আমি মনে করি না এ-ব্যাপারে আর কোনো কথা বলা ঠিক হবে। আমাদের আর এ-ব্যাপারে কোনো অনুসন্ধান করার অথবা জানার দরকার নেই। এবং বিচারের রায়ও সন্তোষজনক। এর পিছনে কোনো রকম মোটিভও নেই। বললেন মিসেস অলিভার।
সিলিয়া প্রত্যুত্তরে বলল, আমি চিন্তা করি কোনটা সম্ভব হতে পারে। আমার মনে হয় আমার বাবাই মাকে খুন করেছিলেন। কারণ এটাই ভাবা স্বাভাবিক। একজন পুরুষের পক্ষে যে কোনো লোককে গুলি করাটা যতটা সম্ভব একজন নারীর ক্ষেত্রে যে কোনো কারণেই তোক একজন নারী, আরও পরিষ্কার করে বলা উচিত অর্থাৎ আমার মতো নারী আমার বাবাকে গুলি করতে পারেন আমি কল্পনাই করতে পারি না। আবার আমার মনে হয় বাবা যদি সত্যি সত্যিই মৃত্যু চাইতেন তাহলে তোত অন্য উপায়ও ছিল। আবার এও মনে মনে হয় ওঁরা কেউ কারোর মৃত্যু চাইতেন না।
সুতরাং বাইরের কেউ একজন হতে পারে?
হ্যাঁ, কিন্তু বাইরের লোক বলতে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন? সিলিয়া জিজ্ঞেস করল।
সেই বাড়িতে আর কে কে থাকত? ওঃ ওই বাড়িতে ছিলেন একজন হাউজকিপার বয়স্ক অথচ বোবা ও কালা, একজন বিদেশিনী মেয়ে সে ছিল আমার গভরনেস। কিছুদিন মা হাসপাতালে ছিলেন, ওখান থেকে ফিরে আসার পর আমার গভরনেস আবার এসেছিলেন মাকে দেখাশুনা করার জন্য। সে খুব ভালো মেয়ে ছিল। এবং আরও একজন ছিলেন মামিমা, তাকে আমি মোটেই পছন্দ করতাম না। তাদের মধ্যে কোনো এক জনের কোনো রাগ বা বিদ্বেষ ছিল, আমার কিন্তু তা মনে হয় না। কারণ ওঁদের মৃত্যুতে তাদের মধ্যে কেউই লাভবান হবে না, আমি আর আমার চার বছরের ছোটো ভাই এডওয়ার্ড ছাড়া। আমার বাবামা-র যা সঞ্চিত অর্থ ছিল অবশ্য খুব বেশি টাকা ছিল না, বাবার পেনসন ছিল আর মার নিজস্ব স্বল্প আয় ছিল। আমরা দুই ভাই বোন তার উত্তরাধিকারী হই।
আমি দুঃখিত, সত্যিই আমার খুব খারাপ লাগছে তোমাকে জিজ্ঞেস করার জন্য এবং আমি হয়তো তোমাকে অসুবিধায় ফেললাম। মিসেস অলিভার বললেন।
না, আমাকে একটুও অসুবিধায় ফেলেননি বরং ব্যাপারটাকে আপনি আমার মনে জাগিয়ে তুললেন এবং সেটার প্রতি আমার আগ্রহ জাগছে জানার জন্য। আমার আগ্রহ হচ্ছে এই কারণে যে আমার এখন বোঝবার জানবার বয়স হয়েছে। তারা ছিলেন অতি প্রিয়জন, অবশ্য প্রত্যেক মানুষের কাছেই তাদের অভিভাবক অতি প্রিয় এবং কাছের মানুষ হয়ে থাকে। আমি ঠিক জানি না কিন্তু উপলব্ধি করতে পারি তারা কী রকম ছিলেন এবং তাদের জীবন কী রকম ছিল। আমার খুব কৌতূহল হয় এবং জানারও প্রচণ্ড ইচ্ছা যে, কী এমন সঙ্কটময় ঘটনা তাদের জীবনে ঘটেছিল? জানেন মিসেস অলিভার এটা ঠিক সাপের উঁচ গেলার মতন। আপনি না পারবেন পুরোপুরি গিলতে আর না পারবেন বার করে দিতে। তবে হ্যাঁ আমি পুরো ব্যাপারটা জানতে চাই এবং আমার জানারও প্রবল ইচ্ছা, কারণ সমস্ত ব্যাপারটা জানা হয়ে গেলে মনের মধ্যে আর কোনো দ্বন্দ্ব থাকবে না আবার নতুন করে কিছু জানার। তাই না?
তাহলে কি তুমি এই ব্যাপারে কিছু চিন্তা করবে?
এক মুহূর্তের জন্য তাঁর দিকে সিলিয়া তাকিয়ে রইল এবং ওর মুখের ভাব দেখে মনে হল, কোনো কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ও চেষ্টা করছে।
মেয়েটি বলল, হ্যাঁ, এ ব্যাপারে আমি সব সময়ই চিন্তা করি। আমি এবং ডেসমন্ডা দুজনেই জানতে চাই, এ ব্যাপারে আপনার যদি কিছু জানা থাকে।
১.২ পুরোনো পাপের লম্বা ছায়া
একটা ছোটো রেস্তোরাঁর ভেতর ঢুকলেন ঘূর্ণায়মান দরজা ঠেলে এরকুল পোয়ারো। দিনের একটা বেখাপ্পা সময় বলে সেখানে খুব বেশি লোক ছিল না। তবে যাঁর সঙ্গে তার দেখা করার কথা তাকে তিনি দেখতে পেলেন টেবিলের এক কোণায়, চারচৌকা ভারিক্কি চেহারায় বসেছিলেন। তিনি হলেন সুপারিনটেন্ডেন্ট স্পেন্স। তিনি বললেন, ‘ভালো’ এটা খুঁজে বার করতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?
না, একেবারেই নয়। আপনার ডিরেকসান যথেষ্ট ছিল।
আসুন এবার আমরা পরিচয় করি। ইনি হলেন চীফ সুপারিনটেন্ডেন্ট গ্যারোওয়ে। আর ইনি হলেন মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো। গ্যারোওয়ের চেহারা ছিল পাতলা রোগাটে, কঠোর তপস্বীর মতো মুখ এবং ধূসর চুল। খুব ভালো বললেন পোয়ারো।
গ্যারোওয়ে বললেন, এখন আমি অবসর প্রাপ্ত, এমন কিছু ঘটনা আছে যে কেউ সেটা মনে রাখতে পারে তা যতই অতীত হোক না কেন। এবং সাধারণ লোক সম্ভবত সব কিছুই মনে রাখতে পারে না কিন্তু, হ্যাঁ।
এরকুল পোয়ারো প্রায় বলেই ফেলছিলেন হাতিরা মনে রাখে, কিন্তু সময় মতো নিজেকে খুব সামলে নিলেন। মিসেস অ্যারিয়াডন অলিভারের সেই প্রবাদ বাক্যটা তার মনের মধ্যে এমন গেঁথে গেছে যে, যে কোনো স্থানে সেটা চেপে যাওয়া খুবই কষ্টকর।
সুপারিনটেন্ডেন্ট বললেন, আমি আশা করতে পারি যে, আপনি খুব একটা অধৈর্য হচ্ছেন না।
একটা চেয়ার টেনে তারা তিনজনে বসলেন। সুপারিনটেন্ডেন্ট স্পেন্স এই রেস্তোরাঁয় আসক্ত সুতরাং মেনু চার্ট দেখে তিনি তার মনের মতো খাবারের অর্ডার দিলেন, গ্যারোওয়ে ও পোয়ারো তারাও তাদের পছন্দমতো খাবারের অর্ডার দিলেন, তারা কিছুক্ষণ চেয়ারে হেলান দিয়ে শেরিতে চুমুক দিলেন। পোয়ারো বললেন, কতকগুলো ঘটনার ব্যাপারে আপনাদের এখানে ডেকে আনার জন্য আমি প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারণ সেই ঘটনাগুলো অনেক বছর আগের এবং নিষ্পত্তিও হয়ে গেছে অনেক দিন আগে।