আরও এক টুকরো রুটি মুখে নিয়ে চিবোতে থাকলেন গ্যারোওয়ে?
আচ্ছা মঁসিয়ে পোয়ারো এ-সম্বন্ধে আপনার কী ধারণা? কেউ এমন কি আপনার কাছে এসেছিল এবং কিছু বলেছে যার ফলে আপনি আপনার মধ্যে এতটা আগ্রহ জাগিয়ে তুলছেন? আপনি কি কিছু জানেন যার ব্যাখ্যা আপনি করতে পারবেন–কেন?
প্রত্যুত্তরে পোয়ারো বললেন, না। সেই একই ব্যাপার। আপনার কাছে নিশ্চয় এর ব্যাখ্যা আছে তাই না?
আপনি ঠিকই বলেছেন কারণ প্রত্যেকেরই কাছে কিছু না কিছু ব্যাখ্যা থাকে যা শোনার জন্য সবাই আশা করে থাকে অথবা সেগুলোর মধ্য থেকে অন্তত একটাও। সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা যায় কিন্তু সাধারণ কোনো কাজে লাগে না। আমার অবশ্য মনে হয় আমার ব্যাখ্যা একেবারে শেষ পর্যায়ের যার কোনো কারণ আপনি খুঁজে পাবেন না, কারণ আমার মনে হয় খুব বেশি কিছু কারোর জানা থাকে না। সঠিকভাবে তাদের সম্পর্কে আমি যা জনি তা তাদের জীবিতকালের শেষ পাঁচ কী ছয় বছরের ঘটনার কথা। জেনারেল র্যাভেন্সক্রফট-এর বয়স প্রায় ষাট। অবসর নিয়ে পেনসন পাচ্ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর বয়স পঁয়তাল্লিশ। বিদেশ থেকে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন তারা। সাক্ষ্য প্রমাণ আমি যা পেয়েছিলাম তাই থেকে বলা যায় তারা প্রথমে বোর্নমাউথে একটা বাড়ি নেন এবং এর অল্প কয়েকদিন পর আর একটি বাড়িতে উঠে আসেন এবং এখানেই ঘটেছিল সেই বিয়োগান্ত ঘটনা। যাইহোক সেখানে স্কুলের ছুটির সময় তাদের ছেলেমেয়েরা বাড়ি ফিরে আসত। তারা সুখে শান্তিতে বাস করতেন সেই সময়। আমি আরও জানি অবসর নেবার পর ইংলন্ডে তাদের পরিবারের জীবনধারা কেমন ছিল। তাদের মধ্যে আর্থিক অস্বচ্ছলতা ছিল না, ঘৃণার মোটিভ বলতে যা বোঝায় তা নয়, যৌন সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তাও নয়। এমন কি অবৈধ প্রেমের কোনো ব্যাপার তাদের মধ্যে ছিল না। আপনারা হয়তো প্রশ্ন করবেন সে সম্পর্কে আমি কী জানি? আমি যা জানি তা হল জীবনের বেশির ভাগ সময় তারা বিদেশে কাটিয়েছেন। বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে, তাঁরা ঘরে ফিরে আসতেন। ভদ্রলোকের রেকর্ড ভালো ছিল কারণ তার স্ত্রীর বন্ধুরা তাকে সৌজন্য প্রকাশ করত। তাদের জীবনে তেমন দ্বন্দ্ব বিরোধ ছিল না, এর পরও যদি কোনো বিরোধ থেকে থাকে, শুধু আমি কেন সেটা কারোরই জানা নেই। কুড়ি থেকে তিরিশ বছর বিদেশে কাটিয়েছেন মালয় এবং বিভিন্ন কয়েকটি জায়গায়। সম্ভবত সেখানেই ট্রাজেডির মূল শিকড় গেঁথে গিয়েছিল। আমার ঠাকুমা প্রায়ই একটা প্রবাদের কথা বলতেন পাপের লম্বা ছায়া। তাহলে তাদের মৃত্যুর কারণ কি অতীতের কোনো ছায়া? অথবা পাপের দীর্ঘ ছায়াকে অনুসরণ করে? সেটা খুঁজে বার করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। আপনি হয়তো একটা লোকের রেকর্ড খুঁজে বার করলেন যা আপনার বন্ধু বা পরিচিতরা বলে থাকে কিন্তু তাই বলে তাদের ভিতরের বিস্তারিত খবর আপনি জানেন না। আমার মনে যে ব্যাখ্যাটা জমে ওঠে তা হল সেই জায়গাটা যদি আমি ভালো করে দেখতাম। আমার মনে হয় কিছু একটা ঘটেছিল অন্য দেশে। একটা ঈর্ষা যার সূত্রপাত বিদেশ বা ইংলন্ডে যার অস্তিত্ব আজও আছে।
যদি কেউ জানে কোথায় তার খোঁজ পাওয়া যাবে, মনে হয় তার কাছে সেটা আর অজানা থাকবে না, আপনি এটাই বোঝাতে চাইছেন।
না, সেরকম কিছু নয়, বললেন পোয়ারো। মানে আমি বলতে চাইছি এমন মনে রাখার কথা যা ইংলন্ডে তাদের কোনো বন্ধু বান্ধবরাও জানে না।
ইংলন্ডে তাদের বন্ধুদের মধ্যে বেশির ভাগ অবসর নিয়েছেন। পুরানো বন্ধুরা বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে আসেন শুধু চোখের দেখা দেখবার জন্য। যদিও আমার ধারণা অতীতে কী ঘটেছিল তা অনেকেই শোনেনি আর তাছাড়া মানুষ কিছুতেই মনে রাখতে পারে না তারা ভুলে যায়।
একটু হেসে হঠাৎ সুপারিনটেন্ডন্ট গ্যারোওয়ে কথাটা বললেন যে, তারা হাতি নয়, কারণ হাতিরা সব সময় বলে থাকে তারা সব কিছু মনে রাখতে পারে।
পোয়ারো বললেন, আপনি যা বললেন তা বড়োই অদ্ভুত।
আপনার এই হাতি সম্পর্কের মন্তব্য করার কথাটা আমার মনে খুব আগ্রহ জাগায়।
বেশ আশ্চর্য হয়েই পোয়ারের দিকে তাকালেন সুপারিনটেন্ডন্ট গ্যারোওয়ে। আরও কিছু শোনার জন্যই যেন তিনি উন্মুখ হয়ে আছেন। স্পেন্সও তার পুরানো বন্ধুর দিকে ফিরে একবার তাকালেন।
তিনি পরামর্শ দিলেন যা কিছুই ঘটেছিল সম্ভবত প্রাচ্যে অর্থাৎ হাতিরা যেখান থেকে আসছে, তাই তো? তা যাইহোক, আপনাকে এই হাতিদের প্রসঙ্গ কে উল্লেখ করেছে? পোয়ারো তার এক বন্ধুর নাম বললেন।
সুপারিনটেন্ডেন্ট স্পেন্সকে বললেন, আপনি তাকে চেনেন। তার নাম মিসেস অলিভার।
ওহো মিসেস অ্যারিয়াডন অলিভারের কথা বলছেন–বলে থামলেন একটু এবং আবার বললেন, ভালো কথা।
ভালো কথা মানে কী বলতে চাইছেন? জিজ্ঞেস করলেন পোয়ারো।
ভালো কথা মানে বলতে চাইছি তাহলে কী তিনি কিছু জানেন জিজ্ঞেস করলেন তিনি। অন্তত এখনও পর্যন্ত আমি তা মনে করি না পোয়ারো বললেন। কী যেন চিন্তা করে তিনি বললেন, তবে আমার মনে হয় তিনি হলেন সেই ধরনের মহিলা যিনি কিছু জানেন। আশা করি আমি কী বলতে চাইছি আপনি তা বুঝতে পেরেছেন।
হ্যাঁ, উত্তর দিলেন স্পেন্স এবং জিজ্ঞেস করলেন, তার কোনো ধারণা আছে?
এতক্ষণে গ্যারোওয়ে তার আগ্রহ প্রকাশ করে বললেন, আপনি কি ওই লেখিকা মিসেস অ্যারিয়াডন অলিভারের কথা বলছেন?