না, না, আমি একেবারেই বিশ্বাস করি না। ওঁদের ছেলেমেয়েরা কি তখন বাড়িতে ছিল?
না, মেয়েটির নাম যেন কি রোজি না পেনেলোপ?
মিসেস অলিভার বললেন, আমার ধর্মকন্যা সেলিয়া।
ওহো হ্যাঁ, মনে পড়েছে। একবার ওকে নিয়ে আপনি যেন কোথায় বেড়োতে যান। ও দারুণ তেজস্বী ও সাহসী মেয়ে ছিল তবে একটু বদ মেজাজিও ছিল। তবু আমার মনে হয় মেয়েটি ওর বাবা মার খুব প্রিয় ছিল। ও তখন সুইজারল্যান্ডের স্কুলে ছিল। মানুষের মুখের কথা যে, দুর্ঘটনার সময় যদি ও বাড়িতে থাকত বাবামা-র অমন বীভৎস মৃতদেহ দেখলে ও খুব আঘাত পেত।
ওঁদের সেই ছেলেটি, সে কি তখন বাড়িতে ছিল না?
হ্যাঁ, ওকে দেখলে মনে হত যে, ও ওর বাবাকে পছন্দ করত না। ওর ব্যাপারে ওর বাবা খুবই চিন্তিত ছিলেন বলে আমার ধারণা।
ছেলেরা অমনি হয়ে থাকে। সেটা এমন কিছু ব্যাপার নয়। আচ্ছা আপনার কি মনে হয় ছেলেটি ওর মার প্রতি অনুগত ছিলো?
ওর মা ছেলের ব্যাপারে বড়ো বেশি হইচই করতেন। এর জন্য বোধহয় ছেলেটিকে খুব বিরক্ত বলে মনে হত। আর কোনো ছেলেই চায় না তার মা তার ব্যাপারে ব্যস্ততা দেখাক। ছেলেটির চুলের স্টাইল তার বাবা পছন্দ করতেন না। আজকালকার ছেলেদের ফ্যাসন সম্পর্কে বাবা-মার আপত্তি করাটা ঠিক নয়। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কি বতে চাইছি।
কিন্তু সেই ঘটনা ঘটার সময় ছেলেটি তো তার বাড়িতে ছিল না তাই তো?
না।
আমার ধারণা হয়তো সে খুব আঘাত পেয়েছিল।
হ্যাঁ আঘাত পেতেই পারে। অবশ্য সে সময় আমি তার বাড়িতে যেতাম না, ফলে আমি বেশি কিছু জানি না। তবে আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন বাগানের সেই মালিটা যাকে আমি পছন্দ করতাম না, তার নাম ছিল ফ্রেড উইজেল, আমার মনে হয় সে এমন একটা অন্যায় কাজ করেছিল যার ফলে জেনারেল তাকে পদচ্যুত করতে চেয়েছিলেন এবং সেই কারণেই মনে হয়–
সে কি স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই গুলিবিদ্ধ করেছিল?
আমার মনে হয়েছিল তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল জেনারেলকে গুলি করে মারা। কিন্তু জেনারেলকে হত্যা করার পর যদি সে তার স্ত্রীকে ঘটনাস্থলে আসতে দেখে সাক্ষী মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে তাকেও সে গুলি করতে বাধ্য হবে। গল্প উপন্যাসে এরকম ঘটনা অনেক ঘটে থাকে এবং আপনি হয়তো পড়েও থাকবেন।
মিসেস অলিভার চিন্তিত হয়ে বললেন, হ্যাঁ গল্প উপন্যাসে এরকম ঘটনার কথা সবাই পড়ে থাকে।
সেখানে একজন শিক্ষক ছিলেন আপনি হয়তো জানেন না। আমি তাকেও ঠিক পছন্দ করতাম না।
শিক্ষক! সে আবার কী রকম?
আগে ছেলেটি যখন গ্রেপ স্কুলে পড়ত সে পরীক্ষায় কিছুতেই পাশ করতে পারত না। তাই ওঁরা ছেলের জন্য একজন শিক্ষক রেখেছিলেন। লেডি র্যাভেন্সক্রফট তাকে খুব পছন্দ করতেন। আপনি জানেন নিশ্চয়ই লেডি র্যাভেন্সক্রফট গান জানতেন এবং সেই শিক্ষকটিও গান জানতেন। যুবকটির খুব অভিমান ছিল। আমার মনে হচ্ছে তার নাম ছিল মিঃ এডমন্ড। যতদূর মনে হয় জেনারেল তাকে খুব বেশি পাত্তা দিতেন না।
জেনারেল না দিলেও লেডি র্যাভেন্সক্রফট তো দিতেন।
নিশ্চয়ই তা তিনি করবেন। আমার ধারণা ওঁদের দুজনের মধ্যে খুব মিল ছিল। এবং জেনারেলের থেকেও তিনি তাকে বেশি ভালোবাসতেন। কারণ যুবকটির আদব কায়দা ছিল চমৎকার। সুন্দর কথা বলতে পারত। এবং যা করার সবই যে–সেই করত, হা কী যেন তার নাম ছিল? এডওয়াড? আমার মনে হয় নায়কোচিত ধ্যান ধারণা ওঁদের সম্পর্কে কোনো স্ক্যান্ডাল বা খোশগল্প কিছু শুনে থাকলে একদম বিশ্বাস করবেন না। লেডি র্যাভেন্সক্রফট-এর সঙ্গে কোনো পুরুষের বা জেনারেলের সঙ্গে ফাইলিং ক্লার্কের মধ্যে সেরকম কিছু কানে এলে একদম আমল দেবেন না। সেই ভয়ঙ্কর বদমাশ খুনি আর যেই হোক না কেন সে অবশ্যই বাইরের কেউ। পুলিশ কিন্তু কারোরই সন্ধান পায়নি যার ভিত্তিতে আটক করা যেতে পারে। সেখানে শুধু একটা গাড়ি পাওয়া গিয়েছিল তবে সেটা কোনো কাজে লাগেনি। আমার মনে হয় মালয় অথবা বিদেশের কোথাও কিংবা ইংল্যান্ডের রোম সাউথে যদি একটু খোঁজ নেওয়া যায় একটু ক্ল অন্তত খুঁজে পাওয়া গেলেও যেতে পারে। সেখানে গেলে সে খুনির সন্ধান পাওয়া যাবে না এমন কথা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবে না।
মিসেস অলিভার প্রশ্ন করলেন, এ ব্যাপারে কি মত আপনার? কিন্তু আপনি ওঁদের সম্বন্ধে যতটা জানেন ঠিক ততটা ওঁর জানা নেই। অবশ্য তিনি নিশ্চয়ই কিছু শুনে থাকলে থাকতে পারেন। হা নানান লোকের ধারণার কথা উনি শুনেছিলেন। যেমন লেডি র্যাভেন্সক্রফট নাকি মাত্রাতিরিক্ত মদ খেতেন এবং মাতাল হয়ে পড়তেন। মদের খালি পেটি পাওয়া যায় নাকি তাদের বাড়ি থেকে। আমি ওঁকে খুব ভালো করেই জানতাম। সুতরাং আমার দৃঢ় বিশ্বাস এসব একেবারেই অসত্য। ওদের এক ভাইপো ওদের সঙ্গে দেখা করতে আসত মাঝে মাঝে। সে নাকি কোনো এক মামলায় পুলিশি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিল।
পুলিশের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিল ঠিকই কিন্তু আমার মনে হয় না এর সাথে সেই ঘটনার কোনো সম্পর্ক আছে। কারণ পুলিশই তাকে কোনোরকম সন্দেহ করেনি।
জেনারেল ও লেডি র্যাভেন্সক্রফট ছাড়া আর কেউ কি ওদের বাড়িতে থাকত?
হ্যাঁ কখনও কখনও লেডি র্যাভেন্সক্রফটের এক বোন তাঁদের বাড়িতে এসে থাকত। সে এঁদের মধ্যে একটা গণ্ডগোলের সৃষ্টি করেছিল আর ও আসলেই আমার আতঙ্কের সৃষ্টি হত কারণ কী জানি আবার কী ঝামেলা বাঁধাবে।