মাইকেল বলল : আমি জানি না তুমি কি বলতে চাইছ।
আমাকে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে কথা বলে বোকামো কর।
দেখ রোজামণ্ড।
মাইকেল স্ত্রীর কথায় হতভম্ব হয়ে গেল।
আমরা এই নাটকটা করতে চাই তাই তো?
হ্যাঁ, এইরকম একটা পার্ট আমি সবসময় চেয়েছি।
হা, তাই আমি বলছি।
তাহলে তুমি কি বলছ?
এতে অনেক টাকা খরচ হবে, এত ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।
সে স্ত্রীকে বলল : টাকাটা তোমার আমি তা জানি। যদি তুমি ঝুঁকি নিতে না চাও।
ডার্লিং টাকাটা আমাদের।
শোন ডার্লিং, ইলিন পার্টটায় ভালো অভিনয় করতে হবে।
রোজামণ্ড হাসল।
আমি পার্টটা করতে চাই।
হতভম্ব হল মাইকেল। তোমার মাথায় কি ভর করল?
কিছুই ভর করেনি।
না না, তুমি এখন পাল্টে গেছ, মেজাজী নার্ভাস, কিন্তু কেন?
কিছু না, আমি একটু সাবধানী হতে চাই মাইক।
কিসে সাবধান হবে। আমি সবসময় সাবধানে থাকি।
না তুমি থাক না। তুমি সেদিন অস্কারের কাছে বোকামো করেছ।
রেগে গেল মাইকেল।
আর তোমার ব্যাপার কি? তুমি যেদিন বললে জেনের সাথে কেনাকাটা করতে যাচ্ছ। তুমি যাওনি।
হ্যাঁ, ওটাও বোকামো হয়েছে আমি একটু রিজেন্ট পার্কে গেছিলাম।
রিজেন্ট পার্ক? তুমি কোনো দিন রিজেন্ট পার্কে বেড়াতে যাও না। কেন গেছিলে? তোমার কি কোনো বয়ফ্রেণ্ড হয়েছে। তুমি এখন সবকিছু করতে পার। তুমি এখন অনেক পাল্টে গেছ। কিন্তু কেন?
আমি ভাবছি কি করা যায়…।
টেবিলটা অতিক্রম করে মাইকেল রোজামণ্ডের কাছে এসে আবেগের গলায় বলল : ডার্লিং তুমি জান আমি তোমায় পাগলের মত ভালোবাসি। জড়িয়ে ধরল মাইকেল।
আমি যাই করি না, তুমি সবসময় আমায় ক্ষমা করেছ, করনি; মাইকেল জিজ্ঞেস করল।
হ্যাঁ, করেছি কিন্তু সেদিন আর নেই। এখন আমাকে ভাবতে হবে, প্ল্যান করতে হবে।
কি ভাববে কি প্ল্যান করবে?
বিরক্ত হয়ে বলল রোজামণ্ড : তুমি যা করে ফেলছ তার এখনো শেষ হয়নি। আমরা শুরু করতে যাচ্ছি, পরবর্তী কথা আমাদের ভাবতে হবে না। কোনোটা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
রোজামণ্ড…।
সে বলল, তার দৃষ্টি চলে গেছে দূরে যার মধ্যে মাইকেল নেই।
তুমি কি ভাবছিলে?
ভাবছিলাম লীচেট সেন্ট মেরীতে যাবো কিনা? গিয়ে আন্ট কোরার সঙ্গী সেই মহিলার সাথে দেখা করতাম।
কিন্তু কেন?
সে ইতিমধ্যেই কোথাও চলে যাবে। কোনো আত্মীয়-টাত্মীয়ের কাছে। একটা কথা জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত ওকে যেতে দেবো না।
কি জিজ্ঞেস করবে?
জিজ্ঞেস করব কে কোরাকে মারল?
মাইকেল তাকাল।
তুমি বলছ সে খুনীকে জানে?
রোজমণ্ড বলল : আমি তাই আশা করি, সে ওখানে থাকত।
জানলে পুলিশের কাছেই বলত।
আহা সে এভাবে জানে তা বলছি না, সে বোধহয় নিশ্চিত কারুর সম্বন্ধে। কারণ আঙ্কল রিচার্ড ওখানে গিয়ে কিছু বলে এসেছে। তুমি জান তিনি ওখানে গেছিলেন, সুসান আমাকে বলল।
কিন্তু তিনি কি বলেছিলেন সে হয়ত শোনেইনি।
না না শুনেছে, তার কথা শুনে মনে হচ্ছিল।
হতে পারে না, রিচার্ড এবারেনথী কোনোদিন বাইরের লোকের সামনে ফেমিলির কারুর উপরে সন্দেহের কথা বলবেন না।
সে হয়ত দরজার বাইরে থেকে শুনেছে।
আড়িপাতার কথা বলছ।
হা তাই, এবং সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
ওর দিকে মাইকেল হতাশার দৃষ্টিতে তাকাল।
তুমি করবে?
না না, আমি কোনোদিন গ্রামে গিয়ে কারুর সঙ্গী হতে পারব না। তার চেয়ে আমি মরে যাব।
আমি বলছি তুমি চিঠি পড়তে আর ঐসব। শান্তভাবে রোজামণ্ড বলল : যদি আমি কিছু জানতে চাইতাম তাহলে পড়তাম। সবাই পড়ে, পড়ে না?
স্বামীর দিকে রোজামণ্ড তাকাল।
আমি জানি গিলফ্রিস্ট কৌতূহলের বশে চিঠি পড়ত ও কথা শুনত। আমি নিশ্চিত, সে জানে।
ধরা গলায় মাইকেল বলল : কোরাকে কে খুন করেছে বলে তোমার মনে হয়? আর বৃদ্ধ রিচার্ডকে?
আবার রোজামণ্ড তার দিকে তাকাল।
ডার্লিং অবান্তর কথা বোল না- আমি যতটা জানি, তুমিও জান, তবে সেটা উল্লেখ করার জন্য শক্ত নার্ভের দরকার। তাই আমরা করি না।
.
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ
০১.
এরকুল পোয়ারো লাইব্রেরীর ঘরে আগুনের পাশে বসে সমবেত আত্মীয়দের দেখছিলেন।
সুসানের ওপর তার চোখ। তারপর তিনি তাকালেন জর্জ ক্রসফিল্ডের দিকে, নিজেকে নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট রোজামণ্ডের সাথে কথা বলছিল। তারপর মাইকেলের দিকে, চেহারায় সেই একই আকর্ষণ মাইকেলের। তারপর হেলেনের দিকে–একটু অন্যমনস্ক। তারপর টিমোথির দিকে, তার পাশে মড শক্ত চেহারা, স্বামীর চিরসঙ্গী। এর বাইরে গিলফ্রিস্ট বসে আছে মুখে অপরাধী অপরাধী ভাব।
তিনি একসাথে চেয়েছিলেন ওদের, একসাথে এক জায়গায় পেয়েছেন। তিনি এবার কি করবেন?
তিনি এবার এই কাজ নেওয়ার জন্য একটু অসন্তুষ্টি অনুভব করলেন, কি জন্য? এটা কি হেলেন এবারেনথীর প্রভাব? হেলেন রিচার্ডের মৃত্যুর ব্যাপারে ঠিক জল ঘোলা করতে ইচ্ছুক নয়। এ ব্যাপারটা চাপা পড়ে থাক হেলেন চাইছিল। এই চাওয়ার একটা মানে আছে। কিন্তু তার নিজের মন যেন একমত হচ্ছে তার মনোভাবের সাথে?
আত্মীয়দের সম্বন্ধে মিঃ অ্যান্টহুইসল বেশ প্রশংসনীয় বর্ণনা দিয়েছেন।
পোয়ারো চেয়েছিলেন তার সামনে এদের এনে বুঝতে পারবেন কে এই কাজটা করেছে। যেমন শিল্পীরা কোনো শিল্পী দেখে বুঝতে পারে এ শিল্পী। তেমনি তিনিও ভেবেছিলেন এদের মধ্যে অপরাধীকে চিনতে পারবেন।
ব্যাপরটা কিন্তু অত সহজ নয়।
কারণ তিনি খুনীর তালিকা থেকে এদের সবাইকে বাদ দিতে পারবেন না। যেমন আটকে পড়া ইঁদুর হিংস্র হয়ে ওঠে, সেই ভাবে জর্জ খুন করতে পারে। শান্তভাবে দক্ষ হাতে খুন করতে পারে সুসান তার ভবিষ্যতের প্ল্যান সফল করার জন্য। গ্রেগরি শান্তি চায়, শান্তি পাওয়ার জন্য খুন করতে পারে। মাইকেলের ভবিষ্যত কল্পনার জন্য। রোজামণ্ড কারণ তার জীবন দর্শন ভীষণভাবে সোজা। টিমোথি তার ভাইকে হিংসে করত। এবং তার ভাইয়ের অর্থ ও ক্ষমতার লোভের জন্য, মড? কারণ তার ছেলে হচ্ছে টিমোথি। সে ছেলের জন্য সবকিছু করতে পারে। এমনকি গিলফ্রিস্ট পর্যন্ত খুন করতে পারে যদি চায়ের দোকান আবার ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে।