এই বয়সে আপনি কেন সেরকম হতে যাবেন?
তুমি ঠিকই বলেছ। মিসেস অলিভার বললেন, কারোর কর্তব্য আবার কারোর অনুভব করার স্পৃহা একটা নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়ে যায়। আবার নিজেকে পরিপূর্ণভাবে ভরিয়ে তুলতে পেরেছি তাও নয়। কিন্তু তোমার পাকাপাকি স্বীকৃতিতে যাওয়ার কথা আমার মনে পড়ে না।
আমার বিশ্বাস ধর্মমা-র কর্তব্য হল ধর্মসন্তানদের প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া এবং যা কিছু খারাপ সব পরিত্যাগ করা, তাই নয় কী? এই কথা বলার সময় সিলিয়ার ঠোঁটে কৌতুকের হাসি ফুটে উঠল।
মিসেস অলিভার ভাবলেন মেয়েটি খুব নম্র বিনয়ী। কিন্তু কতকগুলো ব্যাপারে সাংঘাতিক বিপজ্জনক মেয়ে।
হ্যাঁ, ভালো কথা, মিসেস অলিভার বললেন, কেন আমি তোমাকে ডেকেছি তা বলব এবং সমস্ত ব্যাপারটাই অদ্ভুত। আমি কখনও কোনো সাহিত্য সভায় যাই না কিন্তু তবু গত পরশু একটা সাহিত্যের ভোজসভায় আমাকে যেতে হয়েছিল।
হ্যাঁ, খবরের কাগজে আপনার নাম মিসেস অ্যারিয়াডন অলিভার আমি দেখেছি। বলল সিলিয়া এবং খবরটা পড়ে আমি বিস্মিত হই। কারণ সচরাচর আপনি এরকম পার্টিতে যান না কখনও।
তার উত্তরে মিসেস অলিভার বললেন, না, এ রকম পার্টিতে আমার যেতেও ইচ্ছা করে না।
কেন আপনি আনন্দ উপভোগ করেননি? হ্যাঁ আনন্দ করেছিলাম বৈকি। এই প্রথমই এই ধরনের পার্টিতে আমি যাই। এখানে কিছুটা আমেজ থাকে কিছুটা আনন্দ থাকে কিন্তু এমন কিছুও থাকে যা বিরক্তির কারণ হতে পারে।
এমন কিছু ঘটেছিল কি যাতে আপনি বিরক্তি বোধ করেন?
হ্যাঁ, আর সেই ঘটনা তোমাকে জড়িয়ে এবং আরও ভাবলাম তোমাকে এ-সম্বন্ধে বলতেই হবে কারণ যা ঘটেছিল আমি একদম সেটা পছন্দ করি না।
সিলিয়া বলল, এটা যেন ঠিক ষড়যন্ত্রের মতো শোনাচ্ছে, এই বলে সে শেরিতে চুমুক দিল।
একজন ভদ্রমহিলা উপযাচক হয়ে কথা বলতে এলেন যাঁকে আমি চিনি না এবং তিনিও আমাকে চেনেন না।
আপনার জীবনে এসে রকম ঘটনাও ঘটেছে বলেও আমার মনে হয়।
মিসেস অলিভার বললেন, হ্যাঁ নিশ্চিতভাবেই ঘটেছিল। সাহিত্য জীবনে আকস্মিক ব্যাপারটা, তুমি মনে করো তোমার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো লোক বলল, আমি আপনার বই খুব ভালোবাসি এবং আপনার সঙ্গে মিলিত হতে পেরে আমি খুব খুশি। এই রকম ব্যাপারটা আর কি।
ওই রকম কঠিন সব ব্যাপার আমার জানা আছে কারণ একসময় আমি একজন সাহিত্যিকের সেক্রেটারি ছিলাম।
হ্যাঁ, ঠিক এই ধরণের ঘটনা বটে, তবে তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম। এবং সেই মহিলাটি আমার কাছে এসে বললেন, আপনার একজন ধর্মকন্যা আছে এবং তার নাম সিলিয়া র্যাভেন্স ক্রট।
আপনার কাছে এসেই আমার কথা বললেন, কী বিশ্রী ব্যাপার, সিলিয়া বলল। কোথায় প্রথমে আপনার বই প্রসঙ্গে আলোচনা করবেন এবং আরও বলবেন আপনার শেষতম বইটি পড়ে খুব আনন্দ পেয়েছি বা সেই রকম কিছু। তারপর নয় আমার প্রসঙ্গে আসতে পারতেন। আমি বুঝতে পারছি না আমার বিপক্ষে তিনি কী এমন খুঁত পেয়েছেন?
তোমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঁর নেই বলেই আমার মনে হয়, বললেন মিসেস অলিভার।
তিনি কি আমার বন্ধু?
শুধু জানি না বললেন মিসেস অলিভার। ঠিক এই সময়ে দুজনের মধ্যে একটা নীরবতা নেমে এলো এবং শেরির গ্লাসে চুমুক দিয়ে সিলিয়া মিসেস অলিভারের দিকে তাকালেন সন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে।
সিলিয়া বলল, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আপনি কোনো পথ ধরে চলছেন? আমার ধারণা আপনি আমাকে ষড়যন্ত্রের মধ্যে ফেলছেন।
ঠিক আছে, আশা করি আমার ওপর রাগ করবে না তুমি, বললেন মিসেস অলিভার।
আমি আপনার ওপর রাগ করতে যাব কেন?
কারণ তোমাকে এমন কিছু কথা বলব এবং এমন কিছু একটার পুনরাবৃত্তি করতে যাব তুমি শুনে হয়তো বলবে এটা আমার কোনো ব্যাপার নয় বা এমনও হতে পারে আমাকে মুখ বুজে চুপ করে থাকতে হবে এবং সেটা আর কখনও উল্লেখ করতে পারব না।
সিলিয়া বলল, আপনি কিন্তু আমার কৌতূহল জাগিয়ে তুলছেন।
তিনি আমাকে তাঁর নাম বলেছিলেন মিসেস বার্টন কক্স।
সিলিয়া বলল, ওঃ যথেষ্ট।
তুমি কি ওঁকে চেনো?
হ্যাঁ, ওঁকে আমি চিনি।
আমিও কিন্তু মনে মনে ভেবেছিলাম তুমি হয়তো চিনতে পারো কারণ—
কারণ কী বলে মনে হয় আপনার?
কারণ এমন কিছু তিনি বলেছিলেন
কী–আমার ব্যাপার? তিনি আমাকে চেনেন বলে?
তিনি বলেছিলেন যে তার ধারণা তার ছেলে হয়তো তোমাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। এই কথা শোনার পর সিলিয়ার মুখের ভাবের পরিবর্তন দেখা গেল। সে কঠিন চোখে মিসেস অলিভারের দিকে তাকালো। আপনি কি সেই ব্যাপারে কিছু জানতে চান?
মিসেস অলিভার বললেন, না, এই ব্যাপারে আমি জানতে চাই না। তোমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমি নাক গলাতে চাই না। সেটা তোমাদের দুজনের মন দেওয়া নেওয়া ব্যাপার। আমি শুধু উল্লেখ করলাম, কারণ প্রথমেই তিনি এই প্রসঙ্গটা তুলেছিলেন আমার কাছে। আর যেহেতু তুমি আমার ধর্মকন্যা তাই তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করতে পারব কয়েকটা খবর আমাকে দেবার জন্য। তোমার কাছ থেকে সেই খবরটা পেলে আমি অন্তত তাকে সেটা জানতে পারব, তিনি হয়তো সেটা ভেবেছিলেন আমার ধারণা।
কী খবর?
ওঃ ভালো কথা, আমি যে কথাটা তোমাকে এখন বলতে যাব আমার মনে হয় না তোমার সেটা পছন্দ হবে। অবশ্য আমি নিজেও সেটা পছন্দ করি না। আমি মনে করি ভদ্রমহিলার অমন বিশ্রী স্বভাব এবং নোংরা মনোভাব একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য। তিনি আমাকে এও বলেছিলেন যে, মেয়েটির বাবা তার মাকে খুন করেছিল অথবা তার মা তার বাবাকে খুন করেছিল, আপনি কি খবরটা খুঁজে বার করতে পারবেন?