পোয়ারো বললেন, আপনি এত কঠোর যে ম্যাডাম আপনার দাবি অনুযায়ী আমি সবসময় কাজ করে যাচ্ছি।
বেশ, তাহলে বলুন আপনিও কাজের পিছনে ছুটছেন।
আমি নিজে ছুটছি না, আমার নিজস্ব পেশার কয়েকজনের সঙ্গে পরামর্শ করেছি।
আপনার কাজ শুনে মনে হচ্ছে আমার থেকে অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ। বাঃ, আপনার কফি সত্যিই খুব কড়া হয়েছে। আমি যে কি পরিমাণ ক্লান্ত আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না।
আপনাকে দেখে আমার অনুমান আপনি কিছু একটা পেয়েছেন।
আমি প্রচুর লোকের কাহিনি এবং লোকের পরামর্শ পেয়েছি। বুঝতে পারছি না সেগুলোর মধ্যে একটাও সত্যি কাহিনি আছে কিনা।
পোয়ারো বললেন, হয়তো সেগুলোর মধ্যে কোনো সত্য ঘটনা নেই তবু সেগুলো কোনো না কোনো সময় কাজে লাগতে পারে।
মিসেস অলিভার বললেন, আপনি কী বলতে চাইছেন তা আমি জানি আর সত্যি কথা বলতে আমিও সেটা মনে করি। লোকেরা যখন কিছু মনে করার চেষ্টা করে এবং সে ব্যাপারে আপনাকে কিছু বলে আমার মনে হয় সেগুলো কখনও ঘটেনি। তারা নিজেরা যা ভেবে রেখেছে সেটাই ঘটেছে।
পোয়ারো বললেন, কোনো তথ্য ছাড়া কোনো অনুমান গড়ে ওঠে না।
মিসেস অলিভার বললেন, এই ধরনের তালিকা আপনার জন্য আমি এনেছি। আর শুনুন আমি কোথায় গিয়েছিলাম, এবং কী জিজ্ঞেস করেছিলাম কিনা এসব প্রশ্নের ব্যাখ্যা চাইবেন না। আমার এই অভিযানের উপলব্ধি হল সাধারণত এদেশে কেউ চাইলেও তার মনের মতো খবর সংগ্রহ করতে পারে না; কিন্তু আমি সব জেনেছি। এমন কিছু লোকের কাছ থেকে যারা নাকি র্যাভেন্সক্রফটদের সম্পর্কে কিছু না কিছু খবরা-খবর রাখে।
আপনি কি বোঝাতে চাইছেন বিদেশের খবরের কথা?
হ্যাঁ বেশ কিছু খবর আছে বিদেশের। কারণ এখানে তাদের সামান্য তোক চিনত। আর এমন সব লোকের মুখের খবর যারা তাদের মাসিমা, কাকিমা অথবা বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছিল অনেকদিন আগে।
আপনার প্রত্যেকটি লিপিবদ্ধ করা তথ্য, সেই ঘটনার উল্লেখ এবং কিছু ব্যক্তির নাম সংগ্রহ সবই তো এই কেসের সঙ্গে জড়িত তাই না?
মিসেস অলিভার বললেন, এই রকমই একটা ধারণা, তা আপনাকে সংক্ষেপে বলব।
তাহলে শুনুন যে মতামতগুলো আমি সংগ্রহ করেছি। তাদের শুরু হল যেমন কিরকম দুঃখের খবর এটা, পুরো কাহিনিটাই, বা অবশ্যই আমার মনে হয়, প্রত্যেকেই জানেন, প্রকৃত ঘটনা কি ঘটেছিল কিংবা ওহো হ্যাঁ অবশ্যই প্রভৃতি সব কথাবার্তা। হা হা আপনি বলে যান আর আমি সব শুনছি, এইসব লোকেরা জানে সেদিন কী ঘটনা ঘটেছিল কিন্তু আশ্চর্য লাগে তাদের ধারণার সমর্থনে তেমন কোনো অকাট্য যুক্তি নেই। যেমন কেউ তাদের বলেছে অথবা তারা তাদের বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে শুনেছে। তাদের মতামতগুলো আপনিও যা ভেবেছেন সেইরকম কিছু মনে করা যাক। জেনারেল তার মালয়ের স্মৃতিকথা যখন লিখেছিলেন তাকে লেখার কাজে সাহায্য করেছিলেন তার একজন যুবতী সেক্রেটারি। মেয়েটি দেখতে সুন্দর ছিল এবং তাদের দুজনের মধ্যে কিছু যে একটা সম্পর্ক ছিল তাতে কোনো দ্বিমত নেই। এই সম্পর্কের পরিণাম দু-রকমের হতে পারে। যেমন মেয়েটিকে তিনি বিয়ে করার আশা করেছিলেন তাই তিনি তার স্ত্রীকে গুলি করে থাকতে পারেন অথবা তার স্ত্রীকে গুলি করার পর মুহূর্তে ভীষণ আতঙ্কের সৃষ্টি হয় যার ফলে তিনি নিজেই নিজেকে গুলি করেন….
পোয়ারো বললেন, ঠিক তাই। এটা একটা রোমান্টিক ব্যাখ্যা। আরেকটা ধারণা হল তাদের ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ছ-মাস স্কুলে ক্লাস করতে পারেনি। পরীক্ষায় তাকে তৈরি করানোর জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। সে ছিল বয়সে তরুণ এবং সুপুরুষ। আচ্ছা দেখছি তাহলে সবই মিলে গেল। সেই যুবকটির প্রেমে পড়ে যান লেডি র্যাভেন্সক্রফট। হয়তো তার সঙ্গে নিবিড়ো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে থাকবে।
মিসেস অলিভার বললেন, হ্যাঁ সেই রকমই একটা ধারণা হয়েছিল, এক্ষেত্রেও কোনো প্রমাণ নেই। আবার সেই রোমান্টিক ধারণা।
সুতরাং তাহলে?
সুতরাং আমার ধারণা সম্ভবত তার স্ত্রীকে জেনারেল আগে গুলি করেছিলেন এবং তারপর তীব্র আতঙ্কে নিজেই নিজেকে গুলি করেছিলেন। অথবা তাঁর স্ত্রী সেই মেয়েটির সঙ্গে তার স্বামীর গোপন সম্পর্কের কথা জেনে থাকবেন, সেই ঘৃণায় তিনি তাঁর স্বামীকে গুলি করে নিজেই নিজেকে গুলিবিদ্ধ করেন। কিংবা সব সময় এরকম একটা কাহিনি প্রচার হয়ে থাকে যেমন মেয়েটির সঙ্গে জেনারেলের কোনো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে থাকবে অথবা অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে জেনারেলের কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠে থাকবে বা কোনো এক বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠে থাকবে। অপর দিকে এও হতে পারে অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনো অবৈধ সম্পর্ক থাকতে পারে। এই সমস্ত কাহিনি সামান্য তফাত থাকলেও মূল বিষয়বস্তু প্রায় এক। এইসব কাহিনির সাক্ষ্য প্রমাণ কিছুই নেই। বারো বা তেরো বছর আগে যে কাহিনির সূচনা তা এখন লোকেরা প্রায় ভুলেই গেছে বলতে পারা যায়। কিন্তু আশ্চর্য লাগে কাউকে কয়েকটা নাম সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে লোকের মুখে শোনা খবরই দেয় অথচ প্রকৃত তথ্য তারা জানে না। আর সে কাহিনি যে ভুল হতেই পারে তা তাদের জানা নেই। বাগানের পরিচর্যার জন্য একজন মালি ছিল। একজন বয়স্ক কুক-হাউসকিপার ছিল। যে নাকি অন্ধ ও বোবা ছিল। অথচ সেই ঘটনার সঙ্গে মেয়েটি যে জড়িয়ে থাকতে পারে এদের দুজনের মধ্যে কোনো সন্দেহ জেগে ওঠেনি। আমি নামগুলো লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। সেখানে কতকগুলো নাম ভুল আবার কতকগুলো নাম ঠিকও হতে পারে। এবং সেটা নির্ধারণ করা খুব কঠিন ব্যাপার। আমি আরও জেনেছি, একসময় তার স্ত্রী এমন কঠিন ধরনের অসুখে পড়েন যাতে তার চুল সব উঠে গিয়েছিল এবং সেই কারণেই তিনি চার চারটে পরচুল কিনেছিলেন।