সেই মুহূর্তে মিসেস অলিভার বলেছিলেন, না–কিন্তু আমি সেরকম নই।
না, না বলবেন না, আমি সেরকমই নই। আপনি অবশ্যই বলবেন আপনি খুব ভালো লেখেন। আপনি যদি এই মুহূর্তে মনে করেন যে, আপনি পারেন না তখন আপনাকে বলতেই হবে যে, আপনি পারেন।
মিসেস অলিভার আলবারটিনাকে বললেন, যে সব সাংবাদিকরা আসে তাদের তুমি সাক্ষাৎকার নিতে পারো, কারণ এ কাজটা তুমি বেশ ভালোভাবেই করতে পারো দেখছি। এবং তুমি আমার হয়ে এদের সাথে ভাব করো আর আমি দরজার আড়ালে থেকে শুনব।
আলবারটিনা বললেন, আমি তা করতে পারি এবং সেটা একটা বেশ কৌতুক হবে কিন্তু তারা যে জানবে আমি আপনি নই, আপনার মুখ তারা চেনে, সেই জন্যেই বলছি বরং আপনি নিজেই ওকে থামিয়ে দিয়ে বলবেন হা হা জানি অন্যদের থেকে অনেক ভালো লেখা আমি লিখি। সবাইকে আপনার বলতে হবে এবং সেটা তাদের জানা উচিত। তা না করে সেখানে বসে যদি আপনাকে বলতে শুনি আপনি নিজে ভালো লেখার জন্য গর্ববোধ না করে উলটে বিনয় দেখিয়ে বলছেন, না, না আমি অত ভালো লেখিকা নই, অসম্ভব বেমানান লাগবে সেই কথাগুলো।
মিসেস অলিভার ভাবলেন এ যেন নবাগতা অভিনেত্রীকে কি করে অভিনয় করতে হয় শেখাচ্ছে এবং পরিচালক তাকে তার নির্দেশ দেবার পক্ষে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ বলে ধরে নিলো। যাইহোক এখানে খুব বেশি অসুবিধা হবে না, টেবিলে যে কয়জন মহিলা অপেক্ষা করবে তাদের কাছে হাসি মুখে এগিয়ে যাবেন তিনি এবং খুব সুন্দর করে বলবেন আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এমনকি কারোর বই-এর মাধ্যমে যে কেউ মানুষকে জেনে আনন্দ পেতে পারে, এ যেন কথামালার বাক্সে হাত ঢুকিয়ে কতকগুলো দরকারি শব্দ তুলে নেওয়া যা আগেই রুদ্রাক্ষের মালার মতন গাঁথা হয়ে গেছে।
তার চোখ টেবিলের চারপাশে ঘোরাফেরা করছিল কারণ তিনি তার কয়েকজন বন্ধু ও ভক্তদের সেখানে দেখেছিলেন। একটু দূরে মায়রিন গ্র্যান্টকে দেখতে পেলেন। দারুণ কৌতুকপ্রিয় তিনি। এবং বিপদের সময় মিসেস অলিভার প্রায়ই নিজের মতন মনে ভেবে থাকেন। ককটেল পার্টিতে এবং সাহিত্যিকদের সভায় কখনও তিনি গিয়ে থাকেন। এখানে যে কোনো মুহূর্তে বিপদ এসে যেতে পারে। যেমন–আপনি যাকে মনে রাখতে পারেননি তিনি ঠিক আপনাকে মনে রেখেছেন, অথবা আপনি হয়তো কারোর সঙ্গে কথা বলতে চান না, কিন্তু তাকে দেখে আপনিও এড়িয়ে যেতে পারবেন না। এক্ষেত্রে তার সামনে উভয় সংকট দেখা দেবে।
একজন ভারিক্কি চেহারার সাদা দাঁতওয়ালা ভদ্রমহিলা মিসেস অলিভারের সাথে পরিচিত হতে চান।
উচ্চৈঃস্বরে তিনি মিসেস অলিভারকে বললেন, আজ আপনার সাথে দেখা হওয়াতে আমার কী আনন্দ। আপনার বই আমার খুব প্রিয়। আবার আমার ছেলেরও। এবং আমার স্বামী ভ্রমণে গেলে আপনার দুটো বই সঙ্গে নেবার জন্য চাপ দেবে।
মিসেস অলিভার ভাবলেন ভদ্রমহিলাটি আমার মনের মতো নয়।
একজন পুলিশ অফিসার ঠিক যেমন করে থাকে সেইভাবে তিনি নিজেকে মহিলার হাতে সঁপে দিলেন। এবং তার নতুন বন্ধু এক কাপ কফি গ্রহণ করে তার সামনে আর এক কাপ কফি রাখলেন।
মিসেস অলিভারকে নতুন বন্ধুটি বললেন, আপনি নিশ্চয়ই আমার নাম জানেন না, আমি মিসেস বার্টন কক্স।
মিসেস অলিভার হ্যাঁ বলে বিহ্বল দৃষ্টিতে ভাবতে লাগলেন যে, উনিই কি গল্প উপন্যাস লেখেন? তাঁর সম্পর্কে সত্যিই তিনি কিছু খেয়াল করতে পারছেন না, তবুও তার মনে হয় তার নাম তিনি শুনেছেন, একটা ক্ষীণ ভাবনা তার মনে এলো। রাজনীতির ওপর কোনো বই না ফিকসন-না কৌতুক? এমনকি অপরাধমূলক লেখাও নয়। কিংবা বুদ্ধিদীপ্তির সঙ্গে রাজনীতির গাঁটছাড়া? এবং সেটা অবশ্যই সহজ হতে পারে এই ভেবে স্বস্তি পেয়ে মিসেস অলিভার নিজের মনেই বললেন ওঁর সঙ্গে কথা বলা যায়। তারপর তিনি বললেন, কেমন মজার বলুন
মিসেস বার্টন কক্স বললেন, শুনে সত্যি খুব আশ্চর্য হবেন আমি যা বলতে যাচ্ছি। আমি আপনার বই পড়ে অনুভব করেছি যে, আপনি কত সহানুভূতিশীল এবং মানুষের স্বভাব কত সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন এবং আমার ধারণা আমি এমন একটা প্রশ্ন করতে যাচ্ছি তার উত্তর যদি কেউ না পারেন আপনি ঠিক পারবেন।
মিসেস অলিভার বললেন, আমি তা মনে করি না। সঙ্গে সঙ্গে ভাববার চেষ্টা করলেন তিনি যে অত্যন্ত অনিশ্চিত বোধ করছেন তা একটা ছোট্ট কথায় কীভাবে তাকে বোঝানো যায়।
মিসেস বার্টন কক্স তার কফিতে চিনির একটা ডেলা ফেলে সেটা এমনভাবে চিবুলেন ঠিক যেন মাংসাশী হাড় চিবুচ্ছেন, মিসেস অলিভার আনমনে ভাবলেন তার দাঁতগুলি সম্ভবত হাতির দাঁতের মতন, হাতির দাঁতের কর্মক্ষমতা বিরাট।
মিসেস বার্টন কক্স তখন বলছিলেন–এখন প্রথমেই আমি স্থির নিশ্চিত যে আমার অনুমান ঠিক এবং আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই আপনার একটি ধর্মকন্যা আছে কিনা এবং সেই ধর্মকন্যাটির নাম কি সিলিয়া র্যাভেন্সক্রফট?
কতকটা আনন্দের আতিশয্যে বিস্মিত হয়ে তিনি বলে উঠলেন, তার অনেক ভালো ভালো ধর্মকন্যা আছে এবং ধর্মপুত্র সেই ব্যাপারে। তাকে এখন স্বীকার করতেই হবে যে বার্ধক্যের ভার পড়ছে তার দেহমনে। ফলে সেই সময়ে তিনি সবাইকে মনে রাখতে পারতেন না। একজনের যা কর্তব্য হয়ে থাক তিনি তাই পালন করে গেছেন, আগের বছরগুলোতে খিস্টমাসের দিনে ধর্ম সন্তানদের জন্য খেলনা পাঠানো, তাদের ও তাদের অভিভাবকদের কাছে যাওয়া, ছেলে ও মেয়েদের স্কুল থেকে নিয়ে আসা এবং জীবনের সেই সেরা দিন একুশতম জন্মদিনে যা ধর্মমা-র অবশ্যই করা উচিত। তিনি বেশ জাঁকজমক সহকারেই পালন করে এসেছেন, তা ছাড়া তাদের বিবাহের সময় অনুরূপ উপহার, আর্থিক সাহায্য এবং আশীর্বাদ জানিয়ে এসেছেন। সেইসব ধর্মর্সন্তানরা যে যার কর্মস্থলে অনেক দূরে চলে গেছে এবং একটু একটু করে তারা তার জীবন থেকে সরে গেছে, যদি তাদের সামনে দেখতে পান আপনি নিশ্চয়ই খুব খুশি হবেন? কিন্তু আপনাকে ভাবতে হবে যে, শেষ কবে আপনি তাদের দেখেছিলেন এবং তারা কাদের কন্যা ছিল এবং আপনি তাদের ধর্মমা হওয়ার সূত্রটাই বা কী ছিল?