ছেড়ে দিন ম্যাডাম, পোয়ারো বললেন, এ-ধরনের প্লট বা উপন্যাসে রূপ দেওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ, আর তাছাড়া মনে হয় না এর জন্য তেমন কোনো ভালো কারণ আছে।
কিন্তু ভালো যে কারণ সেই সেই ব্যাপারে আমি একেবারে নিশ্চিত হতে চাই।
পোয়ারো মন্তব্য করলেন, এটা তো মানুষের স্বাভাবিক কৌতূহল এবং তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন এবং বললেন যে, ইতিহাসের কাছে আমরা কত না ঋণী, জানি না কে প্রথম এই কৌতূহল আবিষ্কার করেছিল। শোনা যায় বিড়ালের সাথে এর সম্পর্ক আছে। আবার এই কৌতূহলই গ্রাস করে বিড়ালকে।
বাধা দিয়ে মিসেস অলিভার বললেন, ঠিক করে আমাকে বলুন তো আমি একজন ভয়ঙ্কর দীর্ঘনাসা পার্কার? আপনি কী মনে করেন?
না, আমি তা মনে করি না। সব কিছু খতিয়ে দেখলে আমার তো মনে হয় না আপনি একজন বিরাট কৌতূহলী মহিলা, বললেন পোয়ারো। কিন্তু আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সাহিত্যসভায় আপনি বেশ অস্বস্তিবোধ করেছেন, খুব বেশি দয়া ও প্রশংসা আপনার সহ্য হয়নি, বরং একটা বিশ্রী উভয়সঙ্কটে পড়ে গেছেন এবং এক ব্যক্তিকে আপনার ভীষণ অপছন্দ যিনি আগ বাড়িয়ে আপনার কাছে ছুটে এসেছিলেন।
হ্যাঁ, উনি অত্যন্ত ক্লান্তিকর মহিলা যাকে একদম পছন্দ করা যায় না।
অতীতে এই স্বামী-স্ত্রীর খুন হওয়ার ব্যাপারটা কেমন যেন রহস্যজনক। কারণ আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে তাদের দুজনের মধ্যে বেশ ভালো সদ্ভাব ছিল। ঝগড়াঝাটির কোনো লক্ষণ ছিল না, অন্তত আপনার মতে কেউ কখনও সেরকম ঘটনা শোনেনি অথবা কাগজে পড়েনি।
তারা গুলিবিদ্ধ হয়, এটা মনে হয় একটা আত্মহত্যার চুক্তি হতে পারে। আমার মনে হয় প্রথমে পুলিশ এই রকমই একটা কিছু ভেবে থাকবে। অবশ্য বহুবছর পরে কেউ কখনও অন্য কোনো ব্যাপার যদি থাকেও সেটা খুঁজে বার করতে পারে না।
হ্যাঁ, ঠিকই। তবে আমার মনে হয় এ ব্যাপারে হয়তো কিছু একটা হদিশ পেলেও পেতে পারি, বললেন পোয়ারো।
তার মানে আপনি কী মনে করেন–উত্তেজিত বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে আপনি পেয়েছেন?
বেশ তাই হবে। তবে উত্তেজিত বন্ধুবান্ধব আমি বলব না, অবশ্যই কিছু জ্ঞানী বন্ধুবান্ধব, যারা নির্দিষ্ট কয়েকটা রেকর্ড সংগ্রহ করতে পারে এবং অপরাধ অনুষ্ঠানের সেই সময়ে তদন্তের রিপোর্ট দেখতে পারে। আবার সেইসব রেকর্ডের ভেতর থেকে কিছু ফাঁক ফোকর বার করলেও করতে পারি।
মিসেস অলিভার আশান্বিত হয়ে বললেন, সেটা যদি খুঁজে বার করতে পারেন তাহলে আমাকে বলবেন।
হ্যাঁ, পোয়ারো বললেন, আমার ধারণা এই কেসের পুরো ঘটনা যে ভাবেই হোক আপনাকে জানাতে পারব বলে মনে হয়। হয়তো বা একটু সময় লাগতে পারে।
দেখছি, আপনাকে আমি যা করতে বলেছি আপনি যদি সেটা করেন, অবশ্য নিজেকেও মেয়েটির সাথে দেখা করতে হবে এবং জানতে হবে এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানে কিনা, ওকে এও জিজ্ঞেস করব ওর শাশুড়িকে জ্ঞান দেব কিনা মানে অন্য কোনো ভাবে আমি ওকে সাহায্য করতে পারি কিনা। আর হ্যাঁ, যে ছেলেটিকে ও বিয়ে করতে যাচ্ছে তাকে দেখার ইচ্ছা আমার আছে।
চমৎকার! তা ঠিক, বললেন পোয়ারো এবং আমার ধারণা মিসেস অলিভার বললেন, যদি কিছু লোক–হঠাৎ মাঝপথে থেমে গেলেন এবং ঐ তুলে তাকালেন তিনি।
এরকুল পোয়ারো তার অভিমত জানালেন যে, এটা একটা অতীতের ঘটনা। সেই সময়ে এর পিছনে একটা কারণ থাকলেও থাকতে পারে, এবং কী সেই কারণ আর কখন থেকে সেটা ভাবতে শুরু করেন? একটা বিস্ময়কর কিছু বলে মনে না হলে এক্ষেত্রে সেটা অনুপস্থিত এবং কেউ সেটা মনেও রাখে না।
না, সে কথা খুবই সত্য, বললেন মিসেস অলিভার। সেই সময়ে খবরের কাগজগুলোতে বেশ কিছুদিন ধরে এই কেসের ব্যাপারে অনেক লেখালেখি হয়। তারপর সব ক্ষেত্রে যা হয় একটু একটু করে ফিকে হয়ে একেবারে চাপা পড়ে যায়। এবার ঘটনাটা একটু ঝালিয়ে নেওয়া যাক। আজ থেকে পাঁচ কিংবা ছয় বছর আগে অন্য আর একটি মেয়ে সেই মেয়েটির মতন তার বাড়ি থেকে একা একা বেরিয়ে পড়ে। হঠাৎ একটি ছেলে বালির স্তূপের ওপর খেলা করার সময় একটা পাথরের স্কুপের খাঁজে মেয়েটির মৃতদেহ আবিষ্কার করে। হয়তো তখন সেখান থেকে বালির স্তূপ সরে গিয়ে থাকবে। পাঁচ কিংবা ছয় বছর পরের ঘটনা।
পোয়ারো বললেন, সে কথা সত্যি, এবং আরও বললেন যে মৃত্যুর দীর্ঘদিন বাদে সেই মৃতদেহ পাবার পর এবং সেই বিশেষ দিনটিতে কী ঘটেছিল এবং লিপিবদ্ধ করে রাখা নানা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে দেখলে খুনির সন্ধান নিশ্চয়ই পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে কাজটা খুবই কঠিন হবে তার কারণ যে, এর উত্তর হয় একটা নয় দুটোও হতে পারে। হয় স্বামী তার স্ত্রীকে অপছন্দ করতেন তাই তার হাত থেকে রেহাই পেতে চেয়েছিলেন। কিংবা তাঁর স্ত্রী তাকে ঘৃণা করতেন। আবার এমন ঘটনাও হতে পারে যে ভদ্রমহিলার অন্য কোনো প্রেমিক ছিল। সুতরাং এর থেকে মনে করে নেওয়া যেতে পারে যে, এটা একটা আবেগপ্রবণ অপরাধ। কিংবা ভিন্ন ধরনের কিছু। সুতরাং এ কেসের রহস্য খুঁজতে গিয়ে সফল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এবং হয়তো কিছুই পাওয়া যাবে না সেই সময় পুলিশ যদি কোনো কিছুর হদিশ করতে না পারে। তাহলে খুব সম্ভবত এই কেসের মোটিভ জানা যাবে না। অতএব সেই নদিনের বিস্ময়ের মতোই এটা থেকে যাচ্ছে।