পোয়ারো প্রশ্ন করল।
ঐ নানরা কি আবার এসেছিল?
হ্যাঁ প্রায় একসপ্তাহ পরে এসেছিল, বোধহয় তদন্তের দিন।
বেশ মিলে যাচ্ছে, পোয়ারো বলল।
নানের ব্যাপারে উৎসাহিত হয়ে পড়লেন কেন?
কারণ নানেরা দ্বিতীয়বার যেদিন গেছিল সে দিন বিষাক্ত ওয়েডিং কেক গিলক্রিস্ট পেয়েছিল।
হাস্যকর অনুমান।
আমি হাস্যকর অনুমান করি না। পোয়ারো বললেন।
.
০২.
পোয়ারো দেখলেন রোজামণ্ড একটা বেঞ্চে বসে আছে। তুমি বোধহয় তোমার বোনের কথা ভাবছ, পোয়ারো ওর পাশে বসলো।
রোজামণ্ড বলল, আমি ভেবেছিলাম চলে গেছেন।
আমি ট্রেনটা মিস করলাম।
কেন?
তুমি ভাবছ কোনো কারণে আমি থেকে গেলাম?
তাই মনে হচ্ছে। ট্রেন ধরার ইচ্ছে থাকলে ধরতে পারতেন।
ম্যাডাম আপনি কি জানেন আমি গ্রীষ্মবাসে আপনার প্রত্যশায় বসে ছিলাম।
কেন আপনি সবাইর বিদায় নিয়েছিলেন, লাইব্রেরী হলে।
হ্যাঁ, আমাকে বলার মত তোমার কিছুই নেই।
না, রোজামণ্ড মাথা নাড়ল, আমাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা চিন্তা করতে হবে।
তুমি চিন্তা করছিলে?
হ্যাঁ, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিতে চাই কোনো একটা ব্যাপারে।
তোমার স্বামীর ব্যাপারে।
সেই রকম।
পোয়ারো বলল : ইনসপেক্টর মর্টন এসেছেন সবার বিবৃতি নিতে কোরার মৃত্যুর দিন কে কি করছিল?
সন্তুষ্টির ছাপ রোজামণ্ডের মুখে।
মাইকেল, বেশ জব্দ হবে। ও ভেবেছে আমি জানি না, ও সেদিন সেই মেয়েটার কাছে গেছিল।
কি করে জানলে?
ও যখন মিথ্যে কথা বলে ওর নামে একটা দাগ পড়ে। ও যখন অফিসারের সাথে ডিনার খেতে যাচ্ছে, তখনই বুঝেছিলাম।
ওঃ ভগবান বাঁচিয়েছেন আমাকে, তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়নি।
তারপরে আমি অস্কারকে ফোন করেছিলাম, লোকে যে কেন এইরকম বোকার মত মিথ্যে কথা বলে।
সে খুব বিশ্বাসযোগ্য নয়, স্বামী নয় তো?
না।
তবে তুমি কিছু মনে কর না।
হা, আমি সেইরকম স্বামী পছন্দ করি যাকে সব মেয়ে ছিনিয়ে নিতে চায়।
ধর তোমার কাছ থেকে কেউ ছিনিয়ে নিল?
এখন ছিনিয়ে নিতে পারবে না, কারণ টাকা, মাইকেলের কাছে মেয়ের চেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষাটাই বড়। আমিই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সিঁড়ি করে দিতে পারি। তারপর বলল : আমায় একটা বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি সেদিন বাজারে যাইনি মাইকেল বুঝতে পেরেছে, রিজেন্ট পার্ক সম্বন্ধে খুব সন্দেহ।
রিজেন্ট পার্কের ব্যাপারটা কি?
আমি একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম সেদিন। মাইকেলের সন্দেহ আমি কোনো পুরুষ বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছিলাম। রিজেন্ট পার্ক সম্বন্ধেও খুব সন্দিগ্ধ।
তারপরে পোয়ারো বলল : তুমি সুসানকে সবুজ স্যালাটীট টেবিলটা দিয়ে দাও।
রোজামণ্ডের চোখ বড় বড় হল।
কেন? আমার ওটা চাই।
জানি আমি, আমার কাছে তোমার স্বামী থাকবে কিন্তু বেচারা সুসানের ছাড়াছাড়ি হবে স্বামীর সঙ্গে।
আপনি বলতে চাইছেন গ্রেগ আঙ্কল রিচার্ড আর আন্ট কোরাকে খুন করেছে–তাই…।
আমি বিশ্বাস করি না।
তাহলে কে করল?
জর্জ আমি শুনেছি আমার বন্ধুর কাছ থেকে জর্জ টাকার ব্যাপারে একটা বিপদে পড়েছিল। আমি জানি জর্জই সম্পত্তির লোভে করেছে। সন্ধ্যে ছটার সময় সেদিন টেলিগ্রামটা এল।
ওটার জন্যই পোয়ারো অনেকক্ষণ থেকে সামনের দরজায় অপেক্ষা করছিলেন।
একটা বিরাট স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন পোয়ারো।
ইনসপেক্টর মর্টন কোথায়? ল্যান্সকম্বকে জিজ্ঞেস করলেন। দুজনের একজন চলে গেছেন। আর একজন বোধ হয় স্টাডিতে আছেন।
ল্যান্সকম্বের কাঁধ জড়িয়ে পোয়ারো বললেন : আমরা প্রায় শেষে এসে গেছি।
অবাক হয়ে বলল ল্যান্সকম্ব : তাহলে আপনি আর সাড়ে নটার ট্রেনে যাচ্ছেন না?
পোয়ারো মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করল : অন্ত্যেষ্টির দিন এখানে পৌঁছে মিসেস ল্যান্স কোয়ানেট প্রথম কি কথা বলেছিল মনে আছে?
হ্যাঁ, বেশ ভালো মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, তুমি কতদিন আমাদের কুটীরে সারাং নিয়ে যাওনি। ঐ বেড়ার ধারে সব ছেলেমেয়েদেরই একটা করে কুটীর ছিল। আমি সারাং নিয়ে যেতাম। কোরা এই খাবারটা খুব ভালোবাসত।
মাথা হেলাল পোয়ারো।
হ্যাঁ, আমি এইরকম কিছু ভেবেছিলাম। পোয়ারো এবারে স্টাডিতে গিয়ে মর্টনের হাতে টেলিগ্রামটা ধরিয়ে দিলেন কোনো কথা না বলে।
পড়ার পর মর্টন বলল, কিছুই বুঝছি না। তোমাকে সবকিছু বলার সময় এসেছে।
মর্টন হাসল।
একটু স্বস্তি দিন তো। আমাকে ঐ মিঃ ব্যাঙ্কস জ্বালিয়ে মারছে। বলেছে ও খুন করেছে। কি মনে হয় ও খুন করেছে? গিলফ্রিস্ট বলেছে রিচার্ড বলেছিলেন তার নিজের ভাগ্নী। ওকি স্ত্রীর হয়ে খুন করেছে? সুসানকে খুনী বলে ভাবতে ইচ্ছে করে না।
আমি তোমায় সব বলছি। এবার এরকুল পোয়ারো তার শ্রোতাদের জমায়েত করছিলেন বড় বসার ঘরটাতে।
পোয়ারো তাঁর জাঁকজমকপূর্ণ বক্তৃতা আরম্ভ করলেন।
দ্বিতীয় বার আমি আবার যাত্রা ঘোষণা করছি। বারটার ট্রেনে যাইনি, এবার ডিনার শেষ করে সাড়ে নটার ট্রেনে চলে যাবো। কারণ এখানে আর কিছু করার নেই।
খালি এইসব বকবক করছে, টিমোথি বললেন কিছু তো করতে দেখি না।
আমি রহস্যের সমাধান করতে এসেছিলাম, পোয়ারো বললেন, রহস্য উদঘাটন হয়ে গেছে। মিঃ অ্যান্টহুইসল যে কথাগুলো আমায় বলেছিলেন সেগুলো আগে বলছি।
প্রথমতঃ মিঃ রিচার্ড এবারেনথী হঠাৎ মারা গেলেন।
দ্বিতীয়তঃ অন্ত্যেষ্টির দিন কোরা ল্যান্স কোয়েনেট বললো ওকে খুন করা হয়েছে তাই না?