যাইহোক, সাহিত্যিকদের ভোজসভায় আপনি গিয়েছিলেন এবং সেটা আপনি খুব বেশি উপভোগ করতে পারেননি।
মধ্যাহ্নভোজ উপভোগ করেছি ঠিকই, কিন্তু ঠিক তার পরেই…
যেমন করে চিকিৎসক তার রোগীর কাছ থেকে রোগের লক্ষণ জানতে চায় ঠিক তেমন একজন চিকিৎসকের মতো করুণা দেখিয়ে পোয়ারো বললেন, লোকেরা আপনাকে কিছু বলে। ওহো ভালো কথা ওরা যখন আমাকে কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, হঠাৎই তাদের মধ্যে কর্তৃত্ব করার মতো একজন বিরাট কাজের মহিলা সব সময় যিনি প্রত্যেকের ওপর কর্তৃত্ব করতে ভালোবাসে, এবং যিনি আপনাকে দারুণ একটা অস্বস্তিতে ফেলে দিতে পারেন। জানেন কেউ যেমন প্রজাপতি ধরার জন্য লাফিয়ে ওঠে সেইরকমভাবে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তার কেবল দরকার ছিল প্রজাপতি ধরে রাখার জন্য একটি জাল। তিনি আমার চারপাশে একবার প্রদক্ষিণ করে একরকম ধাক্কা দিয়ে আমাকে একটা সোফার ওপর বসিয়ে দেন এবং তারপর কথা বলতে শুরু করে দেন, আমার ধর্মকন্যার প্রসঙ্গ নিয়ে।
আহ, হ্যাঁ আপনার তো একটি ধর্মকন্যা এক সময় আপনার খুব প্রিয় ছিল, তাই না?
মিসেস অলিভার বললেন, বেশ কয়েক বছর ওকে আমি দেখিনি এবং সবার সঙ্গে আমার বড়ো একটা যোগাযোগও হয় না। তারপর তিনি আমাকে একটা ভীষণ চিন্তার প্রশ্ন করলেন এবং তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন–ওহে প্রিয়, সেটা বলতে যে কত কষ্ট আমার পক্ষে–না, তা নয়, খুব নম্র গলায় বললেন পোয়ারো, এটা খুবই সহজ, এবং প্রত্যেকেই সবকিছু বলে থাকে আমাকে। দেখুন আমি কেবল একজন বিদেশী, তাই তাতে কিছু এসে যায় না।
বেশ তো, আপনাকে বলা যখন সহজ বলছেন, মিসেস অলিভার তখন বললেন, দেখুন, তাহলে বলি মেয়েটির বাবা ও মার সম্পর্কে খোঁজখবর নেন আমার কাছ থেকে। এবং তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন মেয়েটির মা তার বাবাকে খুন করেছিল, নাকি তার বাবা তার মাকে খুন করেছিল।
আমাকে ক্ষমা করবেন, বলে উঠলেন পোয়ারো। হ্যাঁ, আমি জানি পাগলের প্রলাপের মতো শোনাচ্ছে, ঠিকই আছে আমি ভাবলাম এটা বুঝি পাগলামো।
আপনার ধর্মকন্যার মা তার বাবাকে খুন করেছিল অথবা তার বাবা তার মাকে খুন করেছিল?
তা ঠিক, বললেন মিসেস অলিভার, কিন্তু এটা কি ঘটনা? যে তার বাবা তার মাকে খুন করেছিল নাকি তার মা তার বাবাকে খুন করেছিল?
ভালো কথা ওদের দুজনকেই গুলিবিদ্ধ দেখতে পাওয়া যায়, মিসেস অলিভার আরও বলেন যে, পাহাড়ের একেবারে চূড়ায়, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না, হয় সেটা কর্নওয়াল নয় করসিকায়। সেইরকমই একটা জায়গা হবে।
তাহলে সেটা সত্য বটে, পরে তিনি কী বললেন? ওঃ হ্যাঁ, ওই অংশটা সত্য। তা বেশ কয়েক বছর আগে ঘটনাটা ঘটেছিল। হ্যাঁ ভালো কথা, আমি কিন্তু বলতে চাই–আমার কাছে এলেন কেন?
কারণ আপনি একজন অপরাধ কাহিনির লেখিকা কোনো সন্দেহই নেই এবং তিনি নিশ্চয়ই বলে থাকবেন যে সমস্ত অপরাধের ব্যাপারে আপনি জানেন, এটাই কি সত্য, যা ঘটেছিল? বললেন পোয়ারো।
ওঃ হ্যাঁ, এটা সেরকম কিছুই নয় যা এ করতে পারে। অথবা ধরুন আপনার মা আপনার বাবাকে হত্যা করল, কিংবা আপনার বাবা আপনার মাকে হত্যা করল, সে সব ক্ষেত্রে ঠিক মতো কীভাবে অগ্রসর হওয়া যায়। এটা এমনিই একটা কিছু যা সত্যি সত্যি ঘটেছিল, আমার কী মনে হয় জানেন? এ ব্যাপারে আপনাকে সব খুলে বলাই ভালো। কারণ এখন আমি সবকিছু মনে করতে পারি না, সেই সময় সেটা কিন্তু খুবই পরিচিত ছিল। আমার মনে হয় সে প্রায় বছর বারো আগের ঘটনা হবে। ওই যে বললাম লোকগুলোর নাম কিন্তু আমি মনে করতে পারি কারণ আমি তাদের চিনতাম। স্ত্রী আমার সঙ্গে স্কুলে ছিল, আমরা দুজনে বন্ধুর মতন ছিলাম। সেটা ছিল একটা সুপরিচিত মামলা, আর জানেন কেসটা এতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, সমস্ত খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল। স্যার অ্যালিস্টার র্যাভেন্সক্রন্ট এবং লেডি র্যাভেন্সক্রক্ট, তাঁরা অত্যন্ত সুখী দম্পতি। এবং ভদ্রলোক ছিলেন একজন কর্নেল অথবা জেনারেল, তারা সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছিল, তারপর তারা কোনো এক জায়গায় আমি ঠিক মনে করতে পারছি না সম্ভবত সেটা বিদেশ হবে এই বাড়িটা কেনে। হঠাৎই একদিন সমস্ত কাগজে এই কেসের খবর বেরুল। অন্য কেউ তাদের খুন করেছে কিনা অথবা তারা পরস্পরকে হত্যা করেছিল কিনা এখন সেটাই একটা প্রশ্ন। এবং আমার যতদূর মনে হয় সেই রিভলবারটা বছরের পর বছর ধরে তাদের বাড়িতে ছিল।
সেই সময় তিনি যা শুনেছিলেন এক এক করে অল্পবিস্তর সব খুলে বললেন পোয়ারোকে, এবং তিনি মাঝে মাঝে বিশেষ বিশেষ জায়গায় এক এক সময় মিলিয়ে নিচ্ছিলেন।
সব শেষে তিনি বলে উঠলেন, কেন সেই ভদ্রমহিলা এ খবর জানতে চাইছেন?
হ্যাঁ, আমিও সেটা জানতে চাই। মিসেস অলিভার বললেন, কারণ আমি সিলিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি ও এখনও লন্ডনেই আছে। এবং আমার ধারণা সে এতদিনে ডিগ্রি পেয়ে গেছে। হয় কেমব্রিজ নয় অক্সফোর্ডে থাকে। সেখানে হয় লেকচারার হিসাবে নয়তো অন্য কোথাও শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত, ও অত্যন্ত আধুনিকা। বড়ো বড়ো চুলওয়ালা পুরুষের সঙ্গে ভয়ঙ্কর পোশাকে মেলামেশা করে। তবে আমার মনে হয় না যে ও ড্রাগে আসক্ত। কখনও কখনও খবর পাই ওর কাছ থেকে। ও আমাকে খ্রিস্টমাসের কার্ড এবং ওই রকম কিছু জিনিস পাঠিয়ে থাকে। ওহো হা, কেউ কি তার ধর্মসন্তানদের কাছ থেকে সব সময় এটা আশা করে না? ওর বয়স তো এখন সবে পঁচিশ কিংবা ছাব্বিশ।