ও ভালো কথা প্রত্যেককেই কোনো না কোনোখান থেকে শুরু করতে হয়। সবদিক থেকে বিবেচনা করে আমার মনে হয় জুলিয়াকে দিয়েই শুরু করব। ও এখনও দৌড়ঝাঁপ ছাড়েনি। সব সময়েতেই ওর একটা না একটা ধারণা মনে আসবেই। আর দেশের সেই অংশটার ব্যাপারে ওর জানা আছে কারণ ওর কাছাকাছি জায়গাতেই ও বাস করে। সুতরাং আমি জুলিয়াকে দিয়েই শুরু করব, মিসেস অলিভার বলল। মিস লিভিংস্টোন চারটে চিঠি তার সামনে দিয়ে বললেন, এই চারটে চিঠিতে আপনাকে সই করতে হবে।
এখন আমি এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। সত্যি সত্যিই এক মিনিটও আমি বাজে খরচ করতে পারব না, বললেন মিসেস অলিভার। কারণ তাকে এক্ষুনি হ্যাঁম্পটনগের্টে যেতে হবে আর সেই জায়গাটা এখান থেকে অনেক দূর।
অনারেবল জুলিয়া কারস্টেয়ার্স তার আর্মচেয়ার থেকে উঠতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। ভালো করে নড়তে চড়তে পারেন না। চোখে ভালো দেখতে পান কিন্তু কানে একটু কম শোনেন। বয়স সত্তরেরও বেশি।হোম ফর দি প্রিভিলেজের সদস্য সূত্রে একটা এ্যাপার্টমেন্টে দু-জনে থাকেন। কানে একটু কম শোনেন বলে প্রথমে মিসেস অলিভারের নামটা শুনতে পারেননি। মিসেস অলিভার? কিন্তু ওই নামের কোনো মহিলাকে তো আমি চিনি না। হাঁটুর ব্যথার জন্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে এলেন সামনে এবং পিটপিট্ করে তাকালেন সামনের দিকে।
আমার ধারণা আপনি আমাকে চিনতে পারবেন না হয়তো কারণ অনেক অনেক বছর আগে আমরা এক সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম।
ঠিক বয়স্ক লোকেরা যেমন গলার স্বর শুনে বুঝতে পারেন, মিসেস কারস্টেয়ার্স সে রকম কণ্ঠস্বর শুনে মিসেস অলিভারকে চিনতে পারলেন। আনন্দে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলেন, কেন চিনতে পারব না। তুমিই তো আমার প্রিয় অ্যারিয়াডন না! উফ তোমাকে দেখে আমার কী আনন্দ লাগছে না!
দু-জনের মধ্যে কুশল বিনিময় হল।
মিসেস অলিভার ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন এবং বললেন, আমি এখানেই আছি। একজনের সাথে এখানে দেখা করতে এসেছিলাম। আর গতকাল রাত্রে খাতার পাতা ওলটাতে গিয়ে আপনার ঠিকানা দেখলাম। যেখানে গিয়েছিলাম তার কাছেই দেখলাম আপনার এ্যাপার্টমেন্ট, তাই চলে এলাম। এই জায়গাটা খুব আনন্দদায়ক তাই না? ঘরের চারিদিক তিনি তাকিয়ে দেখলেন।
খুব একটা খারাপ জায়গা নয় জানো, যে কেউ তার ফার্নিচার, আসবাবপত্র এখানে নিয়ে আসতে পারে। মিসেস কারস্টেয়ার্স বললেন, সব চেয়ে সুবিধা হল কাছেই রেস্তোরাঁ সেখান থেকে তুমি তোমার খাবার সংগ্রহ করতে পারো। তোমাকে দেখার পর বেশ ভালো লাগছে। আরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা হয়, বসো। এই সেইদিন সাহিত্যের ভোজসভায় তোফা দেওয়ার খবর পড়লাম কাগজে, আর আজ সেই কি না সশরীরে হাজির হয়েছে। কি অদ্ভুত ঘটনা বলো তো? দারুণ বিস্ময়কর ঘটনা নয় কি? তুমি কি বলে?
চেয়ারে মিসেস অলিভার বসতে বসতে বললেন, জানি, সব জিনিই এরকম হয়ে থাকে, হয় না?
তুমি কি এখনও লণ্ডনেই আছ?
মিসেস অলিভার বললেন, হ্যাঁ। তিনি আপন মনে ছোটবেলাকার স্মৃতির পাতা ওলটাতে থাকেন। তারপর তিনি মিসেস কারস্টেয়ার্সের মেয়ে এবং দুটি নাতি-নাতনির খবর জিজ্ঞেস করলেন। অপর মেয়েটির খবর নিয়ে তিনি জানতে পারলেন সে এখন নিউজিল্যান্ডে থাকে তবে সেখানে মেয়েটি ঠিক কি করছে তা তিনি জানেন না। বোধহয় সোস্যাল রিসার্চের কাজ হবে। তিনি চেয়ারের হাতলে লাগানো ইলেকট্রিক বেলের সুইচ টিপে এম্মাকে চা আনার জন্য বললেন। মিসেস অলিভার বললেন, ব্যস্ত হবার দরকার নেই। কিন্তু জুলিয়া, কারস্টেয়ার্স জোর দিয়ে বলে উঠলেন, অবশ্যই অ্যারিয়াডনকে চা খাওয়াতেই হবে।
দু-জনে পুরানো বন্ধু। চেয়ারে হেলান দিয়ে ভালো করে বসে গল্প করলেন।
বেশ কয়েক বছর আগে তোমাকে শেষ দেখে ছিলাম, মিসেস কারস্টেয়ার্স বললেন। মিসেস অলিভার বললেন, আমার মনে হয় লেঞ্জয়েলিন্স-এর বিয়ের সময়! হা সেই সময়েতেই হবে। কারণ ময়রাকে সহচরী সাজে কী যে ভয়ঙ্কর লাগছিল দেখতে। আর কী যে ভয়ঙ্কর তাদের পোশাক।
আমি জানি, ওদের ওই পোশাকে মানায় না।
আমাদের সময়কার বিয়ের পোশাকের তুলনায় এখনকার বিয়ের পোশাক মোটেই ভালো নয়। আমার অন্তত তাই মনে হয়, বর এবং কনের কি বিশ্রী সব পোশাক।
অ্যারিয়াডনকে বললেন, তুমি কি চিন্তা করতে পারো চার্চের হালত কেমন? কিন্তু আমি যদি যাজক হতাম দেখতে ঠিক আমি তাদের বিয়ে দিতে অস্বীকার করতাম।
চা খেতে খেতে মিসেস অলিভার বললেন, আগের দিন আমার ধর্মকন্যা সিলিয়া র্যাভেন্সক্রক্টকে দেখলাম। আচ্ছা র্যাভেন্সক্রফটদের কি মনে আছে আপনার। যদিও অবশ্য অনেক অনেক বছর আগের ঘটনা।
র্যাভেন্সক্রফটদের এক মিনিট দাঁড়াও, হা হা, জোড়া আত্মহত্যা, সেই ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি তাই না? তাদের বাড়ির কাছেই পাহাড়ের ওপর। তারা তাই মনে করেছিল না?
মিসেস অলিভার বললেন, আপনাকে তারিফ করি আপনার অসাধারণ স্মৃতিশক্তির জন্য।
সব সময়েই আমার এইরকম কিন্তু এক এক সময়ে নামগুলো ঠিক খেয়াল করতে পারি না। ঘটনাটা ছিল বড়ই মর্মান্তিক তাই না? অবশ্যই মর্মান্তিক।
আমার এক ভাইপো মালয়েতে তাদের ভালো করে চিনত। রডিফ্রস্টারকে তুমি চেনো তো। র্যাভেন্সক্রফট-এর কর্মজীবন ছিল খুব উঁচুমানের, প্রতিভাবান পুরুষ ছিল। তবে অবসর নেওয়ার পর কানে একটু কম শুনতেন। স্বাভাবিক কথাবার্তা খুব একটা ভালো শুনতে পেত না সে।