আপনার সঙ্গে দেখা হলেই সব সময়ে আমি খুশি হয়ে থাকি ম্যাডাম।
–জানি না, বললেন মিসেস অলিভার। আপনাকে বিরক্ত করতে হয়তো যেতে পারি, অথবা কিছু জিজ্ঞেস করতে। এবং আমি জানতে চাই কিছু একটা ব্যাপারে আপনি কি কিছু মনে করেন?
যে কোনো লেডিকে যখন তখন সেকথা বলতে আমি সবসময়েই প্রস্তুত, বললেন পোয়ারো।
একটা কিছু উদয় হয়েছে, বললেন মিসেস অলিভার। তবে একটা কিছু ক্লান্তিকর যাকে বলে আর আমি কিছুই জানি না সে ব্যাপারে কি করতে হবে?
তাহলে আপনি আসুন এবং আমার সঙ্গে দেখা করুন। আমি প্রশংসিত এবং অতিরঞ্জিত ভাবে প্রশংসিত।
মিসেস অলিভার জানতে চাইলেন, কোন সময়টা হলে আপনার ভালো হয়?
পোয়ারো বললেন, নটার সময়। আমরা দুজনে এক সঙ্গে কফি খাব কিন্তু তা নাহলে যদি আপনি গ্রেনাডাইন কিংবা সিরাপ পছন্দ করেন। কিন্তু যত দূর মনে পড়ছে আপনি আবার এসব পছন্দ করেন না।
জর্জ, পোয়ারো তার ভৃত্যকে ডাকলেন এবং বললেন, আজ রাতে মিসেস অলিভার আসছেন আমাদের বাড়িতে, তাকে অভ্যর্থনা জানাতে হবে তাঁর কী পছন্দ আমি ঠিক নিশ্চিত নই, তবে আমার ধারণা কফি আর এক ধরনের মদ হলেই চলবে।
আমি ওঁকে ক্যারেশ পান করতে দেখেছি স্যার।
তাহলে তো খুব ভালোই হয় বললেন পোয়ারো। তবে তাই হোক–
একেবারে ঠিক সময়ে এলেন মিসেস অলিভার, পোয়ারো যখন নৈশভোজ সারছিলেন তখন তিনি বিস্মিত হয়ে ভাবছিলেন যে তার কাছে মিসেস অলিভারের আসার উদ্দেশ্য কি হতে পারে এবং তিনি যা করতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে তার সন্দেহই বা কেন? তিনি কি কোনো কঠিন সমস্যা নিয়ে তার কাছে আসছেন অথবা কোনো অপরাধের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চান? পোয়ারো কিন্তু ভালো করেই জানেন মিসেস অলিভারের ক্ষেত্রে অতি সাধারণ কিছু, অথবা অত্যন্ত অস্বাভাবিক জটিল কিছু যে কোনো কিছু হতে পারে। কারণ তার কাছে সবই সমান। ভদ্রমহিলাকে খুবই চিন্তিত দেখে নিজের মনে এরকুল পোয়ারো ভাবলেন, সব সময় সব কাজেই তিনি মানিয়ে নিতে পারেন মিসেস অলিভারের সঙ্গে। হয়তো কোনো কোনো সময়ে তিনি তাকে পাগল করে তোলেন, তা সত্ত্বেও তারা দুজনে একসঙ্গে অনেক অভিজ্ঞতা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার অংশীদার হয়েছেন। সে দিনই সকালে নাকি সান্ধ্য পত্রিকায় তার সম্পর্কে কিছু লেখা তিনি পড়েছেন। তিনি এসে পড়ার আগেই সেটা তাকে মনে করতে হবে। সবে মনে করছেন সেই সময় তাঁর আগমন বার্তা ঘোষিত হল।
ঘরের ভেতর ঢুকলেন তিনি এবং সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলেন পোয়ারো, তার উদ্বেগের বিশ্লেষণ যথেষ্ট সত্য। এবং তার চুলের স্টাইল দেখে মনে হল সময়ের অভাবে হয়তো তাড়াতাড়িতে চুলের মধ্যে হাত চালিয়ে কেশবিন্যাসের কাজটা সেরে নিয়েছেন। তিনি প্রায়ই এরকম করে থাকেন একটু তাড়া থাকলে। যাইহোক তিনি তাকে স্বাগত জানালেন খুশি হয়ে এবং তাকে একটা চেয়ারে বসালেন। তার জন্য নিজের হাতে কাপে কফি ঢেলে দিলেন এবং ক্যারেশ ভর্তি একটা গ্লাস তুলে দিলেন তার হাতে।
আহ। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন এবং বললেন, আমার মনে হয়, আপনি হয়তো ধরে নিয়েছেন, আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি, কিন্তু এখনও…
তা তো আমি নিজেই দেখতে পাচ্ছি এবং কাগজে দেখেছি আজ সব বিখ্যাত বিখ্যাত মহিলা লেখিকারা, সেই সাহিত্যিকদের ভোজসভায় যোগ দিচ্ছেন আপনি। আমি ভেবেছিলাম, আপনি তো কখনও পার্টিতে যান না।
সাধারণত আমি যাই না, বললেন মিসেস অলিভার, এবং ফিরে আর কখনও যাবও না।
সহানুভূতির সঙ্গে পোয়ারো বললেন, মনে হচ্ছে আপনি খুব কষ্ট পেয়েছেন?
মিসেস অলিভারের অস্বস্তির মুহূর্তগুলির সঙ্গে তিনি পরিচিত। এবং তাঁর বই সম্পর্কে কারোর অতিরিক্ত প্রশংসা সব সময়ে তাঁকে অতি ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলে দেয় এবং একসময় তিনি তাকে বলেছিলেন, সঠিক উত্তর কখনও তার জানা থাকে না।
কেন, আপনি কি সেটা উপভোগ করেননি? উত্তরে মিসেস অলিভার বলেন, একটা সময় পর্যন্ত উপভোগ করেছি, তারপরেই একটা ক্লান্তিকর ঘটনা ঘটে যায়।
ও, সেই জন্যই বুঝি আপনি আমার কাছে ছুটে এসেছেন?
হ্যাঁ, কিন্তু সত্যি আমি জানি না কেন এর সঙ্গে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই অথবা বলতে পারি কিছু করার নেই এবং আমার মনে হয় না যে, এ ব্যাপারে আপনি আগ্রহ প্রকাশ করবেন। আর সত্যি কথা বলতে কী আমি নিজেও একেবারেই আগ্রহী নই। এ ছাড়া আমার অন্তত মনে হয়েছে এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবেন সেটা জানতে আপনার কাছে ছুটে আসব না। কিন্তু এসেছি কেন, এবং কী জানতে? জানতে এসেছি, আমার মতন অবস্থায় পড়লে আপনি কী করতেন?
পোয়ারো বললেন, এটা অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন। আমি জানি যে কোনো ব্যাপারে কাজ করব সম্পূর্ণ আমার মতো করে। কিন্তু আপনার মধ্যে কি রকম প্রতিক্রিয়া হবে, অথবা আপনি কীভাবে সেটা সম্পন্ন করবেন, তা আমার জানা নেই। যদিও আমি আপনাকে বেশ ভালোভাবেই জানি।
মিসেস অলিভার বললেন, যথেষ্ট দীর্ঘ সময় ধরে আপনি আমাকে জানেন, আর আপনার নিশ্চয়ই একটা ধারণা হয়ে গেছে
ঠিক কতদিন বলুন তো–এখন থেকে কুড়ি বছর আগে কি?
–ওহো, ও আমি জানি না। কত বছর থেকে আমি খেয়াল করতে পারি না। কোনো তারিখ সেটা মনে করা তো আরও বেশি মুশকিল। তবে আমি জানি সেটা ১৯৩৯ সাল কারণ সেই সময় যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং অন্য তারিখও কিছু জানি কারণ সেইসব তারিখগুলোতে এদিক ওদিক অদ্ভুত অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে যেতে দেখেছিলাম।