদাচিৎ তারা ইংল্যান্ডে বেড়োতে আসত তিনি আবার দেখা করতেন তাদের সঙ্গে। কিন্তু সে তো ছবি তোলার মতন এবং সেই ভোলা ছবির দিকে তাকিয়ে থাকার মতন। যদি কোনো লোককে অস্পষ্টভাবে মনে রাখলে পরে এবং সেই মনে রাখার ব্যাপারটা ধীরে ধীরে যে ভাবে মন থেকে মুছে যায় এবং সত্যিই পরবর্তীকালে তাদের চেনা বা মনে রাখা যায় না কে ছিল সে। আর আশ্চর্য তিনি এখন মনে করতে পারেন না, স্যার র্যাভেন্সক্রফট ও লেডি র্যাভেন্সক্রফট ওরফে মলি প্রেস্টন গ্রে তার জীবনে প্রবেশ করেছিল কিনা। কই সে রকম তার কিছু মনে হয় না। কিন্তু আশ্চর্য তারপর…তখনও তাঁর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন মিসেস বার্টন কক্স। তাঁর মনে রাখার অক্ষমতা দেখে মিসেস বার্টন কক্স হতাশ হয়ে উঠেছিলেন। আর সেই ঘটনার কারণই বা কী থাকতে পারে তাও তিনি ভেবে পান না।