এটাতেই হেলেন হতভম্ব হয়েছিল। সেদিন জর্জ মানুষের মুখের চেহারায় পার্থক্যের কথা বলছিল, তারপর হয়ত কোরার কথা মনে পড়তে তার পরিচিত মাথা ডাইনে হেলিয়ে কথা বলার ভঙ্গীটা মনে পড়েছিল, হঠাৎ তার অর্ধসচেতন মনটা থেকে সন্দেহটা উঠে আসে সে পার্থক্যটা বুঝতে পারে। যাইহোক সে কথাটা ভোরে উঠেই অ্যান্টহুইসলকে জানাতে গেছিলো, তুমি গেছিলে পেছনে পেছেনে। অত সকালে কাকে ফোন করতে শুনলে? তারপর কথাগুলো শোনার পর তার মাথায় আঘাত করলে।
আমি এসব কোনোদিন করিনি, গিলক্রিস্ট বলল, সমস্ত ব্যাপারটাই বানানো, মিথ্যে।
খুনের কথাটা বলা অবশ্য তোমার প্রথম ধাপ্পা অন্ত্যেষ্টির দিন, পোয়ারো বললেন, তোমার আরও পরিকল্পনা ছিল। যে কোনো মুহূর্তে গিলফ্রিস্ট স্বীকার করতে রাজী ছিলেন যে তিনি কোরা ও রিচার্ডের কথাবার্তা শুনেছেন। আসলে রিচার্ড যা বলেছিলেন সেটা হল, তিনি, আর বেশিদিন বাঁচবেন না এবং চিঠিতে এই কথাটা কাউকে বলতে বারণ করেছিলেন। নানের ব্যাপারটা ওর আর একটা আবিষ্কার, তুমি সবাইকে বিপথে চালাতে চেয়েছিলে এবং টিমোথিদের সাথে তুমি এখানে আসতে চেয়েছিলে। বিষ খাওয়াটা পুরোনো কৌশল এবং এতেই ইনসপেক্টর মর্টনের সন্দেহ জেগেছিল।
ছবিটার ব্যাপার বলবেন না? রোজামণ্ড বলল।
আস্তে আস্তে পোয়ারো একটা টেলিগ্রাম খুললেন। আজ সকালে আমি মিঃ অ্যান্টহুইসলকে ফোন করে বলেছিলাম, স্টানফিল্ড গ্র্যাঞ্জ থেকে মিঃ এবারেনথীর নাম করে গিলফ্রিস্টের ঘর থেকে ছবিটা নিয়ে আসতে। ওটা লণ্ডনে নিয়ে গিয়ে ওকে গাথরীকে দেখাতে বলেছিলাম, ওপরের পলফ্লেক্সান বন্দরের ছবিটা খুলে ফেলার পর আসল ছবিটা পাওয়া গেছে।
তিনি টেলিগ্রামটা পড়লেন।
এটা নিশ্চিত ভাবে একটা ভারমীয়ার –গাথরী।
হঠাৎ তড়তড়িয়ে কথা বলতে আরম্ভ করল গিলফ্রিস্ট। আমি জানতাম ওটা ভারমীয়ার। কিন্তু কোরা বুঝতে পারেনি, সবসময় আর্ট নিয়ে বকবক করতো কিন্তু আর্টের একরত্তিও বুঝতো না। সবসময় এণ্ডারটি বাচ্চা বয়েসে কি করেছে সেই নিয়ে বকবক করত। একজন যদি দিনের পর দিন একই কথা বকে যায়। আমার কোনো আশা ছিল না ভবিষ্যতের–তারপরে ভারমীয়ার। আমি কাগজে দেখেছিলাম একটা ভারমীয়ার পাঁচ হাজার পাউণ্ডেরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
তুমি পাঁচ হাজার পাউণ্ডের জন্য ওকে এমন নৃশংসভাবে খুন করলে–সুসান বলল।
পাঁচ হাজার পাউণ্ড দিয়ে, পোয়ারো বললে, একটা চায়ের দোকান করা যায়।
ঘুরে দাঁড়াল গিলক্রিস্ট।
তাহলে বুঝতে পেরেছেন। আমার কত টাকার দরকার ছিল। তার গলা আবেগে কাঁপছিল।
আমি একটা চায়ের দোকান করতে চেয়েছিলাম, পাম টি নাম দেব ঠিক করেছিলাম।
.
চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ
কিন্তু আমি মোমের ফুলটা সম্বন্ধে বুঝলাম না, রোজামণ্ড বলল। মোমের ফুলটা মিস গিলফ্রিস্টের দ্বিতীয় ফুল, সে বলেছিল মোমের ফুলগুলো ঐ টেবিলটার উপর সুন্দর মানায়। অথচ মোমের ফুলটা সেখানে ছিল না। কারণ হেলেন ওটা ভেঙে ফেলেছিল এবং টিমোথির বাড়ি থেকে গিলফ্রিস্ট এণ্ডারবিতে আসার আগেই ওটা এখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। তাহলে সে ওটা দেখেছে অন্ত্যেষ্টির দিন যখন ও কোরার ভূমিকায় অভিনয় করছিল।
খুব বোকামো করেছেন তো? রোজামণ্ড বলল।
পোয়ারো বললেন, যে যত বুদ্ধিমানই হোক তার সাথে অনেকক্ষণ ধরে কথাবার্তা বললে সে সত্যি কথাটা বলে ফেলবে।
রোজামণ্ড বলল, জানেন আমি মা হতে যাচ্ছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি অভিনয় ছেড়ে আমি শুধু মা হয়ে যাব। এই ভূমিকায় তোমার সুন্দর মানাবে। বলল, সুসান স্যালাটীট টেবিলটা নিয়ে নিল, কিন্তু আমার একটা বাচ্চা হতে যাচ্ছে।
হেলেন বলল, সুসান তার ব্যবসায়ে সফল হবে। হঠাৎ তারপরে বললো, জানেন মিঃ পোয়ারো, রিচার্ড আমার জন্য যে টাকা রেখে গেছে সেটা আমার ভীষণ প্রয়োজন ছিল। আমাদের কোনো বাচ্চা ছিল না বলে ওতে আমরা দুঃখিত ছিলাম। কিন্তু এখন আমি মা হতে চলেছি। এবার আমি আমার ছেলের শিক্ষাদীক্ষায় খরচ করতে পারব।
ঘরে ঢুকে মিঃ অ্যান্টহুইসল বললো, তোমার খুনের আসামী এখন বেশ খোস মেজাজে আছে। জেলে পাঠানোর বদলে ওকে বোধ হয় মানসিক হাসপাতালে পাঠাতে হবে। বেশ আনন্দে আছে আর ভবিষ্যত চায়ের দোকানের পরিকল্পনা করছে সবসময়।
পোয়ারো তার আগের খুনীদের কথা ভাবতে লাগলেন…..।