মিসেস অলিভার বললেন, কী ঘটতে পারে আমি তা জানি না। কারণ সমস্ত অপরাধ কাহিনিগুলোতে যা লিখি তা সবই আমার আবিষ্কার, তার মানে আমার কাহিনিতে আমি যা ঘটাতে চেয়েছি ঠিক সেটাই ঘটেছে। আর এসব ঘটনাগুলো ঠিক সে ধরনের নয় যা আসলে ঘটেছিল বা ঘটতে পারে। আপনি কি এই ব্যাপার চিন্তা করেন সেটা জানতে খুব আগ্রহ হচ্ছে। কারণ লোকগুলোকে আপনি ভালো চেনেন জুলিয়া। এবং আমি আরও মনে করি যে, মিসেস র্যাভেন্সক্রফট কিংবা জেনারেল আপনাকে একদিন নিশ্চয়ই কিছু বলে থাকবে।
তুমি যখন বললেই একটু অপেক্ষা করো। আমার মনে হচ্ছে অতীতের কিছু কিছু মনে আসছে।
মিসেস কারস্টেয়ার্স চেয়ারে হেলান দিয়ে দ্বিধাগ্রস্তভাবে মাথা নাড়লেন। চোখ দুটি তার অর্ধনিমীলিত যেন তার মনে এখনও সন্দেহ আছে। উলটোদিকে মিসেস অলিভার নীরবে গভীর আগ্রহ নিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। ঠিক যেমন করে চায়ের কেটলিতে জল দিয়ে প্রত্যেক নারী তাকিয়ে থাকে কখন জল ফুটবে এবং কেটলির ঢাকা খুলে যাবে।
হ্যাঁ, আমার মনে হচ্ছে একবার মিসেস র্যাভেন্সক্র কিছু যেন একটা বলেছিল এবং তখন আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেটা দিয়ে কী সে বোঝাতে চেয়েছিল নতুন করে জীবন শুরু করার ব্যাপারে বোধহয়। আমার ধারণা সেন্ট টেরেসার সম্পর্কে এ্যাভিলার সেন্ট টেরেসা…
মিসেস অলিভারকে একটু হতভম্বের মতো দেখাল কিন্তু এখানে এ্যাভিলার সেন্ট টেরেসার কথা আসে কী করে।
আমার মনে হয় সে নিশ্চয়ই তার জীবনী পড়ছিল তখন। সে বলেছিল চমৎকারভাবে মহিলারা তাদের নতুন জীবন পেয়ে যায়। ঠিক এই রকম ভাষা সে ব্যবহার করেনি। তুমি কি জানো মেয়েদের বয়স যখন চল্লিশ পঞ্চাশ হয় হঠাৎ তারা নতুন জীবন শুরু করতে চায়। এ্যাভিলার টেরেসা তাই করেছিলেন। তারপর তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন সমস্ত কনভেন্ট গুলোর সংস্কার করতে। এবং তারপর তিনি একজন মহান সেন্ট হয়ে যান।
কিন্তু সেটা একই ধরনের ব্যাপার বলে তো মনে হচ্ছে না।
সেটা নয়, বললেন কারস্টেয়ার্স। কিন্তু জানো মেয়েরা ভীষণ বোকার মতো কথা বলে যখন তারা জীবনের মানে খুঁজে পায়, তখন তারা প্রেম সম্পর্কে উল্লেখ করে থাকে।
.
ছেলেবেলা পিছু ডাকে
রাস্তার ধারে একটা অতি জীর্ণ কটেজ। মিসেস অলিভার চোখে একরাশ সন্দেহ নিয়ে সামনের দরজার দিকে তাকালেন। এবং একটু এগিয়ে থামলেন তিনি। ঠিকানা লেখা ছোট্ট খাতাটা খুললেন এবং মিলিয়ে দেখলেন ঠিকানাটা, কারণ যেখানে আসার কথা ছিল সেই জায়গায় ঠিক এসেছেন কিনা। ইলেকট্রিক বেল বাজালেন, সাড়া না পেয়ে দরজায় আস্তে ধাক্কা মারলেন। এবং তাতেও কোনো যখন কাজ হল না আবার জোরে নক্ করলেন। এবার ভেতর থেকে শব্দ পাওয়া গেল। তারপরেই এলোমেলো পায়ের শব্দের সঙ্গে হাঁপানির টানের শব্দ এবং কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খোলার শব্দ তার কানে ভেসে ভেসে এলো৷ আর এই শব্দের সঙ্গে লেটার-বক্সে কিছু অস্পষ্ট শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া গেল।
দরজার ক্যাচক্যাচ শব্দ এবং কেমন একটা ভুতুড়ে শব্দ তুলে দরজাটা খুলে গেল। দরজা খুলে তখন দাঁড়িয়েছিলেন অতি বৃদ্ধ এক মহিলা।
মুখে বলিরেখা, বাতে পঙ্গু, ঝুঁকে পড়া কাঁধ, ভাসাভাসা চোখে তিনি তাকালেন অতিথির দিকে। তার মুখটা দেখে মনে হল গোমড়া। তাকে স্বাগত জানাবার কোনো লক্ষণই দেখা গেল না। অবশ্য তার চোখে মুখে ভয়ের কোনো চিহ্ন ছিল না। তার বয়স সত্তর বা আশি হতে পারে। কিন্তু এই বয়সেও যে তিনি তার বাড়ির রক্ষকের কাজ করছেন বাহবা দিতে হয়।
কিসের জন্য তুমি এসেছ? একটু থামলেন এবং বললেন, তুমি মিস অ্যারিয়াডন না? বাঃ! চমৎকারভাবে আপনি দেখছি আমাকে মনে রেখেছেন। আপনি কেমন আছেন মিসেস ম্যাচাম? মিস অ্যারিয়াডন! দাঁড়াও, আমাকে একটু ভাবার সুযোগ দাও।
অনেক আগে উনি আমাকে মিস অ্যারিয়াডন বলে ডাকতেন, ভাবলেন মিসেস অলিভার। তবে বয়সের ভারে গলার স্বর একটু ভেঙ্গে গেছে। তাহলেও বেশ ভালোই চেনা যায়।
আরে ভেতরে এসো। তোমাকে বেশ ভালোই দেখাচ্ছে। কতকাল আগে যেন তোমাকে দেখেছি। তা প্রায় কম করেও পনেরো বছর হবে না? বৃদ্ধা বললেন, পনেরো বছরেরও বেশি হবে তা শুধরে দিতে চাইলেন না মিসেস অলিভার। ভেতরে ঢুকে মিসেস ম্যাচামের সঙ্গে করমর্দন করলেন। বয়সের ভারে অসম্ভব কাঁপছিল তার হাতটা। যাইহোক কোনো রকমে দরজা বন্ধ করে এলোমেলো পায়ে হেঁটে গিয়ে একটা ছোট্ট ঘরে ঢুকলেন। অবশ্যই ঘরটা তাঁর পছন্দমতো অথবা অপছন্দ অতিথিদের সম্বর্ধনা জানানোর জন্য সেইভাবেই সাজানো এবং এই ঘরের মধ্যে অসংখ্য ফটো, তার মধ্যে কিছু শিশুর আর কিছু প্রাপ্তবয়স্কদের। কিছু কিছু ছবি চামড়ার ফ্রেমে আঁটা। রুপোর ফ্রেমে একটা যুবতীর ছবি মাথায় তার পাখির পালক। সেই ছবির মধ্যে দুজন নৌ বাহিনীর অফিসার, দুজন সামরিক অফিসার আর আছে কিছু নগ্ন শিশুর ছবি এবং ঘরের মধ্যে আসবাব বলতে একটা সোফা, দুটো চেয়ার। একটা চেয়ারে বসলেন মিসেস অলিভার আর সোফার ওপর নিজে বসলেন। বসতে তার কষ্ট হচ্ছিল বলে পিছনে একটা কুসান ঠেসান দিলেন।
তোমাকে দেখবার খুব ইচ্ছা ছিল। আচ্ছা তুমি কি তোমার সুন্দর লেখা এখনও লিখছ তো?
মিসেস অলিভার হ্যাঁ বললেন বটে তবে তার মনে সন্দেহ হল যে, একটা গোয়েন্দা গল্প, বা অপরাধ কাহিনি এবং অপরাধীদের ব্যবহার কী করে সুন্দর ও চমৎকার আখ্যা পেতে পারে।