একটা নোটবুক বার করে মিঃ গোবি বলতে লাগলেন–প্রথমে জর্জ ক্রসফিল্ড। রেস আর জুয়া খেলে, মাঝে মাঝেই ফ্রান্সে আর মস্কোতে যায়। কেসিনোতে অনেক সময় কাটায়। তার ভ্রমণের খরচের চেয়ে অনেক বেশি টাকা তোলে। সম্প্রতি স্টক এক্সচেঞ্জে ঢুকেছিল, কিন্তু ভাগ্য খারাপ, কিছু করতে পারেনি। তারপর থেকে ওর মেজাজ ভালো ছিল না, রিচার্ড মারা যাওয়ার পর বেশ ভালো মেজাজে আছে।
তুমি যে বলেছিলে ঐ বিশেষ দিনটার কথা জিজ্ঞেস করতে। সেদিনও রেস খেলতে হাস্ট পার্কে যায়নি। বোধহয় গেডিংটন থেকে কোথাও চলে গেছিল ট্রেনে করে। লীচেট সেন্ট মেরীর কাছের স্টেশনে নেমে বাসে করে লীচেট সেন্ট মেরীতে যাওয়া যায়। বাসে বেশ ভীড় থাকে। লীচেট সেন্ট মেরীতে ওকে কেউ দেখেনি, দেখা সম্ভব নয়।
গোবি নোটবুকের পাতা ওল্টালেন, মিঃ মাইকেল গ্রেগ, টাকা চেনে, টাকা উপার্জনও করছে। মাইকেলের স্ত্রী ছোটখাটো অভিনয় করে স্বামীকে খুব ভালোবাসে। ওদের নিয়ে একটা রটনা চলছিল, মিঃ রিচার্ড এবারেনথীর মৃত্যুর পর রটনাটা ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ ব্যাপারটার উপর মিঃ গোবি জোর দিলেন।
এই বিশেষ দিনটিতে মিঃ শেন বলেছিলেন নাটক সম্বন্ধে কথা বলতে তিনি রোজেনহেম ও মিঃ অস্কার লুইসের সাথে কথা বলতে যাচ্ছেন কিন্তু সে দেখা করেনি। হাঁটা পথে কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনটে বাজার আছে, সেখানে গাড়ী পাকু মারে রাখলে কেউ নজর দেবে না, আমরা মিঃ শেনকে তালিকার ভেতরে রাখছি।
নিশ্চয়ই।
পোয়ারো বলল, এখনও বোঝা যাচ্ছে না, ঠিক কারুর উপর সন্দেহটা কেন্দ্রীভূত করা যাচ্ছে না, তুমি বলে যাও।
মিঃ গোবি আবার বললেন, মিঃ এবং মিসেস ব্যাঙ্কস, ওরা বলেছে ওরা সারাদিন বাড়িতে ছিল। কিন্তু মিসেস ব্যাঙ্কস একটার দিকে গ্যারেজ থেকে গাড়ী বের করে কোথাও গেছিল, পাঁচটা নাগাদ ফিরেছিল।
মিঃ ব্যাঙ্কস সেদিন কি করেছিল জানা যায়নি। অফিস থেকে বলেছে ও একটু উত্তেজিত অবস্থায় ছিল, যেদিন শেষবার কাজে যায়।
ওহ গোবি তুমি কি করে এতসব খবর জোগাড় কর। পোয়ারো বলল।
এবার আমরা মিঃ এবং মিসেস টিমোথি সম্বন্ধে বলব, গোবি আরম্ভ করলেন।
ওদের প্রচণ্ড টাকার অভাব, বেশ ভালো খাবার খেতে চায়। টিমোথি পঙ্গু। মিঃ টিমোথি কাউকে বেল বাজিয়ে না ডাকলে কেউ ঘরে ঢোকে না, অন্ত্যেষ্টির পরের দিন ওর মেজাজটা ভীষণ খারাপ ছিল। সেদিন সাড়ে নটা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ওকে কেউ দেখেনি।
আর মিসেস্ এবারেনথী?
সে গাড়ীতে করে এণ্ডারবি থেকে বেরিয়েছিল। ক্যালস্টোন নামে একটা গ্যারাজে পায়ে হেঁটে এসে বলেছিল কয়েক মাইল দূরে তার গাড়ীটা খারাপ হয়ে গেছে।
ও এগারটার সময় সরাইখানায় গেছিল। সেখান থেকে মাইল খানেক গিয়ে কারুর গাড়ীতে করে স্টেশনে যেতে পারে–যা হোল এসব ভাবনা তোমার।
গাড়ীটা কী খারাপ হয়েছিল?
তুমি ঠিক বিবরণটা চাও?
ঠিক বলা যায় না, দক্ষ মিস্ত্রি তাড়াতাড়ি সারিয়ে দিতে পারে, আবার নতুন লোকের অনেক সময় লাগতে পারে। পোয়ারো বলল, ওদিন এণ্ডারবি থেকে চাকরদের দৃষ্টি এড়িয়ে বেরিয়েও থাকতে পারেন।
মিঃ গোবি বললেন, বোধহয় না, মিসেস্ এবারেনথী অ্যান্টহুইসলকে কথা দিয়েছিল এণ্ডারবি দেখাশোনা করার জন্য।
.
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
০১.
এরকুল পোয়ারো ভুরু কোঁচকাল বার্কশায়ার কাউন্টির ইনস্পেক্টর মর্টনের কার্ড দেখে।
জর্জ ওকে ভেতরে নিয়ে এস, আর ঐ পুলিশ ভদ্রলোক যা পছন্দ করে নিয়ে এসো।
মর্টন সোজাসুজি কাজের কথা পাড়লেন।
আমি লণ্ডনে এসেছিলাম, আপনার ঠিকানা পেয়ে ভাবলাম বৃহস্পতিবারের তদন্ত সম্বন্ধে আলোচনা করে যাই।
হা আমার তদন্ত করলাম, যাদের জিজ্ঞেস করলাম, সবাই সন্তোষজনকভাবে তাদের সেদিনের সেই সময়ের অবস্থান বলল। না এটা ঠিক সাধারণ খুন নয় মিঃ পোয়ারো। এটা যে করেছে সে এটাকে সাধারণ হিসেবে দেখাতে চেয়েছে। গিলফ্রিস্ট খুন করতে পারে। কিন্তু মোটিভ পাওয়া যাচ্ছে না। ওদের দুজনের বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল।
সে থামল।
সে জন্যই আপনার সাহায্যের জন্য এসেছি। কোনো কারণে নিশ্চয়ই ওখানে গেছিলেন?
মর্টন বিস্তৃতভাবে ওয়েডিং কেকের ঘটনাটা বলল।
পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস টানলো।
আমি গিলক্রিস্টের ব্যাপারে অ্যান্টহুইসলকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম। তবে বিয়ের কথা ভাবিনি। আমি আবার কুড়ুলের আশা করেছিলাম।
আপনি আর একটা খুনের আশা করেছিলেন কেন?
আস্তে আস্তে মাথা নাড়লেন পোয়ারো।
ব্যাপারটা অন্ত্যেষ্টির পর থেকে আরম্ভ হয়। অ্যান্টহুইসলের কথাগুলো পোয়ারো বললেন।
মর্টন বুদ্ধিমান, যে ঠিক পয়েন্টগুলো নিল বেছে। তাহলে মিঃ এবারেনথীকে বিষ দেওয়া হয়েছিল?
সম্ভাবনা আছে।
আর দেহটা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনো প্রমাণ নেই।
ঠিক বলেছ।
তবে কিছু লোক আছে যারা কোরাকে ঐ কথাটা বলতে শুনেছে। এবং বিশেষ একজন কেউ ভেবেছে কোরা পরে কথাটাকে আরও বিস্মৃতভাবে বলবে।
এবার তাহলে বুঝতে পারছো, তদন্তের সময় কেন আমি উপস্থিত ছিলাম।
তারপরেই মিস গিলফ্রিস্টের উপর আক্রমণ
একটা কাজ করা যেতে পারে, যে প্যাকেটে কেকটা এসেছিল তার উপর হাতের লেখাটা পরীক্ষা করা যেতে পারে।
পার্শেলটা পোস্টে এসেছিল কিনা বোঝা যাচ্ছে না। পোষ্টম্যান নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। যদি পার্শেলটা দিয়েও থাকে তবে সেটা কারুর চোখে পড়ল না যতক্ষণ না গাথরী।