হ্যাঁ তিনিই, পোয়ারা বললেন।
আমি জানি তিনি অপরাধ কাহিনি লেখেন।
অপরাধ সম্পর্কে তার কি ভালো বিশেষ জ্ঞান আছে? আমি জানি না তিনি সেইসব কাহিনির ধারণা বা প্লট কোথা থেকে পান?
পোয়ারো বললেন, আমার ধারণা সবই তার মাথা থেকে আসে। এবং ঘটনাগুলো
সে তো আরও কঠিন ব্যাপার, একটু অল্প সময়ের জন্য তিনি চুপ করে থাকলেন।
আপনি কি কিছু বিশেষ চিন্তা করছেন পোয়ারো, একটা বিশেষ কিছু?
হ্যা। একটা ঘটনা সম্পর্কে তার মনে সুন্দর একটার ধারণার জন্ম হয়েছিল। অনেকটা ঠিক উল্যে, লম্বা হাতওয়ালা জামার প্রয়োজন মেটানোর মতন। সেই ধারণাটা তিনি তাঁর মাথা থেক গল্পের আকারে বার করেন। আমি তাকে ফোনে কিছু কথা জিজ্ঞেস করি। এবং তার একটা গল্প নষ্ট করে দিই।
কৌতূহলী হয়ে উঠে বললেন স্পেন্স। বলুন বলুন তারপর! ঠিক যেন গরমের দিনে মাখনের ওপর সুগন্ধি পাতা ভাসার মতন। শার্লক হোমসকে সেই কুকুরটা আর রাত্রে কোনো কিছুই করত না জানেন তাদের?
ওদের কি কুকুর ছিল? জিজ্ঞেস করলেন পোয়ারো, আপনি কি বলতে চাইছেন মাপ করবেন একবার বলুন তো?
আমি বলতে চাইছি ওঁদের কি কুকুর ছিল? র্যাভেন্সক্রফটরা যেদিন গুলিবিদ্ধ হন সেইদিন বেড়োনোর সময় তারা কি কুকুর নিয়ে গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, তাদের একটা কুকুর ছিল। গ্যারোওয়ে বললেন, আমার ধারণা যতদিন তারা বেড়োতে যেতেন ততদিনই কুকুর তাদের সঙ্গে থাকত। স্পেন্স বললেন, মিসেস অলিভারের কাহিনি যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে দেখতে হবে মৃতদেহ দুটি ঘিরে তাঁদের সেই কুকুর চিৎকার করেছিল কিনা, কিন্তু মনে হয় এক্ষেত্রে তা হয়নি।
মাথা নেড়ে সায় দিলেন গ্যারোওয়ে।
পোয়ারো বললেন, আমি কিন্তু খুব অবাক হচ্ছি সেই কুকুরটা কোথায় গেল?
এই কথার উত্তরে গ্যারোওয়ে বললেন, চোদ্দ বছর আগের ঘটনা তো আমার মনে হয় কারোর বাগানে তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। তাহলে সেখানে গিয়ে কুকুরটাকে আমরা কিছু জিজ্ঞেস করতে পারব না। খুব চিন্তিত হয়ে তিনি আরও বললেন, এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার, বাড়িতে সেদিন কি ঘটেছিল মানে সেই অপরাধের ঘটনা জানতে পারে। গ্যারোওয়ে বললেন, একটা তালিকা এনেছি। যদি প্রয়োজন মনে করেন দেখতে পারেন। একজন বয়স্ক রাধুনি মিসেস হুইটেকার সেদিন বাড়িতে ছিলেন না। সুতরাং তার থেকে কিছু আমরা জানতে পারব না। একজন গভরনেস থাকতেন র্যাভেন্সক্রফটের ছেলেমেয়েদের দেখাশুনা করার জন্য পরে চলে যান। কিন্তু লেডি র্যাভেন্সক্রফট হাসপাতালে ছিলেন স্নায়ু যন্ত্রের দুর্বলতার জন্য এবং হাসপাতাল থেকে আসার পর গভরনেস ফিরে এসেছিলেন লেডি র্যাভেন্সটকে দেখাশুনা করার জন্য। আর একজন মালিও সেখানে ছিল।
কিন্তু একজন আগন্তুক নিশ্চয়ই বাইরের থেকে এসে থাকবেন। হয়তো অতীতের কোনো আগন্তুক। আচ্ছা সুপারিনটেন্ট গ্যারোওয়ে এটাই আপনার ধারণা? ঠিক অতটা ধারণা নয়, তবে একটা স্রেফ একটা ব্যাখ্যা বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। চুপ করে রইলেন পোয়ারো কারণ তাঁকে যখন অতীতে ফিরে যেতে বলা হয়েছিল ঠিক সেই সময়টার কথাই তিনি ভাবছিলেন এখন। সেই অতীতে থেকে পাঁচটা লোককে তিনি পর্যালোচনা করেছিলেন যা এখন তাকে ছেলে ভোলোনো ছড়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল ফাইভ লিট পিগ। এবং সেটা খুব উৎসাহব্যঞ্জক ছিল আর একেবারে শেষ পুরস্কার পাওয়ার মতন কারণ সত্যকে তিনি খুঁজে পেয়েছেন।
.
পুরোনো বন্ধু মনে রাখে
পরের দিন সকালে বাড়ি ফিরলেন মিসেস অলিভার এবং দেখলেন তার জন্য অপেক্ষা করে আছে মিস লিভিংস্টোন।
মিসেস অলিভার, আপনার দুটো ফোন এসেছিল।
হ্যাঁ, কোথা থেকে বলো?
প্রথম ফোন এসেছিল ক্রিস্টোন এ্যান্ড স্মিথ থেকে। এবং তারা জানতে চাইছিল লাইম-গ্রীণ ব্রোকেড বা পেল ব্ল কোনটা আপনি পছন্দ করেছিলেন?
এখনও পর্যন্ত আমি কোনো কিছুই মনঃস্থির করতে পারিনি, মিসেস অলিভার বললেন, তুমি বরং কাল-সকালে আমাকে একবার মনে করিয়ে দিও। কারণ রাতের আলোয় আমি সেটা দেখতে চাই।
আর দ্বিতীয় ফোন এসেছিল একজন বিদেশীর কাছ থেকে। আমার অবশ্য বিশ্বাস তিনি মিঃ এরকুল পোয়ারো।
ও! মিসেস অলিভার বললেন, তা তিনি আবার কী চাইছিলেন?
তিনি বললেন, আজ অপরাহ্নে আপনি কি একবার তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন?
সেটা একেবারেই অসম্ভব। এখুনি আবার আমি বাইরে বেরুব। তিনি কি তার টেলিফোন নম্বর দিয়েছেন? ওকে ফোন করো তো।
হ্যাঁ, তিনি দিয়েছেন।
তাহলে তো খুব ভালো হল। ওঁকে একবার ফোন করো এবং ওঁকে বলো এখন ওঁর সাথে দেখা করতে পারলাম না। আমি খুব দুঃখিত কারণ আমি এখুনি বেরিয়ে যাচ্ছি হাতির খোঁজে।
মিস লিভিংস্টোন বলল আমাকে মাপ করবেন।
ওঁকে বলো এখন আমি হাতির খোঁজ করছি।
আচ্ছা ঠিক আছে, মিস লিভিংস্টোন বলল। কিন্তু তার বাঁকা দৃষ্টি তখন তার নিয়োগকর্তীর ওপর। কারণ সে বোঝবার চেষ্টা করছিল তিনি ঠিক আছেন তো! যদিও তিনি একজন সফল ঔপন্যাসিক তথাপি এক এক সময় তার মাথার ঠিক থাকে না।
মিসেস অলিভার বললেন, আমি এর আগে কখনও হাতির খোঁজ করিনি। তবুও একাজে দারুণ আগ্রহ আছে।
এরপর তিনি বসবার ঘরে গেলেন এবং সোফার ওপর বসে বইয়ের পাতা ওলটাতে লাগলেন। গতকাল সন্ধ্যা থেকে এই বইটা নিয়ে বসে আছেন কিন্তু তিনি কতগুলো ঠিকানা সংগ্রহ ছাড়া আর কিছুই এগোতে পারেননি।