বসে পড়ে একটা সিগারেট ধরাল সুসান।
মামার সম্পত্তির টাকার ভাগ তোমার খুব দরকার তাই না?
আজকাল কেউ বলতে পারবে না ওর টাকার দরকার নেই।
জর্জ বলল, তুমি দোকানটা ব্যবসার জন্য নিচ্ছ নাকি?
আমি পুরো বাড়িটা কিনব। উপরের ফ্ল্যাট দুটো সহ।
টাকা থাকলে ভালো লাগে, তাই না?
হ্যাঁ, আমার পক্ষে ভালো, আমার প্রার্থনায় দয়া করেছেন।
প্রার্থনায় কি বৃদ্ধ আত্মীয়কে মারা যায়?
সুসান কথাটাই গুরুত্ব দিল না।
জর্জ বলল, এখানে বেশ ভালো ব্যবসা করতে পারবে। হা, সুসান তুমি সফল হবে, ব্যবসাটার কথাটা কি অনেকদিন ধরে মাথায় ঘুরছিল?
হা এক বছরের বেশি।
রিচার্ড মামাকে বলনি কেন? তিনি সাহায্য করতেন।
আমি বলেছিলাম।
তিনি ব্যবসাটার ভবিষ্যৎ বুঝতে পারেননি।
সুসান কিছু বলল না।
জিজ্ঞেস করল জর্জ, গ্রেগ তার এখনকার কাজ ছেড়ে দেবে?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমরা নিজেরাই পেছনের দিকে একটা ল্যাবরেটরি করব এবং ফেস ক্রিমের ফরমূলা নিজেরাই তৈরি করব।
জর্জ বলল, তোমার মধ্যেই এবারেনথীদের গুণের সমাবেশ ঘটেছে। তুমি মেয়ে হয়ে গেলে। যদি ছেলে হতে তাহলে সব সম্পত্তিটাই বাগাতে পারতে।
সুসান বলল, তা বোধহয় হত। একটু থেমে আবার বলতে লাগল : উনি গ্রেগকে পছন্দ করেননি।
ওহ জর্জ ভুরু তুলে বলল, তার ভুল হয়েছে।
হ্যাঁ।
যা হোক তোমার সময় ভালোই যাচ্ছে, সবই প্ল্যানমত হয়ে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলল : আচ্ছা তুমি হেলেনের কাছ থেকে কোনো চিঠি পেয়েছ নাকি? এণ্ডারবি সম্বন্ধে?
হ্যাঁ, আজ সকালে, তুমি পেয়েছ?
হ্যাঁ, কি করছ এ ব্যাপারে।
আমি ভেবেছি পরের উইকএণ্ডে যাব। যদি সবার সুবিধে হয়। হেলেন সবাইকে ডেকেছে।
জর্জ হাসল।
অথবা একজন অন্যজনের চেয়ে দামী কোনো আসবাব নিয়ে নেবে।
সুসানও হাসল।
আমি ওখান থেকে কিছু আসবাব আনব। আমাদের বংশের কিছু স্মৃতি। তুমি ওখানে যাবে তো?
আমি সেখানে গিয়ে ভাগাভাগি দেখব, আর কিছু না?
জর্জ বলল, তুমি যে সবুজ স্যালাটীট টেবিলটা নেবে বলেছিলে। রোজামণ্ড ওটা চাইতে পারে স্টেজ সেটের জন্য।
সুসান বিরক্ত হল।
তুমি এর মধ্যে রোজামণ্ডকে দেখছ?
অন্ত্যেষ্টির পর আমি আর সেই সুন্দরী পিসতুতো বোনকে দেখিনি।
আমি ওকে দুএকবার দেখেছি–কেমন অস্বাভাবিক।
কেন কি ব্যাপার?
না, ওকে একটু কেমন হতাশ মনে হয়।
বেচারা সুন্দরী রোজামণ্ড।
তবে সবাই যতটা ভাবে রোজামণ্ড ততটা বোকা নয়। কোনো কোনো সময় তুমি যা লক্ষ্য করবে না, ও তা লক্ষ্য করবে।
আমাদের আন্ট কোরার মত
হা….
কোরা ল্যান্স কোয়েনেটের প্রসঙ্গ ওঠার পর সাময়িক অস্বস্তির মধ্যে দুজনে পড়ল।
তারপর জর্জ বলল : কোরা ল্যান্স কোয়েনেটের সেই সঙ্গীর খবর কি? ওর জন্য কিছু একটা করা দরকার।
কি বলতে চাইছ?
আমি বলছিলাম কোরার সঙ্গীর পক্ষে আর কোনো কাজ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
এ ভাবনা তোমার মাথায় এসেছে?
হ্যাঁ, লোকে ভীষণ কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। সবাই জানে এই মহিলা একটা কুড়ুল দিয়ে কাউকে খুন করতে পারে না। তবুও এটা শোনার পর ওকে কেউ কাজ দিতে চাইবে না।
তোমার মাথায় এসব চিন্তা এল কেন? তুমি এসব জানলে কি করে?
জর্জ বলল, তুমি ভুলে যাচ্ছ আমি একজন ল-ইয়ার। আমি লোকের অনেক অযৌক্তিক দিক জানি। ভদ্রমহিলাকে কিছু ভাতা দেওয়া দরকার। অথবা উনি যদি পারেন কোনো অফিসে কাজ জুটিয়ে দেওয়া উচিত। আমার মনে হয় মহিলার সাথে সম্পর্ক রাখা দরকার।
ভেবো না জর্জ, সুসানের গলাও শুকনো। আমিও এইরকম কথা ভেবে ওকে টিমোথির বাড়িতে কাজে লাগিয়ে দিয়েছি।
অবাক হল জর্জ।
সুসান এটা কি ঠিক হল?
এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে ভালো কাজ মনে হয়। ওর দিকে উৎসুক্যের দৃষ্টিতে তাকান জর্জ।
তুমি নিজের সম্পর্কে খুব আত্মবিশ্বাসী, তাই না সুসান? তুমি জান তুমি কি করছ, এবং কখনো নিজের কাজের অনুশোচনা কর না।
হাল্কাভাবে সুসান বলল : অনুশোচনা মানে সময় নষ্ট।
.
সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
০১.
রোজামণ্ডের দিকে চিঠিটা মাইকেল ফেলে দিল।
কি সম্বন্ধে?
আমরা যাবো, তাই তো?
আস্তে আস্তে মাইকেল বলল।
যাওয়া যেতে পারে।
গয়না-টয়না থাকতে পারে–অবশ্য ও বাড়ির সব কিছুই অনেক পুরনো।
হ্যাঁ, মিউজিয়ামের জিনিসপত্র, আমি বসার ঘরের দু-একটা স্কেচ নেব, আমাদের নাটকের কাজে লাগতে পারে।
উঠে দাঁড়িয়ে সে ঘড়ি দেখল।
আমাকে এখন রোজনহেমের সাথে দেখা করতে হবে। আমার ফিরতে দেরি হবে। অস্কারের সাথে ডিনার খেয়ে নেব, আমেরিকার অফারের কথা আমাদের আলোচনা করে দেখতে হবে।
অস্কারকে আমার শুভেচ্ছা জানিও, সে এতদিন পরে তোমায় দেখে নিশ্চয়ই খুশী হবে?
এতদিন পরে মানে। সবাই ভাববে আমাকে যেন মাসখানেক ধরে দেখা যায়নি।
হা, তোমায় দেখা যায়নি তো? রোজামণ্ড বলল : আমাকে দেখা গেছে। আমরা সপ্তাখানেক আগে একসাথে লাঞ্চ খেয়েছি।
ও হয়ত সেকথা ভুলে গেছে। সে পরশুদিন ফোন করে বলল যে তোমাকে টিলি লুকস ওয়েস্ট প্রথম রাত থেকে সে তোমায় দেখেনি।
এই পাগলটা নিশ্চয়ই তার মাথা হারিয়েছে। মাইকেল হাসল। তার বড় বড় নীল চোখে তাকিয়েছিল রোজামণ্ড। কোনো অবেগ ছিল না চোখে।
তুমি ভাব আমি একটা পাগল?
প্রতিবাদ করল মাইকেল।
না না, তা কেন ভাবব!
হ্যাঁ, তুমি ভাব, আমি একেবারে বন্ধু নই।
আমি বলছি আমি জানি তুমি কোথায় ছিলে….।
মাইকেল রোজামণ্ডের দিকে তাকাল।