আকর্ষণীয় কোনো কিছু পেয়েছিলেন?
মিসেস অলিভার হ্যাঁ বললেন। সেখানে যে একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল তার কথা বললেন। কিন্তু কথা শুনে মনে হল তিনি সেই ব্যাপারে অনিশ্চিত। কারণ তাদের পদবী তিনি মনে করতে পারছিলেন না। একজন মানসিক রোগিনীর কথা বললেন। সে হয় জেনারেলের বোন নয় লেডি র্যাভেন্সক্রফটের বোন হবে। সে কয়েকবছর মানসিক হাসপাতালে ছিল। এবং সে নাকি তার নিজের শিশুদের হত্যা করেছিল অথবা হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। তারপর সে সুস্থ হয়ে ইজিপ্ট কিংবা মালয়ে অথবা অন্য কোনো দেশে চলে যায়। আমার এখন আশঙ্কা হল যে, তাদের পরিবারে সত্যিই কোনো মানসিক রোগী ছিল কিনা। আমার মনে হয় তদন্তের ব্যাপারে এটা একটা সূত্র হতে পারে।
পোয়ারো বললেন, সব সময়েতেই একটা না একটা সম্ভাবনা থেকেই থাকে। তারপর দীর্ঘ কয়েক বছর পর সেটা রোমাঞ্চকর খবর হয়ে যায়। সেই কারণেই কে যেন আমাকে বলেছিল, পুরোনো পাপের দীর্ঘ ছায়া।
আমারও ঠিক সেইরকম মনে হয় বললেন, মিসেস অলিভার। বৃদ্ধা আয়া যে সব লোকের কথা তিনি মনে করেছিলেন তারা সত্যিই র্যাভেন্সক্রফটরা কিনা। কিন্তু সাহিত্যের ভোজসভায় সেই ভয়ঙ্কর মহিলাটি যা বলেছিলেন এইসব ঘটনার সঙ্গে তার কিছু মিল থাকতে পারে।
তিনি কী জানতে চেয়েছিলেন?
তিনি জানতে চেয়েছিলেন আমি যেন আমার ধর্মর্কন্যার কাছ থেকে খোঁজ নিই তার মা তার বাবাকে খুন করেছিল না তার বাবা তার মাকে খুন করেছিল।
তিনি কি ভেবেছিলেন যে, মেয়েটি সে খবর জানে?
হ্যাঁ, মেয়ের জানার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। প্রকৃত সত্য তার কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। কিংবা তার কাছে সেটা অপ্রকাশিত থেকে গিয়েছিল। তারপর মেয়েটি অনেক চেষ্টা করেছিল জানতে কোন পরিস্থিতিতে দুটো জীবন শেষ হয়ে গেল আর কে কাকেই বা খুন করেছিল। যদিও সে সেটা কখনও প্রকাশ করবে না বা কাউকে কিছু বলবে না এ-ব্যাপারে। অথবা এ ব্যাপার নিয়ে কারোর সঙ্গে কোনোরকম আলোচনাও করবে না।
আপনি সেই যে মহিলার কথা বলেন এই সেই মিসেস
এখন তার নামটা ভুলে গেছি, হা মিসেস বারটন এরকম কোনো একটা নাম হবে। তার ছেলে একটি মেয়েকে ভালোবাসে এবং তারা এখন বিয়ে করবে বলে ভাবছে। তাই যদি হয় এখন আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন মেয়েটির মা কিংবা বাবার পরিবারে কোনো অপরাধী আত্মীয় ছিল কিনা। কারণ মিসেস বারটন নিশ্চয়ই চিন্তা করে থাকবেন যদি মেয়েটির মা তার বাবাকে খুন করে থাকে তাহলে মেয়েটিকে বিয়ে করা অবিবেচকের কাজ হবে। মিসেস অলিভার বললেন, কিছু মনে করবেন না আর বাবা যদি তার মাকে খুন করে থাকে?
আপনি বলতে চাইছেন তিনি ভেবেছিলেন-তার উত্তরাধিকারের ভাগীদার হবে একজন নারী? মিসেস অলিভার বললেন, ও ভালো কথা তিনি খুব একটা বুদ্ধিমতী নারী ছিলেন না। তিনি মনে করতেন যে তিনি অনেক কিছুই জানেন, আদৌ তিনি কিছুই জানেন না। আমার অনুমান আপনিও যদি নারী হতেন তাহলে ঠিক এইভাবেই আপনিও ভাবতেন।
এটা একটা উল্লেখযোগ্য দিক বটে। পোয়ারো বললেন, আমি সেটা উপলব্ধি করতে পারি।
আরও একটা দিকের কথা আমি চিন্তা করেছি। এই দম্পতি একটা শিশুকে দত্তক নিয়েছিল। আমার মনে হয় তখন তাদের একটি শিশু মারা যায় এবং সেই কারণেই সেই দত্তক শিশুটিকে তারা সম্পূর্ণভাবে আঁকড়ে ধরেন। তারপর একদিন তার নিজের মা তাকে ফেরত চায়। সেই ঝামেলা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল এবং আদালত শিশুটির ভার তাদের ওপর দিয়েছিল। আর তখনই নিজের মা ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে অপহরণ করার চেষ্টা করেছিল, পোয়ারো বললেন, এটাই আমি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি।
যেমন?
চার-চারটে পরচুল।
মিসেস অলিভার বললেন, আমি ভাবলাম এটা আপনাকে আগ্রহ জাগাবে। আমার মনে হয় না এর কোনো মানে আছে। আর অপর কাহিনি হল একজন মানসিক রোগী সে তার শিশুদের অথবা অকারণে অন্য শিশুকে হত্যা করেছিল। সেই হত্যার পিছনে কোনো যুক্তি আছে আমি ভাবতে পারছি না। আর এও বুঝতে পারছি না কেনই বা জেনারেল এবং লেডি র্যাভেন্সক্রফট নিজেদের হত্যা করতে গেলেন?
পোয়ারো বললেন, যদি ওদের মধ্যে কেউ একজন জড়িত থাকে?
তার মানে আপনি কি বলতে চান জেনারেল র্যাভেন্সক্রফট কাউকে হত্যা করেছিলেন, মানে একটি অবৈধ সন্তানকে যা ওঁর স্ত্রীর কিংবা নিজের ছিল? কিংবা লেডি র্যাভেন্সক্রফট তার স্বামীর ছেলেকে বা নিজের ছেলেকে হত্যা করেছিল? কিন্তু আমার মনে হয় এটা অতি নাটকীয় হয়ে যাচ্ছে।
পোয়ারো বললেন, লোকের মনে কি ধারণা হতে পারে সাধারণতঃ তারা…।
তার মানে আপনি বলতে চাইছেন?
আমার অনুমান তারা ছিলেন স্নেহপ্রবণ দম্পতি। সুখে স্বচ্ছন্দে বাস করত এবং তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া বিবাদ ছিল না। কতক লোকের ধারণা অপারেশন হওয়া দূরের কথা তাঁদের মধ্যে কেউ একজন অসুস্থ ছিল এমন রেকর্ড পাওয়া যাবে না। এমনকি লন্ডনে গিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ারও কোনো রেকর্ড নেই। সেই সময়ে অন্য কেউ যদি সেই বাড়িতে থাকত তদন্তের সময় পুলিশ সব কথা জানত এবং আমার সেই পুলিশ বন্ধুটি নিশ্চয় আমাকে জানাত। যে কারণেই হোক তাঁরা আর বেঁচে থাকতে চাননি। কিন্তু কারণ কী?
মিসেস অলিভার বললেন, আমি একটি দম্পতিকে জানতাম যারা ধরে নিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যদি জার্মানরা ইংলন্ডে আসে তারা তাদের হত্যা করবে। আমার মনে হয় এটা খুবই বোকামো। বাঁচতে গেলে তোমাকে যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় করতে হবে। তোমার মৃত্যুতে কারোর হয়তো ভালো হবে বা কারোর কোনো উপকার হবে তোমাকে সেটা বুঝতে হবে। আর আমি অবাক হয়ে যাই