আচ্ছা কেন অবাক হন বলুন তো?
আমি অবাক হই এই কারণে যে, তাহলে কি লেডি র্যাভেন্সক্রফট ও জেনারেলের মৃত্যুতে কারোর কিছু ভালো হয়েছে? তাদের মৃত্যুতে তাদের অর্থ ও সম্পত্তির কেউ উত্তরাধিকারী হয়েছে?
কেউ হয়তো তার জীবনে উন্নতি করতে চেয়েছিল। তাদের জীবনে এমন কিছু একটা ছিল যার কারণে তারা চায়নি ওঁদের ছেলেমেয়েরা কেউ সেটা জানুক? পোয়ারো একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
তিনি বললেন, আপনার কী দোষ জানেন? আপনি এমন কিছু চিন্তা করেন মনে হয় যেন সেটা এখন ঘটেছে বা ঘটতে পারে। যেমন–কেন ওঁদের দুজনের মৃত্যুর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল? ওদের কোনো যন্ত্রণা ছিল না, বা ওঁরা অসুস্থ ছিলেন না অথবা ওঁরা অসুখীও ছিলেন না। তবে কেন একটা সুন্দর দিনে সন্ধ্যায় কুকুরকে নিয়ে পাহাড়ে বেড়োতে গিয়েছিলেন?
মিসেস অলিভার প্রশ্ন করলেন, এর সঙ্গে কুকুরের কী সম্পর্ক?
আমি একটু সময়ের জন্য অবাক হই। পর মুহূর্তে মনে প্রশ্ন আসে তবে কি ওঁরা কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ছিলেন অথবা কুকুরটা কি ফিরে এসেছিল? মিসেস অলিভার বললেন, আমার মনে হয় এই ব্যাপারটাও পরচুলের পর্যায়ে পড়ে। কারণ আমার একটা হাতি বলেছে কুকুরটা ছিল লেডি র্যাভেন্সক্রফটের অনুগত আবার অপর আর একটা হাতি বলেছে, কুকুরটা নাকি ওঁনাকে কামড়ে দিয়েছিল। পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, সবাই সব সময় একই ব্যাপারে ফিরে আসে। সবাই মানুষ সম্পর্কে আরও আরও বেশি জানতে চায়। আর আপনিই বা কেমন করে জানবেন কারণ বহু বছরের ব্যবধানে আপনার কাছ থেকে সব মানুষ বিছিন্ন হয়ে গেছে। একবার কী দু-বার আপনিও সেটা করেছিলেন। কি করেননি? বললেন মিসেস অলিভার। একটা সমুদ্রের ধারে একজন শিল্পী গুলিবিদ্ধ হয়েছিল বা তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল। আপনি জানেন সেটা করা হয়েছিল আত্মরক্ষার জন্য বা ওইরকম কিছুর জন্য। আর এই কাজ কে করতে পারে আপনি সেটা খুঁজে বার করেছিলেন। আপনি যদিও কোনো লোককেই জানতেন না। আমি কোনো লোককেই জানতাম না ঠিকই কিন্তু অন্য লোকেদের মারফত তাদের সম্পর্কে আমি জানতে পারি।
মিসেস অলিভার বললেন, আমি তো সেটাই চেষ্টা করছি। সত্যি বলতে কী যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, যারা সত্যিকারের সব ঘটনা জানে আমি তাদেরই কাছে যথেষ্ট যেতে পারছি না। আপনার কি মনে হয় এর হাল সত্যি আমি ছেড়ে দেব? পোয়ারো বললেন, সেটা যদি আপনি করতে পারেন তাহলে সেটাই হবে আপনার বুদ্ধিমানের কাজ। আসলে কী হয় জানেন, এমন একটা সময় আসে মানুষ আর জ্ঞানী হতে চায় না। যেমন আমার খুব আগ্রহ আছে সেই দম্পতিদের ব্যাপারে। আমার ধারণা তাদের দুটো সন্তান আছে এবং খুব সুন্দর।
মিসেস অলিভার বললেন, ছেলেটির সম্পর্কে আমি জানি না এবং তার সঙ্গে কখনও মিলিত হইনি। আপনি কি আমার ধর্মকন্যাকে দেখতে চান? আমি ওকে আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলতে পারি। হ্যাঁ আমার মনে হয় ওর সাথে আমার সাক্ষাৎ করা উচিত। তবে ও হয়তো আমার সাথে দেখা করতে চাইবে না। কিন্তু সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে আর সেটা হতে পারে খুব আগ্রহের। আমার আর একজনের সঙ্গেও দেখা করা দরকার।
সেই ব্যক্তিটি কে? সাহিত্যের ভোজসভার সেই ভয়ঙ্কর মহিলা যে নাকি আপনার খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু।
মিসেস অলিভার বললেন, মোটেই তিনি আমার বন্ধু নন। আমার কাছে এসেছিলেন এবং কথা বলেন এই পর্যন্ত।
আপনি কি তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন না? হ্যাঁ খুব সহজেই, যদি তিনি এই কথা শোনেন সম্ভবত লাফিয়ে উঠবেন তিনি।
আমি ওঁকে অন্তত একবার দেখতে চাই, কারণ আমি তার কাছে জানতে চাইব যে, কেন তিনি সব খবর জানতে চান।
মিসেস অলিভার বললেন, হ্যাঁ আমার মনে হয় সেটা তাদের হতে পারে। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, সেই বৃদ্ধা আয়ার কথা আপনাকে বলেছিলাম তিনিও কিন্তু হাতিদের কথা বলেছিলেন, এবং এও বলেছিলেন যে, হাতিরা কখনও ভোলে না। সেই বিশ্রী কথাটা আমাকে তাড়া করে বেড়োয়। তাই হাতিদের কাছ থেকে বিশ্রাম পেলে খুশি হব। ওহো আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি। আপনাকে অতি অবশ্যই আরও হাতির খোঁজ করতে হবে। এবার আপনার পালা।
তাহলে আপনি এখন কি করবেন?
খুব সম্ভব আমি হংসের সন্ধান করব।
সেই হংসটিকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন?
সেটা একমাত্র আমিই মনে করতে পারি কারণ যার কথা আয়া আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন বেশ কয়েকটি ছোটো ছোটো ছেলেদের সঙ্গে আমি খেলা করতাম এবং তাদেরই মধ্যে একজন আমাকে লেডি হস্তিনী বলত আর অপরজন সম্বোধন করত লেডি হংসী বলে। আমি যখন লেডি হংসী হতাম তখন মেঝের ওপর সাঁতার কাটার ভান করতাম এবং যখন আমি লেডি হস্তিনী তখন ওরা আমার পিঠে চড়ে বসত।
পোয়ারো বললেন, সেটা খুব ভালো জিনিস। হাতিরাই যথেষ্ট।
.
ডেসমন্ড
দু-দিন বাদে এরকুল চকোলেট পান করছিলেন এবং অনেকগুলো চিঠির মধ্যে একটা চিঠি নিয়ে দ্বিতীয়বার পড়তে শুরু করলেন। চিঠিতে লেখা ছিল–প্রিয় মঁসিয়ে পোয়ারো,
আমি আশঙ্কা করছি যে, এই চিঠিটা আপনার কাছে একটু অদ্ভুত ধরনের মনে হবে এবং আমার বিশ্বাস আপনার বন্ধুদের মধ্যে এমন একজন আছেন যার সাথে আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের কথা তখন তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তার সাথে যদি আপনার দেখা হত মনে হয় কাজ হত আপনার। তার সেক্রেটারি বললেন, তিনি পূর্ব আফ্রিকায় গেছেন। তাহলে বেশ কিছুদিন তিনি ফিরছেন না। আমার ধারণা তিনি আমাকে সাহায্য করবেন। আপনার সাথে আমার দেখা করার খুব দরকার কারণ আপনার কাছ থেকে কিছু উপদেশ নেওয়া আমার প্রয়োজন।