মিসেস ম্যাচাম বললেন, আমি এখন একেবারে একা নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছি। আমার বোন গ্রেসি গত হেমন্তে মারা গেছে, তার ক্যান্সার হয়েছিল। অপারেশনও হয়েছিল কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে আমার। বোনকে তুমি চিনতে তো? আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি সত্যিই দুঃখিত, বললেন মিসেস অলিভার।
মিনিট দশেক বৃদ্ধা এক এক করে আত্মীয়স্বজনের মৃত্যুর আলোচনা করলেন এবং কোনো কোনো আত্মায় এখনও জীবিত রয়েছেন তা বলে আলোচনা শেষ করলেন।
তোমার শরীর কেমন? নিশ্চয়ই ভালো। তোমার স্বামী-ওহো এখন মনে পড়ছে কয়েক বছর আগে সে মারা গেছে তাই না? তা লিটল স্যাটার্ন মাইনার কেন এসেছ, আমি কি জানতে পারি?
মিসেস অলিভার বললেন, এ-পাড়ার কাছেই ত্রাসে ছিলাম। ঠিকানা লেখা খাতায় আপনার ঠিকানা লেখা ছিল। তাই মনে করলাম আপনার বাড়িতে একবার ঘুরে যাই। আপনি কেমন আছেন?
আহ। সম্ভবত পুরোনো দিনের কথা বলতে এবং যখন তুমি তা করো খুব ভালো লাগে তাই না?
মিসেস অলিভার হ্যাঁ বললেন এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন–যে কারণে তিনি এখানে এসেছেন সেই প্রসঙ্গের একটা ইঙ্গিত মিসেস ম্যাচামের কথায় পাওয়া গেল। তিনি বললেন, না জানি কতগুলো ফটোই আপনি পেয়েছেন।
পুরোনো দিনের একটা বাড়ির কথা মনে পড়ছে। সেই বাড়িতে আমি ছিলাম। বাড়িটার নাম সূর্যাস্ত নীড়। এক বছর তিন মাস সেখানে ছিলাম। কী জঘন্য ব্যবস্থা। আমি আমার নিজস্ব কোনো জিনিস ব্যবহার করতে পারব না। সব কিছুই হোমের। আমি বলছি না সেগুলো ভালো নয় কিন্তু আমি আমার নিজের জিনিসই ব্যবহার করতে পছন্দ করি। যেমন আমার ফটো, আমার ফার্নিচার। তারপর সেখানে একটি নারী এলো কোনো একটি কাউন্সিল থেকে বা সোসাইটি থেকে কিংবা অন্য কোথা থেকে। আমাকে বলল তাদের একটা ভালো হোম আছে সেখানে আমি আমার পছন্দমতো যে কোনো জিনিস ব্যবহার করতে পারব। প্রতিদিন সেখানকার কর্তৃপক্ষ থেকে তোক এসে খোঁজ নিয়ে যায় আমি ভালো আছি কিনা। সত্যি খুব আরামে আছি। কারণ এখানে আমি আমার সব কিছুই কাছে পেয়েছি।
চারিদিক তাকিয়ে দেখলেন মিসেস অলিভার এবং বললেন, সব জায়গা থেকেই যা পাওয়া যায়।
হ্যাঁ ওই টেবিলটা। ওই ব্রাসটা ওই দুটো ক্যাপ্টেন উইলসন সিঙ্গাপুর থেকে আমাকে দিয়েছিলেন। বেনারস ব্রাসটা খুব সুন্দর না। ছাইদানির ওপর ওই জিনিসটা, ওটা একটা মুগুর বা গদা, পাথরের তৈরি ওটা ইজিপ্টের জিনিস। ওরা ওটা দামি পাথর বলে থাকে, এর রঙ উজ্জ্বল নীল।
মিসেস অলিভার বললেন, লাজিস লাজুলি।
তা ঠিক। আজও ঠিক ওটা একই রকম আছে। প্রত্নতাত্ত্বিকের একটি দল মাটি খুঁড়ে পায় এবং ওটা আমাকে পাঠিয়ে দেয়, মিসেস অলিভার বললেন, আপনার অতীতের মতো সব জিনিস সবই কিন্তু সুন্দর।
হ্যাঁ এরাই সব আমার ছেলেমেয়ে। এদের মধ্যে কাউকে জন্মের প্রথম মাস থেকে পেয়েছিলাম। কয়েকজনকে বয়স্কা অবস্থায় আবার আমি যখন ভারতবর্ষে গিয়েছিলাম তখন কয়েকজনকে পাই। ওই মেয়েটি মিস মোওয়া। ও খুব সুন্দর ছিল। ওর দু-দুবার স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়। প্রথম বিয়ের পর স্বামীর সাথে এ্যাডজাস্ট করতে অসুবিধা হচ্ছিল তাই বিচ্ছেদ হয়। দ্বিতীয়বার বিয়ে করে, একজন পপ গায়ককে। সেই বিয়েও ওর বেশি দিন টিকল না। আবার কালিফোর্নিয়ায় বিয়ে করেছিল। বছর দু-তিন আগে মেয়েটি মারা যায় মাত্র বাষট্টি বছর বয়সে।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আপনি ঘুরে বেরিয়েছেন যেমন ভারত, হংকং, ইজিপ্ট এবং দক্ষিণ আমেরিকা। তাই না? মিসেস অলিভার বললেন।
হ্যাঁ বলতে পারো বিদেশ ভ্রমণে আমার ভালো অভিজ্ঞতা আছে।
মিসেস অলিভার বললেন, আমি যখন মালয়েতে ছিলাম, তখন আপনি না একজন সৈনিক পরিবারের সঙ্গে ছিলেন? নামটা ঠিক মনে করতে পারছি না জেনারেল এবং লেডি র্যাভেন্সক্রফট তাই কি?
না, না, নামটা তুমি ভুল বলছ। বারনেবিদের সঙ্গে যখন ছিলাম তুমি তখনকার কথা ভাবছ। তুমি তখন ট্যুরে ছিলে এবং ফিরে এসে বারনেবিদের সঙ্গে ছিলে। তুমি ওই মহিলার পুরোনো বন্ধু ছিলে। এবং তার স্বামী ছিলেন বিচারপতি।
ও হ্যাঁ হ্যাঁ। নামগুলো কেমন যেন গোলমাল হয়ে যায়। মনে রাখা খুব কষ্টকর। বললেন মিসেস অলিভার।
ম্যাচাম বললেন, ওঁদের দুটি ছেলেমেয়ে ছিল। ছেলেটি পড়তে যায় হ্যাঁরোয়ে এবং মেয়েটি যায় রোডিনে। সেইজন্য আমি অন্য আর এক পরিবারের কাছে চলে গিয়েছিলাম। ভালো কথা তুমি যেন কাদের কথা বলছিলে? র্যাভেন্সক্রফটদের কথা? হ্যাঁ তাদের কথা খুব ভালো মনে আছে। এখন তারা সেখানে বাস করছেন জায়গাটার নাম ঠিক মনে আসছে না। আমাদের কাছ থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। ওই পরিবারটি প্রত্যেকের খুব পরিচিত ছিল। যদিও অনেক দিন আগের কথা তবুও আমি সব মনে করতে পারি। বারনেবিদের ছেলেমেয়েরা যখন স্কুলে যেত তখন মিসেস বারনেবিদের দেখাশুনা করার জন্য সেখানে থাকতাম। আর হ্যাঁ আমি যখন ওখানে ছিলাম তখনই সেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা ঘটেছিল, আমি র্যাভেন্সক্রফটদের কথা বলতে চাইছি। সে কথা আমি ভুলতেই পারব না এবং সে ব্যাপারে আমি নিজেকে জড়াতেও চাই না।
মিসেস অলিভার বললেন, আমারও তো একই ধারণা। আপনি ইংলন্ডে ফিরে যাওয়ার পর বেশ অনেক বছর কেটে গেছে। তারা চমৎকার দম্পতি ছিলেন এবং তাদের কাছে এটা একটা বিরাট আঘাত ছিল। সত্যি এখন আর আমার কিছুই মনে নেই। বললেন মিসেস অলিভার।