হ্যাঁ, আপনি তাদের ভালোভাবে চিনতেন?
ও হ্যাঁ, সত্যি মানুষকে কেউ ভুলতে পারে না। আমার ধারণা ওভারক্লিফের কাছে ওরা পাঁচ কী ছয় বছর ছিল।
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন আমার মনে আছে, বললেন মিসেস অলিভার। তবে মিসেস র্যাভেন্সক্রফট-এর খ্রিস্টান যে নামটা ছিল সেটা আমি ভুলে গেছি। কি যেন নাম ছিল?
আমার মনে হয়, মার্গারেট। তবে সবাই কিন্তু তাকে মলি বলেই ডাকত। হ্যাঁ ঠিকই মার্গারেট। তোমার কি মনে আছে সে পরচুলো ব্যবহার করত?
মিসেস অলিভার বললেন, স্পষ্ট হয়তো মনে নেই তবে মনে হয় পরচুলা ব্যবহার করতেন। সে আমাকে বলেছিল আপনি যখন বিদেশ ভ্রমণে যাবেন পরচুলা খুব কাজে লাগে। তার চার রকমের পরচুলা ছিল। একটা সন্ধ্যাবেলা, একটা ভ্রমণের আর একটা খুব অদ্ভুত জানেনা, মাথায় নাকি টুপি পরলেও পরচুলা অবিন্যস্ত হয় না।
মিসেস অলিভার বললেন, ঠিক আপনার মতন আমিও তাদের জানতাম। তারা যখন গুলিবিদ্ধ হন আমি তখন ছিলাম আমেরিকায় লেকচার টুরে। তাই এই ব্যাপারে আমি বিস্তারিত কিছু জানি না।
জুলিয়া কারস্টেয়ার্স বললেন, হ্যাঁ বটে এটা বিরাট একটা রহস্য। তাদের মৃত্যু রহস্য কিন্তু কেউ জানে না। তাদের সেই মৃত্যুকে ঘিরে অনেক মুখরোচক কাহিনি রটেছিল লোকের মুখে মুখে।
আমার ধারণা পুলিশি তদন্ত নিশ্চয়ই হয়েছিল। এবং তখন সেখানকার উপস্থিত লোকেরা কি বলেছিল মনে আছে আপনার?
হ্যাঁ নিশ্চয়ই মনে আছে। এবং সেই অস্বাভাবিক জোড়া আত্মহত্যার ব্যাপারে পুলিশি তদন্ত হয়েছিল বৈকি। আর সেটা ছিল একটা অমীমাংসিত কেস। মৃত্যু হয়েছিল ঠিকই রিভলবারের গুলিতে কিন্তু কী সেই ঘটনা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি তারা। হতে পারে জেনারেল র্যাভেন্সক্রফট প্রথমে তার স্ত্রীকে গুলি করেন তারপর নিজেকে। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বিচার করলে লেডি র্যাভেন্সক্রফট তার স্বামীকে গুলি করার পর নিজেকে নিজেই গুলিবিদ্ধ করেছিলেন এ সম্ভাবনাটাকেও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমার মনে হয় যে এটা একটা আত্মহত্যার চুক্তি। আবার জোর দিয়েও কিন্তু বলা যায় না যে কি করেই বা এই রকম একটা সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছিল।
তার মানে আপনার কি মনে হয় এর মধ্যে অপরাধের কোনো প্রশ্ন নেই?
না, পুলিসি রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছিল এর মধ্যে কোনো অন্যায় কিছু ছিল না। তার মানে আমি বলতে চাই তাদের কাছে অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তি এলে তার পায়ের অথবা হাতের ছাপ বা অন্য কোনো চিহ্ন অবশ্যই থাকত। সেখানে সেরকম কিছুই ছিল না। প্রত্যেক দিনের অভ্যাসমতো চা খেয়ে তারা বেড়োতে বেড়িয়েছিলেন, তবে নৈশভোজের পর আর তারা ফিরে আসেনি। তখন পুরুষ পরিচারক এবং বাগানের মালি, তাদের খোঁজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হল এবং একটু দূরে বাড়ির কাছেই মৃত অবস্থায় তাদের দেখতে পায় এবং রিভলবারটা মৃতদেহের পাশেই পড়েছিল।
রিভলবারটা কার ছিল? জেনারেলের তাই না? হ্যাঁ বাড়িতে তার দুটো রিভলবার ছিল। আজকাল যে রকম দেশের অবস্থা মানে খুন খাবাপি হচ্ছে সেই জন্যই নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র রেখে দেয় তারা। তারা মারা যাবার সময় দ্বিতীয় রিভলবারটা বাড়ির ড্রয়ারেই ছিল, তাই মনে করে নেওয়া যায় রিভলবার সঙ্গে নিয়েই জেনারেল বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল, অবশ্য আমার মনে হয় না মিসেস র্যাভেন্সক্রক্ট রিভলবার সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলেন।
না, না, সেটা অত সহজ ব্যাপার নয়।
কিন্তু সাক্ষ্য প্রমাণের মধ্যে কোথাও জানা যায়নি তারা অসুখী ছিল কিনা বা তাদের দু-জনের মধ্যে কোনো ঝগড়া বিবাদ হয়েছিল কিনা এবং কেনই বা তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিল তারও কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে কত ধরনের দুঃখবোধ থাকতে পারে কেউ তা জানতে পারে না। মিসেস অলিভার বললেন, না, না, কেউ তা জানতে পারে না। কী যে ভীষণ সত্য কথা সেটা জুলিয়া, আপনার কি নিজস্ব কোনো ধারণা আছে?
ভালো কথা, প্রিয়, জানো তো সব সময় সবাই এসব ক্ষেত্রে কম বেশি অবাক হয়ে থাকে?
হ্যাঁ ঠিকই, মিসেস অলিভার বললেন, প্রত্যেকে সব সময় অবাক হয়ে থাকে।
আমার অনুমান নয় শোনা কথা যে–জেনারেলের একটা কঠিন অসুখ ছিল। আমার ধারণা তাকে হয়তো বলা হয়েছিল সে ক্যান্সারে মারা যাবে কিন্তু মেডিকেল রিপোর্টে সেরকম কোনো উল্লেখ নেই। তার স্বাস্থ্য খুব ভালো ছিল। আমি বলতে চাই তার করোনারি ছিল। ওটা রাজমুকুটের মতো শোনায়, রাজকীয় অসুখই বটে। জেনারেলের সেই অসুখটা হয়েছিল তবে ভালো হয়ে যায়। আর মিসেস র্যাভেল ট স্নায়ুর রোগে ভুগত। মিসেস অলিভার বললেন, হ্যাঁ, আমার মনে আছে, হঠাৎ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা মৃত্যুর সময় কি তিনি পরচুলা পড়েছিলেন?
ওহো সত্যি আমি মনে করতে পারছি না, তবে আমি জানি ও সব সময়ে পরচুলা পড়ে থাকত। আমার ধারণা সেগুলোর মধ্যে একটা-মিসেস অলিভার বললেন, শুনে আমি সত্যিই অবাক হচ্ছি। আমার মনে হয় যে ভাবেই হোক আপনি যদি নিজেকে গুলি করতে যান এবং আপনার স্বামীকেও গুলি করতে যান তখন কি আপনি পরচুলা পড়ে যাবেন?
জুলিয়া, আপনি কি ভাবেন?
দেখো তোমাকে তো আগেই বলেছি প্রত্যেকেই অবাক হয়। আর এ-ব্যাপারে একটা গুজব শোনা যায়–জেনারেল না তার স্ত্রীর সম্পর্কে?