পোয়ারো বললেন, ঠিক বলেছেন আমিও সেই একই রকম শুনেছিলাম।
এখবর আপনি কোথা থেকে শুনলেন?
আমার এক বন্ধু পুলিশে কাজ করে। সেই ঘটনার সময় পুলিশি তদন্ত হয়। এবং তদন্ত করতে গিয়ে ওদের বাড়ি থেকে যে সব জিনিস পাওয়া যায় তার একটা তালিকা পুলিশ সংগ্রহ করেছিল। আমার সেই পুলিশ বন্ধুটি আমাকে সেই তালিকা দেখায় এবং তাতে দেখি চারটে পরচুলের কথা লেখা আছে। আচ্ছা ম্যাডাম, আমি আপনার মত এই ব্যাপারে জানতে চাই।
সত্যিই আমি এটা বেশি বলে মনে করি, মিসেস অলিভার বললেন। তিনি আরও বললেন, আমার এক কাকির একটা পরচুল ছিল, আর একটা বাড়তি পরচুল ছিল। একটা পরচুল ফেরত পাঠান আমার কাকি নতুন করে সংস্কার করার জন্য। এবং দ্বিতীয়টি তিনি ব্যবহার করতে থাকেন। চারটে পরচুল কারোর থাকতে পারে আমি কখনও আগে শুনিনি। মিসেস অলিভার তার ব্যাগ থেকে একটা ছোটো নোটবুক বার করলেন এবং তার পাতা ওলটালেন বিশেষ প্রতিলিপি খোঁজ করার জন্য।
মিসেস কারস্টেয়ার্স, বয়স সাতাত্তর, একটু ভীমরতিগ্রস্ত। তার মুখের কথাই এখানে লিখে রেখেছি। র্যাভেন্সক্রফটদের আমি ভালো করেই জানতাম। তারা চমৎকার দম্পতি। আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম ওঁদের দুজনের মধ্যে কার ক্যান্সার হয়েছিল? কিন্তু মিসেস কারস্টেয়ার্স ঠিক মনে করতে পারলেন না কার যে ক্যান্সার হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন যে, তার ধারণা লেডি র্যাভেন্সক্রফট লন্ডনে এসেছিলেন চিকিৎসকদের কাছ থেকে পরামর্শ করার জন্য এবং সম্ভবত একটা অপারেশনও করে থাকবেন তিনি। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে এলে তার স্বামী খুব মুষড়ে পড়েন। অতএব এর থেকে মনে করে নেওয়া যেতে পারে তিনি প্রথমে তার স্ত্রীকে গুলি করেন। পরে নিজেকে…।
এ-ব্যাপারে তিনি কি নির্দিষ্ট করে কিছু জানতেন, না সম্পূর্ণ তার ধারণা?
আমার মনে হয় পুরোপুরি এটা একটা ধারণা। মিসেস অলিভার বললেন, আমার তদন্তের সময় যা শেষ শুনেছি তা হল, যখন কেউ শোনে তার কোনো এক বন্ধু যাকে সে ভালো চেনে না, অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করছে, তখন সে ধরে নেয় তার সেই বন্ধুরই ক্যান্সার হয়েছে। কেউ একজন নামটা ঠিক পড়তে পারছি না, তার মনে হয় নামটা টি দিয়ে শুরু, সেই মহিলাটি বলেছিল স্বামীরই ক্যান্সার হয়েছে। ভদ্রলোক সেইজন্য খুব অসুখী ছিলেন। এই অসুখের কথা চিন্তা করেই হয়তো তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করেন আত্মহত্যা করবেন।
পোয়ারো বললেন, দেখুন ব্যাপারটা খুব দুঃখজনক আবার রোমান্টিক।
আমি এটা সত্য বলে মনে করি না। মিসেস অলিভার বললেন। আর এটা চিন্তার ব্যাপার তাই না? সত্যিই লোকেরা কেমন মনগড়া গল্প করতে পারে।
পোয়ারো বললেন, তারা যতটুকু কাহিনি জানে ততটুকু সমাধান করে ফেলে। যেমন কতগুলো লোক জানে কেউ একজন আসছে লন্ডনে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য। আবার কেউ দু-তিন মাস হয়তো হাসপাতালে রয়েছে।
মিসেস অলিভার বললেন, দীর্ঘদিন বাদে তারা যখন এ ব্যাপারে কথা বলে, এমন ভাব দেখায় যেন তারা সমাধান খুঁজে পেয়ে গেছে। অথচ সেটা তাদের মনগড়া। সেটা কোনো সাহায্যেই লাগতে পারে না। এটা কোনো কাজের কথাও নয়, তাই নয় কি?
আপনি যা বলেছিলেন সেটা যেমন ঠিক আবার এটা কাজেরও হতে পারে, বললেন পোয়ারো।
একটু সন্দেহের সঙ্গে মিসেস অলিভার বললেন, হাতির ব্যাপারে?
পোয়ারো বললেন, কয়েকটা ঘটনার কথা জানা খুব জরুরি যা মানুষের স্মৃতিপটে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে আছে। প্রকৃত ঘটনা কী, বা কেন সেটা ঘটেছিল অথবা তার পরিণতিই বা কি হতে পারে তারা সহজেই যা জানতে পারে আমরা তা জানি না। বিশ্বাসঘাতকতা, অসুস্থতা বা আত্মহত্যার চুক্তি সবই তাদের ধারণার কথা এবং মতামতের কথা আপনাকে জানিয়েছি।
মিসেস অলিভার বললেন, মানুষ অতীতের কথা বলতে ভালোবাসে। প্রথমে তারা অন্য সব লোকেদের কথা যা তাদের স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে তাদের কথা বলেন যা আপনি শুনতে চান না। তারপর তারা এমন লোকেদের প্রসঙ্গ টানত যা নিজেরাই জানে না। অন্য কারোর কাছ থেকে শুনে থাকবে। জানেন প্রথম ভাইপো একবার অপসারিত হলে দ্বিতীয় ভাইপো কিন্তু দু-বার অপসারিত হবে। আর তারপর বাকিরাও ওই একইভাবে অপসারিত হবে। তাই আমার মনে হয় এত সব তথ্য জোগাড় করার পরও সত্যিকারের কোনো কাজের কাজ হয়নি।
পোয়ারো বললেন, সেরকম ভাবার কোনো কারণ আপনার নেই। আমি একদম নিশ্চিত যে, আপনার ওই ছোট্ট নোটবুকে যে সব ঘটনার কথা লেখা আছে তা থেকে একদিন নিশ্চয়ই অতীতের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার কিছু হদিশ আপনি পাবেনই। সরকারি নথিপত্র ঘেঁটে অর্থাৎ পুলিশি ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে সেই মৃত্যু আজও রহস্য রয়ে গেছে। তারা ছিলেন সুখী দম্পতি। তাদের কোনো যৌন অসুবিধা ছিল না। এবং এমন কোনো অসুখ ছিল না তাদের, যা থেকে তারা তাদের আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে। সুতরাং সেই ঘটনা ঘটার আগের সময় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। কিন্তু তারও আগের সময়ের কথা ভাবতে হবে।
মিসেস অলিভার বললেন, আপনি কী বলতে চাইছেন আমি তা জানি। আর এ-ব্যাপারে আমি বৃদ্ধা আয়ার কাছ থেকে কিছু তথ্যও পেয়েছি। আমার ধারণা সেই বৃদ্ধার বয়স হবে আশি। আমি তাকে ছেলেবেলা থেকে চিনি। এবং তিনি আমাকে বিদেশে সৈনিকদের গল্প শোনাতেন।