যাওয়া? অ্যান্টহুইসলের গলায় হতাশা, এণ্ডারবিতে যেতে বলছো?
না না, তোমায় লণ্ডনের বেশি দূরে যেতে হবে না। মানসিক চিকিৎসালয়ে ডাঃ পেনরিথের সাথে দেখা করে সদ্য ছাড়া পাওয়া একজন রুগীর ব্যাপারে খোঁজখবর নেবে।
রুগীটা কে?
রুগীর নাম গ্রেগরী ব্যাঙ্কস, খোঁজ করে দেখবে কি ধরনের মানসিক রোগে ও ভুগছিল।
সাবধানে থাকো পোয়ারো।
নিশ্চয়ই, আমি আমার মাথায় বাড়ি খেতে চাই না। আমি সব সাবধানতা নিচ্ছি, চলি।
অন্য প্রান্তে রিসিভার রাখার শব্দ শুনতে পেল পোয়ারো, তারপর সে একটা মৃদু আওয়াজ পেল।
সে তাড়াতাড়ি হলে গেল কাউকে দেখতে পেল না। শব্দ না করে সে সিঁড়ির পেছনে কাপবোর্ডটার কাছে গিয়ে ভেতরটা দেখল। সেই মুহূর্তে একটা ট্রেতে করে ল্যান্সকম্ব টোস্ট আর কফি নিয়ে ঘরে ঢুকল। পোয়ারোকে কাপবোর্ড থেকে বেরোতে দেখে অবাক হল।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকল পোয়ারো। ওর পেছনের দিকটা ল্যান্সকম্ব বিরক্ত দৃষ্টিতে দেখতে লাগল।
বাড়িতে বিদেশী, ল্যান্সকম্বের মনে তিক্ত ভাবনা। মিসেস লিওর মাথায় মারাত্মক আঘাত। জানি না আর কি ঘটবে?
জ্যানেটকে পোয়ারো ঘটনাটার কথা জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল : আমি স্টাডির দরজা খুললাম এবং হুভারের সাথে ভেতরে ঢুকলাম। তারপরেই দৃশ্যটা দেখলাম। পড়ে আছেন তিনি, আমি ভেবেছিলাম মারা গেছেন। ভাবছিলাম এত সকালে ফোন করতে এলেন কেন, যা কোনোদিন করেন না।
কেউ উঠেছিল মনে হয়?
না না মিসেস্ টিমোথি উঠেছিলেন, বরাবরই খুব সকালে ওঠেন। ব্রেকফাস্টের আগে বেড়িয়ে আসেন।
মড উঠে পড়েছিল, আর তরুণ তরুণীরা তখনও ঘুমোচ্ছিল। এমনও তো হতে পারে ওদের মধ্যে কেউ কাজটা শেষ করে আবার শুয়ে পড়েছিল।
পোয়ারো ভাবল, যদি আমি ঠিক হই। তবে প্রায়ই আমার ভাবনা ঠিক হয়। তাহলে কে উঠেছিল বা শুয়েছিল ভেবে কাজ হবে না। প্রথমে আমি প্রমাণ খুঁজব। তারপরে আমি একটা ছোট্ট বক্তৃতা করে দেখব কি ঘটে।
পোয়ারো ফোন করল, শোন অ্যান্টহুইসল, আমি যে কাজটা তোমায় দিলাম সেটার কথা ভুলে যাও। কেউ শুনেছে সে কথা? এবার আসল কাজের কথা বলছি। তুমি এবার ট্রেনে করে টিমোথি এবারেনথীর বাড়ি চলে যাও।
কিন্তু টিমোথি আর মড তো এণ্ডারবিতে আছে। হ্যাঁ ঠিক বলেছ, এখনও বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য জোনস নামে একজন মেয়ে আছে। তোমাকে ঐ বাড়ি থেকে একটা জিনিস আনতে হবে।
তা হয়ত হবে। কিন্তু তুমি নিজে গিয়ে তো নিয়ে আসতে পার?
তা সম্ভব নয়, আমি একে অচেনা তারপরে বিদেশী। ওর সন্দেহ হবে।
তোমাকে সন্দেহ করবে না।
কি জিনিস?
ওকে পোয়ারো বলে দিল।
কি করব ওটা নিয়ে?
তুমি ওটা লণ্ডনের এলম গার্ডেনেসে নিয়ে যাবে। ঠিকানাটা নিয়ে নাও।
হেলেনের কি বলার ছিল জানা যেত!
পরে ব্যাখ্যা করব। তবে আমি নিশ্চিত, হেলেন আয়নায় কি দেখেছিল?
.
০২.
ব্রেকফাস্টের আবহাওয়া ভারী। টিমোথি আর রোজামণ্ড ছাড়া সবাই উপস্থিত থাকলেও কেউ খেতে পারল না।
জর্জ বলল, আশা করি আন্ট হেলেন ভালো হয়ে উঠবেন। ডাক্তাররা সব ব্যাপারেই মুখ লম্বা করে।
সুসান বলল, অত সকালে আন্ট হেলেন কাকে ফোন করছিলেন?
মড বলল, বোধহয় অসুস্থ বোধ করে ডাক্তারকে ফোন করছিলেন।
রোজামণ্ড বিরক্ত মুখে ঘরে ঢুকল।
আমি মোমের ফুলগুলো দেখতে পাচ্ছি না। সেগুলো আঙ্কল রিচার্ডের অন্ত্যেষ্টির দিন টেবিলের উপর ছিল। সুসান বলল, তুমি মোমের ফুলের কথা ভাবছ আন্ট মারাত্মক আঘাত নিয়ে নার্সিংহোমে শুয়ে আছে।
ওগুলো সম্বন্ধে ভাবব না কেন? আমি আর মাইকেল কালই চলে যাচ্ছি।
সেই মুহূর্তে ল্যান্সকম্ব ঢুকল।
জর্জ উঠে পড়ে বলল, আমাদের হয়ে গেছে, ল্যান্সকম্ব আমাদের বিদেশী বন্ধু কোথায়?
উপরে ওর ঘরে কফি আর টোস্ট খাচ্ছেন। রোজামণ্ড জিজ্ঞেস করল, ল্যান্সকম্ব তুমি জান মোমের ফুলগুলো কোথায় গেল?
মিসেস লিও অসাবধানে ভেঙে ফেলেছেন।
ও এই ব্যাপার।
ওগুলো বোধহয় সিঁড়ির পেছনে কাপবোর্ডটাতে আছে।
আমি গিয়ে দেখছি, মাইকেল চল না। আমার অন্ধকার কোণে যেতে ভয় করছে। আন্ট হেলেনের ঐ অবস্থা হওয়ার পর থেকে….
মড গম্ভীর গলায় বলল : তুমি কি বলতে চাইছ রোজামণ্ড?
ওর মাথায় কেউ বাড়ি মেরেছে তাই না?
তীক্ষ্ণস্বরে গ্রেগরী ব্যাঙ্কস বলল : তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে গেছেন। রোজামণ্ড হাসল।
তোমাকে উনি বলেছেন? ওকে নিশ্চয়ই মারা হয়েছে। জর্জ বলল : রোজামণ্ড তুমি এমনভাবে কথা বোল না।
না না সবই চক্রান্ত, রোজামণ্ড বলল। বাড়িতে একজন রহস্যসন্ধানী সূত্র খুঁজে বেড়াতেন। রিচার্ড এবারেনথীকে বিষ দেওয়া হয়েছে, আন্ট কোরাকে কুড়ুল দিয়ে মারা হল। মিস গিলক্রিস্টকে ওয়েডিং কেকের মধ্যে বিষ দিল কেউ, আন্ট হেলেনের মাথায় কেউ বাড়ি দিয়ে মারল। সব কিছুর মধ্যে একটা সংযোগ আছে। আমরা কোনোদিন মারা পড়তে পারি।
সুন্দরী রোজামণ্ড তোমায় কেউ মারবে কেন? জর্জ জিজ্ঞেস করল।
চোখ বড় বড় করল রোজামণ্ড।
কারণ আমি অনেক কিছু জানি। সে বলল।
কি জান? মড আর গ্রেগরী জিজ্ঞেস করল।
ভাবশূন্য হাসি হাসল রোজামণ্ড। আপনারা সবাই জানতে চান না? সে বলল, চল মাইকেল।
.
দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ
০১.
পোয়ারো এগারটার সময় লাইব্রেরী ঘরে একটা মিটিং ডাকল। সবাই উপস্থিত ছিল। পোয়ারো সবার মুখে একবার করে চোখ বোলালো।