ঠিক? জিজ্ঞেস করলেন পোয়ারো।
তবুও সবই ভুল। বললেন গ্যারোওয়ে।
স্পেন্স বললেন, আজ তাকে যেন বেশ আগ্রহী দেখাচ্ছিল।
তার দিকে তাকিয়ে পোয়ারো বললেন, এক সময় আপনি ঠিক এইরকম ভেবেছিলেন তাই? মিসেস ম্যাকগিল্টির মামলায়? হা আপনি কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি যখন সেই কঠিন প্রকৃতির যুবকটি গ্রেপ্তার হল। সে যে অপরাধটা করতে পারে ঠিক সেই রকম অপরাধীর মতনই তাকে দেখাচ্ছিল। তার পক্ষে সেটা করার প্রত্যেকটি কারণ ছিল এবং সবাই ভেবেছিল সে সেটা করেছে। কিন্তু আপনি একমাত্র জানতেন সে সেটা করেনি। এবং আপনি এতটাই নিশ্চিত ছিলেন তাই আপনি আমার কাছে ছুটে এসেছিলেন এবং আমাকে বলেন কেসটা হাতে নেওয়ার জন্য যাতে আমি প্রকৃত তথ্য কী সেটা বার করতে পারি।
দেখুন যদি আপনি সাহায্য করতে পারেন আর আপনি আমাকে সাহায্য করেও ছিলেন। কি করেননি আপনি?
লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন পোয়ারো।
হ্যাঁ, আপনাকে সাহায্য করেছিলাম ঠিকই কিন্তু কী অস্বস্তিকর যুবক সে ছিল। ধরুন যদি কখনও কোনো যুবকের ফাঁসি কাঠে ভোলোর মতো শাস্তি তার প্রাপ্য হয় কারণ খুন করার অপরাধে নয় এবং সে যে অপরাধী নয় সেটা প্রমাণ করবার জন্যও নয়। এবং সে যে অপরাধী নয় সেটা প্রমাণ করানোর জন্য কাউকেই সে সাহায্য করবে না। আমাদের সামনেই এখন উপস্থিত র্যাভেন্সক্রফট-এর মামলা। এখানে কোথায় যেন একটা ভুল রয়ে গেছে তাই না, সুপারিনটেন্ডন্ট গ্যারোওয়ে?
হ্যাঁ, এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই নিশ্চিত যে আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে নিশ্চয়ই আপনি পারছেন।
আমি বুঝতে পারি, একসাথে বললেন পোয়ারো আর স্পেন্স। সময়ে সময়ে সবাই এ-ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হয়ে থাকে। যেমন প্রমাণ, মোটিভ, সুযোগ, কু। আপনি যাকে বলেন একটা সম্পূর্ণ ব্লু-প্রিন্ট। যাদের এই পেশা তারা সবাই জানে এসবই ভুল। ঠিক যেমন শিল্প জগতের সমালোচক জানে কোন ছবিটা নকল এবং কোনটাই বা আসল।
সুপারিনটেন্ডন্ট গ্যারোওয়ে বললেন, এই কেসের ব্যাপারে আমার করার কিছুই ছিল না, আর আপনি যেমন বলেন এ-কেসের সমস্ত ব্যাপার আমি লক্ষ্য করে দেখেছি। সেখানকার লোকেদের সঙ্গেও কথা বলে দেখেছি কিছুই ছিল না সেখানে। এটা একটা স্রেফ আত্মহত্যার চুক্তি বলেই মনে হয়েছে। কারণ এর মধ্যে আত্মহত্যার চুক্তির সব রকম চিহ্নই দেখতে পাওয়া যায়। অবশ্য এর বিকল্প হতে পারে যেমন স্বামী তার স্ত্রীকে গুলি করে তারপর নিজেকে অথবা স্ত্রী তার স্বামীকে গুলিবিদ্ধ করার পর, নিজেকে গুলিবিদ্ধ করেন। যদি কারোর এই ঘটনা পর্যালোচনা করার ইচ্ছা থাকে তাহলে সে জানতে পারবে সেগুলো ঘটেছিল এবং কেন এমন ঘটল? এ মামলার কি কোনো কেন-র স্থান ছিল? পোয়ারো বললেন।
হ্যাঁ, সেই রকমই। যে মুহূর্তে আপনি একটা কেসে তদন্ত করতে শুরু করলেন মানুষ এবং ঘটনা সম্পর্কে একটা ধাঁধা নিয়মমাফিক ছবি আপনি সংগ্রহ করলেন। অথচ এ-কেসে দেখা যাচ্ছে এঁরা বয়স্ক দম্পতি। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক খুব ভালো এবং সুখী পরিবার যা বোঝায় তাই ছিল। এক সঙ্গে বেড়োতে যেতেন এবং সন্ধ্যায় তাস খেলতেন। তাদের দুটি সন্তান ছিল। ছেলে ইংল্যান্ডে এবং মেয়ে সুইজারল্যান্ডে পড়াশুনা করত। শুধু তাই নয় মেডিক্যাল রিপোর্ট থেকেও দেখা যায় তাদের স্বাস্থ্যের কোনো খারাপ লক্ষণ ছিল না। যদিও স্বামী ব্লাডপ্রেসারে ভুগছিলেন, চিকিৎসার পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। স্ত্রী একটু বধির ও অল্প হার্টের ব্যারাম ছিল। এর জন্য অবশ্য চিন্তার কারণ ছিল না কোননা। জানেন এমন অনেক লোক আছে যাদের স্বাস্থ্য খুব ভালো অথচ তাদের বদ্ধমূল ধারণা তাদের ক্যান্সার হয়েছে। এবং শুধু তাই নয় তাদের দৃঢ় বিশ্বাস তারা আর এক বছর বাঁচবে না। এক্ষেত্রে তারা সময় সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে থাকে। তাই বলে র্যাভেন্সক্র সেই প্রকৃতির লোক ছিলেন না। তিনি ছিলেন ধীর, স্থির, সুস্থ, স্বাভাবিক প্রকৃতির মানুষ।
তাহলে আপনি সত্যিই কী ভাবেন? জিজ্ঞেস করলেন পোয়ারো।
অতীতের দিকে যদি তাকাই তাহলে আমি নিজেকে বলি এটা আত্মহত্যার কেস। একমাত্র আত্মহত্যা ছাড়া কিছুই হতে পারে না। যে কোনো কারণেই হোক, আর্থিক দিক থেকে নয়, স্বাস্থ্য খারাপের দিক থেকেও নয় এবং অসুখী জীবনেরও কোনো কারণ নয় তবু তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, জীবন তাদের কাছে দুর্বিসহ। তারা যখন বেড়োতে বের হন তাদের সাথে রিভলবার ছিল। এবং ওই রিভলবারটা তাদের মৃতদেহের মাঝখানে পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং ওই রিভলবারের ওপর দু-জনেরই হাতের ছাপ ছিল। দু-জনেই ওটা ব্যবহার করেছিল কিন্তু কে যে শেষ গুলি চালিয়েছিল তার কোনো চিহ্ন অবশ্য পাওয়া যায়নি। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন স্বামীই প্রথমে তার স্ত্রীকে গুলিবিদ্ধ করেন এবং এটাই বেশি যুক্তিগ্রাহ্য। এত সব যুক্তি ছিল বলেই এই কেসের আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এটা স্রেফ আত্মহত্যা, যদি কখনও সংবাদপত্রে স্বামী স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনা লেখা থাকে দেখি আমি আমার মনের অজান্তে সেই বারো কী চোদ্দ বছর আগেকার ঘটনার অতীতে ফিরে যাই এবং নিজের মনকেই প্রশ্ন করি কি এমন ঘটনা র্যাভেন্সক্রফটের কেসে ঘটেছিল? একটাই কথা তখন আমি চিন্তা করি স্ত্রী কী তাহলে স্বামীকে ঘৃণা করতেন এবং তাঁর হাত থেকে নিস্তার পেতে চেয়েছিলেন? কিংবা তারা কি পরস্পর পরস্পরকে ঘৃণা করতেন? এবং সেই ঘৃণা বোধটাই কি তাদের দুজনের কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল?