এখন দেখছি আপনার যুক্তি বেশ আকর্ষণীয়, পোয়ারো তখন বললেন। তাহলে আপনি হাতি নয় হাতি সদৃশ্য মানুষের খোঁজে যাবেন। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন তবে যাবার আগে সেই ঘটনার সঠিক তারিখ আমাকে জানাতে হবে। পোয়ারো তাকে ভরসা দিয়ে বললেন, আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারব।
তাহলে আমি সেই সময়কার লোকেদের কথা মানে যে সব লোক জেনারেলের বন্ধুবান্ধবদের চিনত, এবং সেই সব বন্ধুবান্ধবরা জেনারেলের সব খবর রাখত, এবং এও হতে পারে যারা জেনারেলের বন্ধুদের চিনত তারা হয়তো বিদেশে চলে গেছে। তিনি এও বললেন, যাদের আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই আমার। অথচ আপনি দেখবেন এমন অনেক লোককে আপনি চেনেন কিন্তু দীর্ঘদিন কোনো দেখাসাক্ষাৎ নেই। হঠাৎ যদি একদিন দেখেন তখন দেখবেন খুব খুশি হবে অথবা তারা আপনাকে ভালো করে চিনতে না পারলেও চেনবার চেষ্টা করবে। এবং তখনই আপনি সেই নির্দিষ্ট দিনের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারবেন।
পোয়ারো বললেন, দারুণ তো, এটা খুবই আকর্ষণীয় ব্যাপার। আপনার কোনো কাজে অসুবিধা হবে না কারণ আপনি খুব ভালোভাবেই প্রস্তুত হয়ে আছেন। যে সব লোক র্যাভেন্সক্রফটদের চিনত ভালোভাবে অথবা ভালোভাবে নয়, কিংবা যেসব লোক সেই ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বাস করত, তাদের খুঁজে বার করা একটু কঠিন হলেও আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত সাফল্য আসবেই। সেই দিন কী ঘটেছিল এবং সেই ঘটনার ব্যাপারে তারা কী চিন্তা করে বা কেউ কী আপনাকে কিছু বলেছে, এইভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে যেতে একটু গভীরে গিয়ে প্রশ্ন রাখবেন তাদের কাছে, স্বামী অথবা স্ত্রীর অন্য কোনো নারী অথবা পুরুষের সঙ্গে প্রেমঘটিত কোনো ব্যাপার ছিল কিনা। কিংবা কোনো অর্থের উত্তরাধিকারী কেউ ছিল কিনা। আমার মনে হয় এই পথ ধরে এগোলে অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান আপনি হয়তো পেতে পারেন।
মিসেস অলিভার বললেন, ওহে প্রিয়, আমার মনে হয় সত্যিই আমি দীর্ঘনাসা-পার্কার।
পোয়ারো বললেন, আপনাকে এখন একটা কাজ দেওয়া হয়েছে, আপনার পছন্দমতো কারোর দ্বারা নয় বা আপনি কাউকে বাধিত করতে চান এমন কারোর দ্বারাও নয়। কিন্তু সে এমন একজন যাকে আপনি অপছন্দ করেন, আপনাকে মনে রাখতে হবে জ্ঞান সঞ্চয়ের অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, অবশ্য সেটা কোনো ব্যাপার নয়। সুতরাং আপনি আপনার নিজের পথ গ্রহণ করুন। সে পথ হচ্ছে হাতিদের। কারণ হাতিরা মনে রাখতে পারে।
মিসেস অলিভার বললেন, আমি সত্যিই ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে।
পোয়ারো বললেন, যে সব হাতিরা মনে রাখে তাদের খোঁজে আপনাকে আবিষ্কারের অভিযানে আমি পাঠাচ্ছি।
মিসেস অলিভার খুব দুঃখের সঙ্গে বললেন যে, এ আমার পাগলামো এবং আমার মনে হয় আমি পাগল। স্ট্রেট ওয়েলপিটারের ছবির মতো নিজেকে ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি তার চুলের ভেতর হাত চালালেন। গোল্ডেন রিট্রিভার-এর বিষয়ে একটি গল্প লিখতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু কিছুতেই শুরু করতে পারিনি এবং ঠিকমতো এগোতে পারছিলাম না কারণ আমি কী বোঝাতে চাইছি আপনি যদি তা জানেন–
ঠিক আছে এখন বরং গোল্ডেন রিট্রিভারের কথা বাদ দিন, এখন শুধু হাতিদের ওপর মনোযোগ দিন।
.
সিলিয়া
বাইরে ম্যাটের ওপর একটি মেয়েকে দাঁড়াতে দেখে মিসেস অলিভার হতভম্বের মতো তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে দেখলেন এবং মনে মনে ভাবলেন এই তাহলে সিলিয়া। মিসেস অলিভারের মতো অনুভূতি অন্য আর কারোর মধ্যে দেখা যায় না। জীবন এবং জীবনশক্তির প্রভাব খুবই শক্তিশালী।
তিনি তাকে দেখে যেন ভাবছিলেন এ যেন অন্য এক মেয়ে যার সম্বন্ধে অন্য কিছু ভাবা যেত। হয়তো আগ্রাসী নয়তো কঠিন বা একেবারেই বিপজ্জনক। যে সব মেয়েদের জীবনে একটা উদ্দেশ্য থাকে সেই সব মেয়ে হয়তো সংঘর্ষের পথে নিজেকে উৎসর্গ করে এবং হয়তো বা তার পিছনে কোনো কারণ থাকতে পারে। অবশ্যই আকর্ষণীয় বটে।
আরে এসো এসো ভেতরে এসো। অনেক দিন বাদে আবার তোমার সাথে আমার দেখা, খুব সম্ভবত কোনো একটা বিবাহ অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম কনের সহচরী হয়ে, এবং তোমার পরনে ছিল সিফনের পোশাক, এবং কিসের যেন বড়ো বড়ো গুচ্ছ ঠিক মনে পড়ছে না। কি ছিল সেটা, অনেকটা গোল্ডেন রডের মতন দেখতে?
খুব সম্ভব গোল্ডেন রডই ছিল, বলল সিলিয়া র্যাভেন্সক্রফট। আমরা অনেক হাঁচি দিয়েছিলাম–ঠিক তৃণাদি বা বালি নাকে ঢুকে গেলে যে অবস্থা হয় ঠিক আমাদের হাঁচি দেখে–সেরকমই মনে হয়েছিল। মারথা লেবাহন তাই না? সে এক যেন ভয়ঙ্কর বিয়ের আসর। এমন বিশ্রী সহচরীর পোশক আগে কখনও দেখিনি এবং অমন বিশ্রী পোশাক কখনও পড়িনিও।
হ্যাঁ, ঠিক অন্যদের থেকে একেবারে আলাদা এবং আমি বলব, তোমাকেই সবচেয়ে ভালো দেখাচ্ছিল।
সেটা আপনার চোখে ভালো লাগা। মোটেই আমার কাছে ভালো লাগেনি, সিলিয়া বলল। একটা চেয়ারে মিসেস অলিভার তাকে বসতে বললেন এবং বললেন, শেরি না অন্য কিছু, তুমি কী পছন্দ করো?
না, শেরিই আমি পছন্দ করি।
ও আমি ভেবেছিলাম তোমার এটা বিশ্রী লাগবে। মিসেস অলিভার বললেন, হঠাৎ তোমাকে কেন ডেকেছি জানো?
না, আমি জানি না। নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ ব্যাপারে।
আমি যে খুব একটা বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন ধর্ম মা নই এই ব্যাপারে আমার মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।