সুন্দর মধ্যাহ্নভোজের শেষ পদে এসে মনে মনে সন্তোষ প্রকাশ করলেন মিসেস অলিভার যে, তাঁর প্লেটে তখনও ডিমের শ্বেতাংশের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে মিষ্টি খাবারের কিছু অবশিষ্ট পড়েছিল। মিষ্টি খাবার তার খুব পছন্দ, মধ্যাহ্নভোজের শেষ পাতে এটা খুবই সুস্বাদু। সেটা বেশ তৃপ্তি সহকারে খেতে গিয়ে ভাবছিলেন কেউ যখন মাঝ বয়সে যায় এই মিষ্টি খাবারের ব্যাপারে তাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে দাঁতের ব্যাপারে। তার দাঁতগুলো দেখতে সুন্দর সাদা ঝকঝকে কিন্তু এটা সত্যি আসল জিনিসের মতন হলেও ওগুলো আসল দাঁত নয়। বরং কুকুরের দাঁতগুলো সব সময়ে তার মনে হয় সত্যিকারের হাতির দাঁতের মতন, কিন্তু তার ধারণা মানুষের দাঁতগুলো নকল প্লাস্টিকের নেহাতই হাড় বৈ কিছু নয়। যাইহোক লজ্জাজনক কোনো ব্যাপারে জড়িয়ে না পড়াই ভালো যেমন লবণাক্ত কাজুবাদাম কিংবা চকোলেটে লোভ না করাই ভালো, একটা পরিপূর্ণ তৃপ্তিতে শেষ গ্রাসটা মুখভর্তি করে খেলেন। বেশ ভালো মধ্যাহ্নভোজ বলতে হয়।
মধ্যাহ্নভোজ যেমন উপভোগ করলেন সেই সঙ্গে উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গও তেমন ভাবে উপভোগ করলেন। শুধুমাত্র মহিলা লেখিকাদের সংবর্ধনা জানানোর জন্যই এই মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন–কিন্তু সৌভাগ্যবশত সেটা আর কেবল মহিলা লেখিকাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না। সেখানে অন্য লেখক সমালোচক এবং পড়ুয়ারাও উপস্থিত ছিল, দু-জন আকর্ষণীয় পুরুষের মাঝে বসেছিলেন মিসেস অলিভার। একজন হল এডউইন অ্যাবাইন যাঁর কবিতা তিনি সবসময়ে উপভোগ করে থাকেন, সাহিত্যে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারও বিরাট। এবং তিনি দারুণ আতিথ্যপরায়ণ ব্যক্তি। বিদেশ ভ্রমণে তার অনেক আতিথেয়তার অভিজ্ঞতা আছে। শুধু তাই নয় রেস্তোরাঁ এবং ভালো ভালো খাবারেও যথেষ্ট আগ্রহী তিনি। তারা দু-জনে অত্যন্ত খুশি মনে খাবারের প্রসঙ্গে আলোচনা করলেন সাহিত্যের আলোচনা দূরে সরিয়ে রেখে।
অপরজন হলেন স্যার ওয়েসলি কেল্ট, মধ্যাহ্নভোজের একজন ভালো সঙ্গী। তিনি তার বই-এর প্রসঙ্গে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বললেন। কিন্তু এমন কোনো মন্তব্য করলেন না যাতে মিসেস অলিভার অসন্তুষ্টি বোধ করেন, এই কারণেই মিসেস অলিভার তাকে তার পক্ষের একজন বলে মনে করলেন। মিসেস অলিভার মনে করেন, পুরুষদের প্রশংসা সবসময়ই গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে মহিলারাই সাধারণত উৎসাহিত হয়ে থাকে। এমন কিছু কিছু কথা মহিলারা লিখে থাকে তাকে। এক এক সময়ে দেশের অনেক দূর থেকে কিছু ভাবপ্রবণ যুবকও চিঠি লেখে তাকে। গত সপ্তাহে তিনি তার এক ভক্ত যুবকের কাছ থেকে একটা চিঠি পান যার শুরুটা ছিল : আপনার বই পড়ে আমার মনে হয়েছে, আপনি নিশ্চয়ই মহৎ মহিলা। দ্য সেকেন্ড গোল্ডফিশ, বইটা পড়ার পর ছেলেটি তার সাহিত্য সম্পর্কে প্রচণ্ড উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। যা তিনি মনে করেন সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। বিনয়ীর সম্মান পাওয়ার যোগ্য তিনি কিনা জানেন না কারণ তার ধারণা, যে সব গোয়েন্দা কাহিনি তিনি লেখেন সেই নিরিখে খুব ভালো কিছু কাহিনি আছে অন্য সব কাহিনির থেকে অনেক অনেক বেশি ভালো হয়তো বরং তাতে কেউ যদি তাকে একজন মহৎ মহিলা বলে আখ্যা দেয় তাতে তিনি কোনো যুক্তি খুঁজে পান না। এবং তিনি একজন ভাগ্যবতী মহিলা যিনি কিছু কাহিনি লিখে তার পাঠকদের কাছে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন ভালোভাবে, এবং তিনি মনে মনে ভাবলেন একেই বলে হয়তো চমৎকার সৌভাগ্য।
অবশেষে সব কিছু বিবেচনা করে মনে হয় তিনি তার ভাগ্য পরীক্ষায় বেশ ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন। এখন তারা কফির উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে যেখানে আপনি আপনার সঙ্গী বদল করতে পারেন। এবং নতুন সঙ্গীর সঙ্গে খোসগল্প করতে পারেন। মিসেস অলিভার ভালোভাবেই জানেন এখন মহিলারা যেখানে জমায়েত হবে সেখানে তাকে আক্রমণ করবে এবং এধরনের আক্রমণ মানে নক্কারজনক প্রশংসা, এ-সব ক্ষেত্রে তিনি সব সময় সঠিক উত্তর দেবার পরে নিজেকে ভীষণ অনভিজ্ঞ বলে মনে করেন কারণ তিনি জানেন আপনার দেবার মতন সত্যিকারের সঠিক উত্তর সেই। সেই আলোচনা এমনভাবে চলে যেন মনে হয় বিদেশ ভ্রমণে ভাষার প্রকাশভঙ্গি সহ একটা ভ্রমণসঙ্গী জাতীয় বই সঙ্গে নিয়ে যাওয়া।
একজন প্রশ্ন করলেন, আপনার বই পড়তে কি দারুণ ভালো লাগে আমার, এবং আরও মনে হয় কী রকম বিস্ময়করই না সেগুলো।
লেখিকা উত্তরে বললেন, এটা আপনার অত্যন্ত দয়া আমি যে কী খুশি
পরবর্তী প্রশ্ন করলেন, আপনার বোঝা উচিত আপনার সঙ্গে মিলিত হবার জন্য মাসের পর মাস ধরে অপেক্ষা করছি এটা তো সত্যিই বিস্ময়কর।
ঠিক, এইভাবেই চলে তাদের আলোচনার গতিপথ। সব কথাই বলতে হবে আপনার বই সম্পর্কে কিংবা অন্য কোনো লেখিকার বই সম্পর্কে। এর বাইরে আপনি একটি কথাও বলতে পারবেন না। কিন্তু মিসেস অলিভার বেশ ভালোভাবেই জানেন তার সঠিক ক্ষমতা। সেই যখন তিনি বিদেশের দূতাবাসে ছিলেন তার বন্ধু তার সামনে কয়েকটি প্রশ্ন রেখেছিলেন।
আলবারটিনা বললেন, আপনার সব কথা আমি শুনেছি, এবং তিনি আরও বলেছিলেন সংবাদপত্রের সেই তরুণ প্রতিনিধিটি আপনার সাক্ষাৎকার নেবার সময় আপনি তাকে কী বলেছিলেন আমি তাও শুনেছি। আপনার ভালো কাজের জন্য যে গর্ব হওয়া উচিত ছিল সেটা আপনি দেখাতে পারেননি তাই না! আপনার তখন বলা উচিত ছিল গোয়েন্দা গল্প আর যাঁরা লেখেন তাদের থেকে অনেক ভালো আমি লিখি, হ্যাঁ আমি ভালো লিখি।