খাওয়া শেষ হয়ে গেলে ল্যান্সকম্ব বলল, আলো দেওয়া হয়েছে লাইব্রেরিতে। কফি দেওয়া শেষ করে ল্যান্সকম্ব দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল।
দু একটা সাধারণ কথার পর সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাল অ্যান্টহুইসলের দিকে। ঘড়িটা দেখে নিয়ে তিনি বললেন :
আমায় তিনটে তিরিশের ট্রেন ধরতে হবে। অনেকেই বোধহয় ঐ ট্রেন ধরবেন।
সবই হয়ত জানেন আমিই রিচার্ডের উইলের একজিকিউটার—
কোরা বলল, তাই নাকি? আমি জানতাম না। দাদা আমার জন্য কিছু রেখে গেছেন?
মগ এবারেনথী গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল : ও যদি নতুন না করতো তাহলে কি হত।
সমস্তটাই বোধহয় টিমোথি পেয়ে যেত।
অ্যান্টহুইসল বললেন, আমার পরামর্শ মত ও আর একটা নতুন উইল করল। তবে প্রথমে সে পরবর্তী পুরুষের লোকদের ভালো করে চিনে নিতে চেয়েছিলো।
সুসান বলল, তিনি প্রথমেই জর্জকে ও আমাকে নিয়ে পড়লো। তারপর রোজামণ্ড এবং মাইকেলকে।
আমি আপনাদের সবারই কাছে উইলের এক কপি করে পাঠিয়ে দেবো, আমি এখন পড়ে শোনাতে পারি। সংক্ষেপে বলছি : ল্যান্সকম্বের জন্য একটা মোটা বার্ষিক ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ স্টেটের একটা বিরাট অংশকে দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভাগগুলো সমান। চারটে অংশ পাবে টিমোথি, জর্জ ক্ৰন্সফিল্ড, সুসান ব্যাঙ্ক এবং রোজামণ্ড শেন। বাকি দুটো অংশ ট্রাস্ট হিসেবে রাখা হয়েছে। এ ট্রাস্টে যা আয় হবে তার এক অংশ তার ভাই লিওর বিধবা স্ত্রী হেলেন পাবে আর একটা অংশ পাবে মিসেস্ কোরা ল্যান্স কোয়েনেট। ওরা সারা জীবন এই ট্রাস্টের আয় পাবে। তাদের মৃত্যুর পরে উপরোক্ত চারজনের মধ্যে এই ট্রাস্ট ভাগ করে দেওয়া হবে।
অ্যান্টহুইসল বললেন, খুব অসুস্থ হলেও ও যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে কেউ আশা করেনি। ডাক্তারও অবাক হয়ে গেছে।
বিস্ময়ে কোরা বড় বড় চোখ করে সবার দিকে তাকাল। সে তার মাথাটা একদিকে ঝুঁকিয়ে বলল :
কিন্তু ওকে খুন করা হয়েছে, করা হয়নি?
.
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
০১.
মিঃ অ্যান্টহুইসল লণ্ডনগামী ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস এ বসে কোরার অস্বস্তিকর কথাটা ভাবছিলেন। যদিও কোরা একটু বোকা।
তিনি ভাবতে লাগেলেন এই মন্তব্যের ফলাফলটা। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে সবাই তাকিয়েছিল। কোরা ওদের অদ্ভুত দৃষ্টির অস্বস্তিবোধ করছিল। এমন সব হাস্যকর কথাবার্তা বলে কোরা মেয়েটা। ওর ধারণা থাকে না কি কথা ও বলছে। এইরকম অপ্রিয় সত্যি কথা–
চিন্তার প্রবাহ হঠাৎ থেমে গেল অ্যান্টহুইসলের। এই দ্বিতীয়বার এই গোলমেলে কথাটা তার কানে এল সত্য। এত অস্বস্তিকর কেন এই কথাটা?
সে একবার এই ভাবেই কীচেন মেডের চেহারা সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিল। মলি ওর মোটা পেটের জন্য পৌঁছতে পারে কীচেন টেবিলে? ওর পেটটা মাস দুই হল ফুলতে আরম্ভ করেছে। চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোরাকে। এবারেনথীর বাড়ির লোকেরা ভিক্টোরিয়া যুগের। কচেন মেড ঐ বাড়ি থেকে চারদিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।
ভীষণ অস্বস্তিকর কোরার এই কথাটাও। কোরার কথার মধ্যে কি এমন আছে যাতে তার অচেতন মনটা তাকে এমন অস্বস্তি দিচ্ছে। তিনি ওর কথা দুটো বিশেষ করে ভাবতে লাগলেন। একটা হল ও যা বলেছিলো তাতে আমি ভেবেছিলাম এবং দ্বিতীয় ওর মৃত্যুটা এত হঠাৎ।
অ্যান্টহুইসল ভাবতে লাগলেন হা ওর মৃত্যুটা হঠাই বৈকি? ডাক্তার বলেছিল মিঃ এবারেনথী যদি স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখেন তাহলে তিনি আরও বছর দুই তিন নিশ্চয় বাঁচবেন।
এতদূর মনে পড়ে অ্যান্টহুইসলের, রিচার্ড কোনো দিন আসতে বলেনি কোরাকে। কোরার প্রথম কথা ও যা বলেছিল তাতে আমি ভেবেছিলাম এই কথাটা ওর কাছে অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক মনে হল।
রিচার্ড ওকে কি বলেছিল? কোথায় বলেছিল? রিচার্ড কি বার্কশায়ারে কোরার কাছে গেছিল অথবা চিঠি লিখে কিছু জানিয়েছিল। ভীষণ অস্বস্তিতে ভুগছিলেন অ্যান্টহুইসল। কোরা মেয়েটি বোকা, সে একটা কথার অন্য রকম মানে করতে পারে। ওর ইচ্ছে হল এক্ষুনি গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসেন কোরাকে–এমন কি কথা বলেছিল রিচার্ড যাতে কোরা বলতে পারল ওকে খুন করা হয়েছে।
.
০২.
একটা তৃতীয় শ্রেণীর কম্পার্টমেন্টে গ্রেগরি ব্যাঙ্কস ওর স্ত্রীকে বলল : তোমার এই গিন্নী বোধ হয় একটু পাগল।
আন্ট কোরা? সুসান বলল, ও একটু সহজ সরল। জর্জ ক্রসফিল্ড বিপরীত দিকে বসেছিল। সে বলল, উনার এই রকম কথা বলা বন্ধ করতে হবে। এতে লোকে কিছু ভেবে নিতে পারে।
রোজামণ্ড বলল : আমার মনে হয় না ঐ রকম পাগলের কথা কেউ শুনবে।
অপ্রত্যাশিতভাবে ওর স্বামী বলল : আমার মনে হয় জর্জ ঠিক কথা বলেছে। লোকেরা অনেক কিছু বলতে পারে।
রোজামণ্ড বলল, তাতে কি হবে? একটা হাসির ব্যাপার ছাড়া আর কি হবে?
হাসি? প্রশ্ন করল চারটে গলা।
হুঁ, বাড়িতে একটা খুন হলে একটা উত্তেজনার ব্যাপার হবে।
রোজামণ্ড বলল–উনি যদি খুন হয়ে থাকেন, তাহলে কে খুন করেছে বলে মনে হয়?
তার দৃষ্টি গাড়ীর চারদিকে ঘুরতে লাগল। রোজামণ্ড বলল, উনার মৃত্যুতে আমাদের সবারই সুবিধে হয়েছে।
রোজামণ্ডের কথা কেউ আর শুনছিল না। সবাই তাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবছিল। গ্রেগরী ভাবছিল, ধরা ও ছেড়ে দেওয়া। এবার আমি টাকাটা আনতে পারি কেউ সন্দেহ করবে না।
সুসান বলছিল, বুড়ো মামা মারা গেল আমার কষ্ট হচ্ছে। মার্টিমার মারা গেল। পঙ্গু হয়ে কষ্ট পেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে এই ভালো হয়েছে।