একথা তিনি আপনাকে বলেছেন এবং সেটা করতেও আপনাকে বলেছেন?
হ্যাঁ।
আপনাকে একজন লেখিকা জেনেও সেই সাহিত্যের ভোজসভায় এ-ধরনের কথা আপনাকে বলতে পারলেন কী করে?
তিনি আমাকে আদৌ চেনেন না কারণ তিনি কখনও আমার সঙ্গে মিলিত হননি এবং আমিও তাকে দেখিনি কখনও।
সেটা কি আপনার কাছে বিস্ময়কর বলে মনে হয়নি?
না, ওই ভদ্রমহিলার মধ্যে আমি তেমন বিস্ময়কর কিছু দেখতে পাইনি। উপরন্তু তিনি কেবল আমাকে আঘাত করে গেছেন। মিসেস অলিভার বললেন, তিনি একজন জঘন্য প্রকৃতির মহিলা।
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন।
তুমি তার ছেলেকে বিয়ে করছ নাকি?
এই বিষয়ে আমরা দুজনে আলোচনা করছি। এখনও পর্যন্ত কিছুই ঠিক হয়নি। আপনি কি জানেন তিনি এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন?
হ্যাঁ, আমি জানি। কারণ আমার ধারণা যে কেউ সেটা জানতে চাইবে যে, তোমাদের পরিবারের সঙ্গে কে কে পরিচিত?
আমার বাবা আর মার সম্পর্কে বলছি তাহলে শুনুন। সেনাবিভাগ থেকে অবসর নেবার পর কান্ট্রিতে একটা বাড়ি কেনেন আমার বাবা। একদিন ওঁরা দু-জন পাহাড়ের পথে বেড়াতে যান এবং সেখানেই ওঁদের দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে যে রিভলবার পাওয়া যায় সেটা ছিল আমার বাবারই। আমার বাবা মাকে প্রথম গুলিবিদ্ধ করে পরে নিজে করেন কিংবা আমার মা বাবাকে প্রথম গুলি করে পরে নিজেকে গুলিবিদ্ধ করেন অথবা সেটা আত্মহত্যার চুক্তি কিনা কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, আমার মনে হয় আপনি এই খবর আগেই পেয়ে গেছেন।
মিসেস অলিভার বললেন, হ্যাঁ, একরকম ভাবে জেনেছি। তবে আমার মনে হয় প্রায় ছয় বছর আগে এটা ঘটেছিল।
হ্যাঁ, প্রায় সেই রকমই হবে।
এবং সেই সময় তোমার বয়স ছিল বারো অথবা চোদ্দ।
হ্যাঁ।
মিসেস অলিভার বললেন, এ ব্যাপারে আমি বেশি কিছু জানি না কারণ সেই সময় আমি আমেরিকায় যাই লেকচার টুরে। আমি শুধু খবরের কাগজে পড়েছিলাম। খবরটা বেশ বড়ো করে বেড়িয়েছিল। তখন আসল সত্যটা জানা খুব কঠিন ছিল কারণ খুনের মোটিভের কোনো চিহ্ন ছিল না, তোমার বাবা-মার মধ্যে বেশ ভালো সম্ভব ছিল এবং তারা খুব সুখী ছিলেন। সেটাও কিন্তু কাগজে উল্লেখ করা হয়েছিল। আমার আগ্রহ থাকার একটাই কারণ তোমার মা স্কুল থেকেই আমার বন্ধু ছিল এবং পরবর্তীকালে তোমার বাবা-মার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়। তার কিছুদিন পর আমাদের দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায় কারণ আমার বিয়ে হয়ে অন্যত্র চলে যাই এবং তোমার মা বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে যান। তবে আমার যতদূর মনে পড়ে মালায়েতে অথবা সেরকম জায়গায় তার সৈনিক স্বামীকে নিয়ে সে চলে যায়। তোমার মা আমাকে বলেছিলেন তার যে কোনো একটি সন্তানের ধর্ম মা হবার জন্য এবং তোমাকেই আমি ধর্ম কন্যা হিসাবে নিলাম। বছরের পর বছর ধরে তোমার মা বাবা বিদেশে থাকতেন ফলে তাদের সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাৎ হত না এবং তোমার সাথেও আমার দেখা হত একটা বিশেষ উপলক্ষে।
হ্যাঁ, আমার একটু একটু মনে আছে। আপনি আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন এবং ভালো ভালো খাবার খাওয়াতেন।
কাগজে, এই ব্যাপারের লেখা দেখে আমি খুব মর্মাহত হয়েছিলাম। এই খুনের নির্দিষ্ট কোনো মোটিভ ছিল না, ঝগড়া বিবাদের কোনো চিহ্ন ছিল না এবং বাইরে থেকে তাদের কোনো আক্রমণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমি এসব জেনেছি কারণ এই মামলার বিচারের রায় খোলাখুলি ছিল। মিসেস অলিভার বললেন, তারপর ব্যাপারটা আমি একদম ভুলে যাই। আমি শুধু চিন্তা করি এবং অবাক হই কোন পরিস্থিতি তাদের হত্যা বা আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিতে পারে এবং এই ঘটনার পিছনে কী ভয়ঙ্কর ঘটনা থাকতে পারে? যেহেতু আমি সেই সময় আমেরিকায় ছিলাম সেইহেতু এই ব্যাপারে বেশি দূর এগোতে পারিনি। তারপর যখন তোমাকে দেখি স্বভাবতই তোমাকে এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারিনি।
না, তার জন্য আমি তারিফ করি, বলল সিলিয়া।
মিসে অলিভার বললেন, সারাজীবন ধরে কেউ তার বন্ধু বা পরিচিত কাউকে কেন্দ্র করে দারুণ কৌতূহলের মধ্যে পড়ে থাকুক। তার মনের অবস্থা তখন কেমন হবে বা হতে পারে ভাবতে পারো। যদি বন্ধু হয় তবে তোমার একটা অন্তত ধারণা হতে পারে যে, কোনো ঘটনার থেকে সেই কৌতূহলের সৃষ্টি-কিন্তু সেই ঘটনা যদি দীর্ঘ সময়ের হয় অথবা যদি তুমি দেখো সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা করতে, তুমি কিন্তু তখন সম্পূর্ণ অন্ধকারে। অথচ তোমার এমন কেউ নেই যার কাছে তুমি কৌতূহল দেখাতে পারো।
সিলিয়া বলে, আমার বেশ মনে আছে যে, যখন আমার বয়স একুশ আপনি খুব সুন্দর সুন্দর উপহার পাঠিয়েছিলেন।
তার কথা শুনে মিসেস অলিভার বললেন, একটা সময় আসে যখন মেয়েদের বাড়তি নগদ টাকার প্রয়োজন হয় কারণ তখন তারা অনেক কিছু করতে চায় আর তাদের হাতে তখন যদি নগদ বাড়তি টাকা না থাকে, তাহলে তাদের ইচ্ছা পূরণ করবে কী করে?
হ্যাঁ, আমি ভাবি আপনি একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি আর আপনি এও জানেন কার কী পছন্দ। আপনি আমাকে বাইরে নিয়ে যেতেন অদেখা জিনিস দেখানোর জন্য বা চমৎকার খাবার খাওয়ানোর জন্য। আমার সঙ্গে মিশে সুখ দুঃখের গল্প করতেন দূর সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ার মতন। আমি আমার জীবনে বহু দীর্ঘনাসা পার্কারের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। কিন্তু সব সময়ে নিজেকে প্রশ্ন করে আপনার সম্পর্কে জানতে চাই।