আমি জানি। কেউ কেউ আছে যারা সব ভুলে যায় কিন্তু আমি ভুলিনি একদম। তারা আলোচনা করছিল যে, ভদ্রমহিলা যেন কেমন অদ্ভুত ধরনের ছিলেন। যেমন পেরামবুলেটার থেকে একটা পিণ্ডকে উঠিয়ে নিয়ে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন এটা নাকি ঈর্ষা। আবার কেউ বলেছিল সেই পিণ্ডটিকে স্বর্গে পাঠাতে চেয়েছিলেন। অপেক্ষা করতে, চাননি।
আপনি কি লেডি র্যাভেন্সক্রফট-এর কথা বলছেন?
না, আমি তা বলতে চাইছি না। আমি বোনের কথা বলতে চাইছি।
কার বোনের কথা বলতে চাইছেন?
এখন আমি ঠিক জানি না। সে জেনারেলের বোন না লেডি র্যাভেন্সক্রফট-এর বোন, তারা বলেছিল মেয়েটি নাকি দীর্ঘদিন পাগলা গারদে ছিল, তখন তার বয়স এগারো কি বারো। তারপর সেখান থেকে ভালো হয়ে ফিরে এসে কোনো এক সৈনিককে বিয়ে করেছিল। এবং এখান থেকেই গণ্ডোগোলের সূত্রপাত। আবার তাকে নির্জন মানসিক চিকিৎসালয়ে পাঠানো হয়েছিল। আমার বিশ্বাস জেনারেল এবং তার স্ত্রী সেখানে গিয়ে তাকে দেখে আসত। ছেলেমেয়ের দেখাশুনা করার ভার অন্য কেউ নিয়েছিল। তারা বলেছিল শেষের দিকে নাকি সে ভালো হয়ে উঠেছিল। এবং স্বামীর কাছে থাকবার জন্য ফিরে আসে। তার অল্প কয়েকদিন বাদে সে মারা যায় বা ওই রকম কিছু একটা হবে। যে কারণেই হোক সে ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং স্বামীর ঘর ছেড়ে ভাই কিংবা বোনের কাছে চলে এসেছিল। যেখানেই সে থাকুক সে তার ছেলেমেয়েদের কাছে পেত। একদিন বিকেলে ছেলেটি তখন স্কুলে। সেই ছোট্ট মেয়েটি এবং আর একটি বাচ্চা মেয়ে এক সঙ্গে খেলা করছিল। অনেকদিন আগেকার কথা। সব খবর আজ আর মনে নেই। তবে শোনা গিয়েছিল সেটি আদৌ তার ছিল না, তারা ভেবেছিল আম্মা যেহেতু তাদের ভালোবাসত তাই সেটা আম্মার কাজ। সেই জন্য সে খুব ভেঙ্গে পড়ে এবং তাদের সেখান থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কারণ সেখানে তারা নিরাপদে ছিল না। অন্যেরা কিন্তু তা বিশ্বাস করত না। এমন কি তাদের ধারণা সেটা তাদের কেন্দ্র করেই ঘটেছিল। যাইহোক তার নাম আমি এখন আর মনে করতে পারছি না।
ঘটনাটা হল এইরকম।
জেনারেল বা লেডি র্যাভেন্সক্রফট-এর যেই হোক তার জীবনে কী ঘটনা ঘটেছিল জানেন?
আমার বিশ্বাস সেই একই জায়গায় সেটা হবে একেবারে শেষের দিকে কোনো চিকিৎসক তাকে সঙ্গে করে ইংলন্ডে ফিরে যায়। তবে আমার মনে হয় তার স্বামীর অনেক টাকা ছিল। হয়তো আবার সে সুস্থ হয়ে উঠবে এই আশায় কোনো এক জায়গায় তার দেখাশোনা ভালোই হত। আমি অন্তত বলতে পারি বহুদিন এই বিষয়ে আর ভাবিনি, আমি বলতে পারব না তারা এখন কোথায়, কিংবা অনেকদিন আগেই তারা–মিসেস অলিভার বললেন, এটা খুব দুঃখের কথা হয়তো আপনি খবরের কাগজে পড়ে থাকবেন
ইংল্যান্ডে তাদের একটা বাড়ি কেনার কথা এবং তারপর
হ্যাঁ হ্যাঁ খবরের কাগজে সে রকম একটা ঘটনা যেন পড়েছিলাম, র্যাভেন্সক্রফটের কথাটা এখন যেন ঠিক মনে করতে পারছি না। কখন এবং কেমন করে তারা পাহাড়ের ওপরে উঠে ছিল। তারপর তারা যেন–? কিছু একটা হবে। হা সেরকম কিছু একটা হবে বললেন মিসেস অলিভার।
তোমাকে দেখে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে, এখন এক কাপ চা না খাওয়ালেই নয়।
না, না আমি চা খাব না, মিসেস অলিভার বললেন।
আমার সাথে এখন রান্নাঘরে এসো। কারণ দিনের বেশি সময় ওখানেই কাটাই। আমি অতিথিদের এঘরেই আপ্যায়ন করে থাকি। কারণ হল আমার সংগ্রহ অতিথিদের দেখালে আমি মনে মনে খুব গর্ববোধ করি যেমন গর্ববোধ করি সব ছেলেমেয়েদের এবং অন্যদের সম্বন্ধে।
আমার ধারণা আপনি যে সব ছেলেমেয়েদের প্রতি নজর রাখতেন তাদের সঙ্গে আপনার জীবন বেশ ভালোভাবেই কেটেছিল। মিসেস অলিভার বললেন।
হ্যাঁ, তুমি খুব গল্প শুনতে ভালোবাসতে তাই তোমায় ছোটোবেলায় আমি বাঘের, বাঁদরের গল্প বলতাম, মিসেস অলিভার, সে তো অনেক দিন আগের কথা, সেসব গল্প আমার খুব মনে আছে।
এই গল্পের আলোচনা করতে করতে তার মন চলে গেল সেই ছয় কিংবা সাত বছরের শৈশবের দিনগুলিতে। তার মনে পড়ল তিনি বোতাম আঁটা জুতো পড়ে ইংল্যান্ডের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মিসেস ম্যাচামের কাছ থেকে একটার পর একটা গল্প শুনতেন ভারত এবং ইজিপ্ট সম্বন্ধে।
মিসেস অলিভার চারিদিক তাকিয়ে দেখলেন স্কুলের ছেলেমেয়েদের, শিশুদের এবং মাঝবয়সি লোকেদের ছবি আটকানো। সম্ভবত তারা তাদের আয়াকে হয়তো ভুলতে পারেনি। হঠাৎই মিসেস অলিভার চিৎকার করে রান্নাঘর পর্যন্ত গেলেন এবং তিনি যে জিনিসটা তার জন্য এনেছেন সেটা তার হাতে দিলেন।
জিনিসটা হাতে নিয়ে তিনি আনন্দে বলে উঠলেন, এটা তো টোফোল থাথামোর টয়ের টিন। এখন এ চা খুবই কম পাওয়া যায়। দেখছি তুমি কখনও কিছু ভোলো না। আরে যে ছেলে দুটো খেলতে আসত তাদের তোমার মনে আছে হয়তো, তারা তোমাকে কি বলে ডাকত জানো? একজন বলত লেডি হস্তি এবং অপর জন বলত লেডি হংসী। যে লেডি হস্তি বলত সে তোমার পিছনে বসত এবং তুমি মেঝের ওপর ঘুরে ঘুরে তাদের কাছে গিয়ে তাদের তোলার ভান করতে।
মিসেস অলিভার বললেন, দেখছি আপনি প্রায় কিছুই ভোলেননি?
মিসেস ম্যাচাম বললেন, তুমি হয়তো জানো একটা পুরন প্রবাদ হাতিরা কখনও ভোলে না।
.
কাজ করে চলেন মিসেস অলিভার
উইলিয়ামস এ্যান্ড বারনেট বলে একটা কেমিস্ট কাম কসমেটিকের দোকানে ঢুকলেন মিসেস অলিভার, নানাধরনের সেলস কাউন্টারের সামনে দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ একটা জায়গায় বেশ মোটাসোটা চেহারার একটা মেয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কিছু লিপস্টিকের খোঁজ করলেন। তার মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি অবাক হয়ে চিৎকার করে বললেন, তুমি মারলিন না?