বল বল, তাছাড়া?
আমার–আমার শাস্তি পাওয়া উচিত, আমার শাস্তির ব্যবস্থা করুন…?
.
০৪.
দৌড়তে দৌড়তে সুসান এল।
গ্রেগ কোথায় গেল? এখানেই ছিল তো?
হ্যাঁ, সে আমাকে বলতে এসেছিল যে সে-ই রিচার্ড এবারেনথীকে বিষ দিয়েছে।
পোয়ারো বলল : সব বাজে কথা! ওর কথা বিশ্বাস করবেন না।
কেন বিশ্বাস করব না?
কারণ আঙ্কলের মৃত্যুর সময় সে এখানে ছিল না।
সম্ভবতঃ ছিল না। কোরা ল্যান্স কোয়েনেটের মৃত্যুর সময় ও কোথায় ছিল?
লণ্ডনে আমরা দুজনেই ছিলাম।
পোয়ারো বললেন: তুমি সেদিন বিকেলে গাড়ী নিয়ে বেরিয়েছিলে?
তুমি লীচেট সেন্ট মেরীতে গেছিলে?
না না।
পোয়ারো বলল, ম্যাডাম তদন্তের দিন তুমি কিংস আর্মের গ্যারেজে একজন মেকানিকের সাথে কথা বলছিলে, সেখানে আর একটা গাড়ীতে এক বয়স্ক ভদ্রলোক ছিলেন। তিনি উনাকে না দেখলেও উনি তোমায় দেখলেন। সেই মেকানিক বলেছিল তোমাকে আগে কোথাও দেখেছে। সে বলেছিল তুমি কোরার বোনঝি। তাহলে সেকি তোমাকে কোরার কটেজের আশেপাশে আগে দেখেছিল। তদন্তে দেখা গেছে কোরাকে এবং তোমাকে মৃত্যুর দিন বিকেলে লীচেট সেন্ট মেরীতে দেখা গেছে। তুমি সেই কোয়ারীটাতেই তোমার গাড়ী লুকিয়েছিলে। গাড়ীর নাম্বার নেওয়া হয়েছিল।
মিঃ পোয়ারো আপনি আজে বাজে কথা বলছেন। আমি নিজেই ভুলে যাচ্ছি আমি আপনাকে এখানে পাওয়ার জন্য এসেছিলাম।
তোমার স্বামী নয় তুমি খুনটা করেছ স্বীকার করার জন্য? কোরা অন্ত্যেষ্টির দিন যে কথাটা বলেছিল তাতে আমি চিন্তিত হয়েছিলাম, তাই আমি সেদিন বিকেলে লীচেট সেন্ট মেরীতে গেছিলাম। কোরাকে জিজ্ঞেস করতে কেন সে একথা বলল, আমি ওখানে তিনটের সময় পৌঁছে কড়া নাড়ি। কোনো উত্তর না পেয়ে ভেবেছিলাম। আন্ট কোরা কোথাও বেরিয়ে গেছে। তাই আমি আবার লণ্ডনে ফিরে এলাম। খুনের কথা আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।
তোমার স্বামী কেন নিজেকে খুনী বলেছে?
কারণ সে-গলা কাঁপছিল সুসানের।
আগ্রহ ভরে সুসান বলতে লাগল।
গ্রেগ টাকা আয় করতে পারত, আঙ্কল রিচার্ডের টাকা আমাদের প্রচণ্ডভাবে দরকার ছিল। আমি ভেবেছিলাম আমরা নিজেদের ল্যাবরেটোরি করতে পারলে গ্রেগের অশান্তভাব কেটে যাবে।
লোককে কিছু দিলে তার সেটা করার ক্ষমতা নাও থাকতে পারে। এতসব পরেও সে একটা জিনিস চায় না?
কি চায় না।
সুসানের স্বামী হতে।
আপনি নিষ্ঠুর, আপনি কি বলছেন এসব?
যেখানে গ্রেগরী ব্যাঙ্কসের প্রশ্ন সেখানেই তুমি বেপরোয়া, টাকা তুমি নিজের জন্য চাওনি তোমার টাকার প্রচণ্ড দরকার ছিল না।
সুসান রাগের মাথায় বেরিয়ে গেল।
আমি আপনাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাতে এলাম, মাইকেল শেন হাসল।
ওকে পোয়ারো পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
তোমার স্ত্রী একটু অস্বাভাবিক ধরনের, পোয়ারো বলল।
হা, সে সুন্দরী তবে বুদ্ধি-সুদ্ধি একটু কম। হ্যাঁ, চালাকীর ভান করে না। তবে ও জানে সে কি চায়। পোয়ারো বললেন : বেশির ভাগ লোকই এটা জানে না। মাইকেল হাসল, স্যালাটীট টেবিলের ব্যাপারে কী বলছেন?
সম্ভবতঃ পোয়ারো ডাকলেন, তারপরে বললেন, মোমের ফুল।
হা, মোমের ফুল।
মাইকেল হেসে বলল, আপনি একটা অস্বস্তিকর আবহাওয়া দূর করেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ।
আচ্ছা, তুমি রিচার্ডকে কেমন বুঝেছিলে।
উনি আমাকে পছন্দ করেননি।
তুমি জানো তদন্ত করা হয়েছে।
আপনার দ্বারা?
শুধু আমার দ্বারা নয়।
আপনি বলছেন পুলিশ এর মধ্যে আছে?
পুলিশ কোরার মৃত্যুটাকে সাধারণ ভাবেনি।
ওরা আমার সম্বন্ধে তদন্ত করছে?
পোয়ারো বললেন : কোরার সমস্ত আত্মীয়দের সম্বন্ধে খোঁজ নিচ্ছে।
আমি সেদিন একজন অস্কার লুইসের সাথে ডিনার খাচ্ছিলাম। একথা রোজামণ্ডকে বলেছি।
কিন্তু বাস্তবে তা তুমি করনি।
আমি সোরেলের সাথে কেন্টে ছিলাম, আমি অনেক মাইল দূর থেকে কুড়ুল দিয়ে কোরাকে খুন করতে পারি না।
মিস ডেইনটন তা বলবেন তো?
বলবেন নিশ্চয়ই।
তুমি ওর সাথে না থাকলেও ও বলবে তুমি ছিলে।
কি বলতে চাইছেন? মাইকেলের মুখ হঠাৎ রক্তের মত লাল হয়ে উঠল।
.
এয়োবিংশ পরিচ্ছেদ
০১.
চত্বরে পায়চারী করছিলেন দুজন লোক।
ইনসপেক্টর মর্টন বললো, আপনি এখানে তদন্ত করছেন। আপনার চোখের সামনে মিসেস লিওর এই অবস্থা হল।
আমার দোষে নয় উনি লণ্ডনের ল-ইয়ার্ডে ফোন করার সময়–পোয়ারো বললেন।
ফোনে কি বলেছিলেন?
খুব সামান্য, তিনি আয়নায় নিজের মুখ দেখছিলেন।
মর্টন পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল : এ দিয়ে কিছু বুঝতে পেরেছেন?
হাঁ, কি বলতে যাচ্ছিল আমি বুঝেছি।
চমৎকার কি বলতে যাচ্ছিল?
মাপ করবেন, আপনি কি রিচার্ডের মৃত্যুর ব্যাপারে তদন্ত করছেন?
অফিসিয়ালি করছি, তবে সন্দেহ করছি মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের মৃত্যুর সাথে যোগ আছে
তারপরে মর্টন বললে, তুমি কাউকে গ্রেপ্তার করেছ নাকি?
না না, এখনও একজনের চলাফেরা সম্বন্ধে আমাদের একটু সন্দেহ হয়েছে।
মিসেস ব্যাঙ্কস?
হা ও সেদিন গাড়ী করে ওখানে গেছিল।
ওকে গাড়ীটা চালাতে দেখা যায়নি?
না।
তারপরে মর্টন আবার বলল, ভদ্রমহিলা খুব চালাক।
বেশি চালাকী করেই খুনীরা ধরা পড়ে। পোয়ারো বললেন, জর্জ ক্রসফিল্ড সম্বন্ধে আর কিছু জানতে পারলে।
আমার কনভেন্টের মাদার সুপিরিয়রের কাছ থেকে একটা অদ্ভুত খবর পেয়েছি। তিনি বললেন ওদের কনভেন্টের দুজন কোরার মৃত্যুর আগের দিন ওরা কটেজে চাঁদা নিতে গেছিল। ওরা কড়া নেড়ে কারুর সাড়া পায়নি। স্বাভাবিক কারণে কোরা গেছিল এণ্ডারবি আর গিলক্রিস্ট গেছিল বোর্নমাউথে বেড়াতে। ঐ নান দুজন বলেছে ওরা কটেজের মধ্যে নিশ্বাসের ও গোঙানীর শব্দ শুনেছে। আমি নিশ্বাস ও গোঙানীর শব্দ বিশ্বাস করি। খুনের বাড়িতে লোকে ওরকম কল্পনা করে নেয়। কেউ কি কটেজে কিছু খুঁজতে গেছিল। সেদিন হয়ত পায়নি, আবার পরের দিন গিয়ে এই কাণ্ডটা করেছে।