খুনী ভাবা যায় না হেলেনকে। ভদ্র, শান্ত এবং তার স্বামী রিচার্ডকে খুব ভালোবাসত।
নিঃশ্বাস ফেলল পোয়ারো। সত্যে পৌঁছবার কোনো সোজা রাস্তা নেই।
পোয়ারো বলল, আমি একটা গাড়ীর জানলা থেকে দেখছি তুমি গ্যারেজের একটা মেকানিকের সাথে কথা বলছিলে। তুমি আমায় দেখনি।
গারেজে কখন? কোথায়?
ঠিক এক সপ্তাহ আগে, পোয়ারো ভালোভাবেই কিংস আর্মের গ্যারেজের কথা মনে ছিল তবুও বলল : ঠিক কোথায় বলতে পারছি না।
আপনার রিফিউজিদের জন্য বাড়ি খুঁজেছিলেন?
হা, রিফিউজি বাড়ির জন্য অনেক জায়গা ঘুরতে হয়েছে।
একজন বিদেশীর কাছে বাড়িটা চলে যাচ্ছে তোমার খারাপ লাগছে না ম্যাডাম।
না না, সুসান বলল, আমার মনে হয় না এখানে কেউ থাকতে পারবে। এ বাড়িটা আমার কোনোদিনই পছন্দ হয়নি।
ম্যাডাম। তুমি নিজের একটা বাড়ির কথা ভাবছ, তাই না?
সুসান হাসল।
পোয়ারো বললেন : তুমি সফল হবে, তুমি এগিয়ে যাবে। তোমার ভাগ্য ভালো, তোমার টাকার চিন্তা নেই। অনেকের কাজ করার ক্ষমতা থাকলেও টাকার অভাবে কিছু করতে পারে না।
আমি তাতেও পিছিয়ে যেতাম না, আমার প্ল্যান সফল করায় ঠিক কাউকে যোগাড় করে নিতাম।
তোমার মামা রিচার্ড যার বাড়ি এটা, তিনি বেঁচে থাকলেও তোমায় সাহায্য করতেন।
না না করতেন না।
আচ্ছা তাই নাকি?
তরুণদের পথে বুড়োদের দাঁড়ানো উচিত না, ও করবেন।
পোয়ারো হেসে বলল, আমি বুড়ো তবে আমি তরুণের পথে দাঁড়াই না, আমরা মৃত্যুর জন্য কেউ বসে থাকেনি।
উঃ, কি মারাত্মক কথা।
কিন্তু ম্যাডাম তুমি তো বাস্তববাদী। ওরা বসে আছে বৃদ্ধদের মৃত্যুর আশায়, সে মৃত্যু তাদের বড়লোক করবে না, কিন্তু সুযোগ করে দেবে।
হা সুযোগ, সুযোগই দরকার হয়, সুসান বলল।
পোয়ারো বলল : হা, সুযোগকে দুহাত দিয়ে কাজে লাগাতে হয়।
পোয়ারো গ্রেগরী ব্যাঙ্কের সাথে কথা বললেন, রঙের গন্ধ থেকে এখানে চলে এসেছেন, তাতে খুব ভালো হয়েছে বললেন। মড গিলফ্রিস্টের কথা বললেন, একটা বাড়িতে থাকতে ও নার্ভ পেল না বললেন।
আমার মনে হয় এটা দেরী করে আসা আঘাত।
সম্ভবতঃ।
যুদ্ধের সময় একটা বোমা আমাদের বাড়ি থেকে মাইলখানেক দূরে পড়েছিল, আমার মনে পড়ে টিমোথি।
টিমোথি থেকে পোয়ারো প্রসঙ্গ পরিবর্তন করল।
ঐ দিনে বিশেষ কিছু ঘটেছিল? জিজ্ঞাসা করলেন তিনি।
ঐ দিনে? কোনো দিনে?
যেদিন মিসেস গিলফ্রিস্ট ভয় পেয়েছিলেন।
না, বোধহয় লীচেট সেন্ট মেরী থেকে আসার পর থেকেই ভয় পেতে আরম্ভ করেছে। লীচেট সেন্ট মেরীতেও ভয় পেত না।
বিষাক্ত ওয়েডিং কেক, তারপরে যে ভয় পাবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ও ঐ বাড়িতে কিছুতে ভয় পেয়েছে? ও কি নিজে জানে কিসে ভয় পেয়েছে?
পোয়ারো গিলফ্রিস্ট কে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
ঐ বীভৎস খুনের সময় তুমি ও বাড়িতে ছিলে?
হ্যাঁ ছিলাম, মাপ করবেন, ও ব্যাপারে কথা বলতে আমার ইচ্ছে করে না।
বুঝতে পারছি।
মন দিয়ে পোয়ারো তার কথা শুনতে লাগলেন, তার কথা শেষ হতে সাবধানে পোয়ারো বললেন : তুমি কটেজে একা না থেকে ভালো করেছ।
আমি তা করতে পারতাম না মিঃ পনটার্লিয়ার।
না, আমি শুনলাম তুমি মিঃ টিমোথির বাড়িতে একা থাকতেও চাওনি?
অপরাধী দেখাল গিলফ্রিস্টকে।
আমি ভীষণ লজ্জিত। কিন্তু কেন জানি না আমি ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।
কিন্তু কেন? জানা দরকার–তুমি সবেমাত্র বিষ দিয়ে খুনের চেষ্টা থেকে বেঁচে গেছ।
গিলফ্রিস্ট বললেন, জানি না কে আমায় বিষ দিতে চেয়েছিল।
নিশ্চয়ই ঐ খুনীটা ভেবেছে তুমি এমন কিছু জান যা পুলিশ জানতে পারলে ওর বিপদ হবে।
কিন্তু আমি কি জানি? কোনো নৃশংস ভবঘুরে অথবা কোনো অর্ধোস্পদ।
যদি ভবঘুরে হয়, তাহলে আমার মনে হয় না।
প্লীজ মিঃ পনটার্লিয়ার, হঠাৎ অস্বাভাবিক হল গিলক্রিস্ট, ওরকম কথা বলবেন না। আমি বিশ্বাস করি না।
কি বিশ্বাস কর না?
আমি বিশ্বাস করি না যে এটা—
কথা থামিয়ে ইতস্ততঃ করল।
তুমি কিছু একটা বিশ্বাস কর।
না না, আমি করি না, করি না।
আমার বিশ্বাস তুমি কর, তাই তুমি ভয় পাও, এখনও ভয় পাচ্ছ।
না না এখানে ভয়ের কিছু নেই। এত লোজন এবং সবাই বেশ ভালো।
আমার কৌতূহলকে ক্ষমা করবেন। আমি বুড়ো লোক আমার কৌতূহল একটু বেশি। আমার মনে হয় স্ট্যানসফিল্ড গ্রেঞ্জে তুমি এমন কিছু দেখেছ যা তোমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছে, ডাক্তাররা আজকাল অর্ধচেতন মনকে খুব গুরুত্ব দেন।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, তা বোধহয় দেন।
আমার ধারণা তোমার অন্তনিহিত ভয় কোনো একটা ছোট ঘটনা দেখার পর বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
গিলফ্রিস্ট কথাটা লুফে নিল।
আপনি ঠিক কথা বলেছেন, সে বলল।
তাহলে তোমার মতে এই ব্যাপারটা কি?
এক মুহূর্ত ভাবল মিস গিলফ্রিস্ট তারপর বলল : আমার মনে হয় মিঃ পনটার্লিয়ার এটা সেই নান।
পোয়ারো কথাটা বোঝার আগেই সুসান তার স্বামী এবং হেলেন এল।
নান ভাবতে লাগলো পোয়ারো।
সে সন্ধ্যের দিকে নানের কথাটা নিয়ে আলোচনা করবে ভাবল।
.
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
০১.
খুব পরিচিত হয়ে গেলেন মিঃ পনটার্লিয়ার। পনটার্লিয়ারকে সবাই মেনে নিয়েছে। সাধারণের ধারণা হল এই বিদেশীকে–এই উইকএণ্ডে আসতে বলেনি। কিন্তু যখন এসেই গেছে ওর সাথে মানিয়ে নিতে হবে। কফি খেতে খেতে পোয়ারো ওদের কথাবার্তা শুনছিল।
টিমোথি বলছিল, আমাদের কোনো বাচ্চা নেই। সুতরাং আর বেশি জিনিসপত্র দিয়ে বোঝা বাড়ানো ঠিক না। তবে পারিবারিক কারণে আমি পুরোনো ডেসার্ট সারভিসটা নিয়ে যাব।