কি হয়েছে?
বলতে পারছি না, বিছানা থেকে নামতে গিয়ে একটা বমির দমক এল। ডাক্তারকে একবার ফোন করে দাও। কিছু একটা পেটে গেছে।
ফোনের নম্বরটা দাও।
কে? গিলক্রিস্ট? লিড়স লেনের? ঠিক আছে আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।
দশ মিনিট পর ডাক্তার এল। সুসান দরজা খুলল।
রুগী দেখার পর ডাক্তার বলল, এ্যাম্বুলেন্স আনতে বল, ওকে হসপিটাল নিয়ে যেতে হবে।
তাহলে ওর অবস্থা ভালো নয়?
হ্যাঁ আমি মরফিয়া দিয়েছি। যন্ত্রণা কমার জন্য। কি খেয়েছিল?
ম্যাকারনি, কাস্টার্ড, পুডিং আর কফি।
তুমিও একই জিনিস খেয়েছ?
হা।
ও আর কিছু খায়নি তো?
না, আমরা কিংস আর্মে লাঞ্চ খেয়েছি।
তুমি মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের বোনঝি।
হা।
বীভৎস খুন। আশা করি ওরা অপরাধীকে ধরতে পারবে।
হ্যাঁ।
এ্যাম্বুলেন্স এলে ডাক্তার গিলফ্রিস্টকে নিয়ে চলে গেলেন। উপরে গিয়ে সুসান ঘুমিয়ে পড়ল।
.
০২.
সকাল বেলায় হাসপাতাল থেকে ফোন এল। ডাক্তার বলল, কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে। ভাগ্যি তাড়াতাড়ি ফোন করেছিলে, প্রায় মৃত্যুর দরজায় পৌঁছে গেছিল। তিনি আবার বললেন।
সুসান ঠিক মনে করে দেখত ও এমন কিছু খেয়েছে যা তুমি খাওনি?
আমার তেমন কিছু মনে পড়ছে না তো!
সত্যি কি ফুড পয়েজনিং হয়েছে?
ডাক্তার বললেন, আর্সেনিক।
আর্সেনিক? হতভম্ব হল সুসান, কেউ ওকে আর্সেনিক খাইয়েছে?
ব্যাপারটা সেইরকম দাঁড়াচ্ছে।
আচ্ছা সে কি নিজে আর্সেনিক খেয়েছিল।
আত্মহত্যা? না না একথা সে স্বীকার করেনি।
অজান্তে আর্সেনিক খেয়ে ফেলেনি তো?
সেই কথাই ভাবছি।
হঠাৎ মনে পড়ে যেতে সুসান বলল, ওতো ওয়েডিং কেক খেয়েছিল। আমি সে কেক খাইনি।
ওয়েডিং কেক? তিনি বললেন–অস্বাভাবিক, কে পাঠিয়েছে ও জানে না? যে বাক্সটাতে কেকটা ছিল, সেটা আছে?
বলতে পারছি না, আমি দেখছি।
আচ্ছা পার্শেলের প্যাকেটটা কোথায় আছে জান?
সেটা পাওয়া গেল না।
তুমি এখানে থাকবে?
হা।
ভালো, পুলিশ তোমায় কিছু প্রশ্ন করতে পারে। এটা কে পাঠাল তুমি জান না।
মাথা নাড়ল সুসান।
আমি ওর সম্বন্ধে কিছু জানি না।
মেয়েটা বেশ শান্তশিষ্ট ছিল। পোষ্টের মাধ্যমে ওয়েডিং কেক, মনে হয় কোনো হিংসুটে মেয়ে। কিন্তু কে ওকে হিংসা করবে?
জানি না।
কি জানি এই লীচেট সেন্ট মেরীর কি হল। প্রথমে বীভৎস খুন, তারপরে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা।
ডাক্তার চলে গেলে সুসান দরজাটা খোলা রেখে ওপরে তার কাছে গেল।
সুসান একটা ড্রয়ারে ছবি পেল। কোরার চেহারা বেশ রোগা, একজন লম্বা লোককে জড়িয়ে ছবি তুলেছে। বোধহয় ইনিই পীরে ল্যান্স কোয়েনেট। তারপর সুসান একটা চিঠি নিয়ে পড়তে লাগল। পেছন থেকে হঠাৎ এটা গলার স্বর শুনে চমকে উঠল।
সুসান কি ব্যাপার?
জর্জ তুমি কি করে এলে?
নিচের দরজা খোলো ছিল।
একটু থেমে আবার বলল : আমি ফোন করেছিলাম, গ্রেগ বলল, তুমি বাড়ির দেখা শোনার জন্য এখানে এসেছো। ভাবলাম আমি তোমায় সাহায্য করতে পারব।
তুমি সত্যি করে বল এখানে কেন এলে?
ছোটখাটো ডিটেকটিভের কাজ করতে।
আন্ট কোরা অন্ত্যেষ্টির দিন যে কথাগুলো বলেছিল, সেগুলো কি অর্থহীন বা তার পেছনে কিছু ছিল। আমি যখন এলাম তখন তুমি একটা চিঠি পড়েছিল, চিঠিতে কি লেখা আছে? কিছু দরকারী কথা আছে ওটাতে?
না না ঠিক –
আমি দেখতে পারি?
বিড়বিড় করে জর্জ চিঠিটা পড়ছিল।
এতদিন তোমাকে দেখে আনন্দ পেলাম…. ভালো মনে হচ্ছে…বাড়িতে সুস্থ শরীরে পৌঁছেছে…একটু অবসন্ন….
এর যে কোনো মানে হতে পারে, তার স্বাস্থ্য সম্বন্ধেও হতে পারে, অথবা কোনো বন্ধু সম্বন্ধেও কোনো গল্পও হতে পারে।
হ্যাঁ অনেক কিছুই হতে পারে। তিনি কোরাকে কি বলেছিলেন। কেউ কি জানে?
তারপর সুসান বলল, আপনি মনে হয় জানেন গিলফ্রিস্ট আর্সেনিক বিষ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
জর্জ চমকে উঠল।
কেউ ওকে বিষ দেওয়া ওয়েডিং কেক পাঠিয়েছিল।
জর্জ একটা চেয়ারে বসে বলল : তাহলে দেখা যাচ্ছে রিচার্ড ভুল করেনি।
.
০৩.
পরে ইনসপেক্টর মর্টন কটেজে এলেন। চোখে বুদ্ধির ছাপ।
আপনি কিছু জানেন মিসেস ব্যাঙ্ক গিলফ্রিস্ট সম্বন্ধে?
যে কাডবোর্ড বাক্সটা নিয়ে গেছিলেন ডঃ গ্রোকটর তাতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
মাথা নাড়ল সুসান।
আমি অবাক হয়ে গেছি। আচ্ছা পোষ্টাফিসের ছাপ কিছু বোঝা গেল না?
ভুলে গেছেন পার্সেলের প্যাকেটটা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ওটা বোধহয় পোষ্টেই আসেনি; এখানকার পিয়ন এখানে ঐরকম কিছু দিয়েছে বলে মনে করতে পারছে না।
আচ্ছা গিলক্রিস্ট পুরো কেকটা খেয়েছিলে কি? বলতে পারছি না, আমাকে একটুকরো দিতে চেয়েছিলো আমি খাইনি।
আমি একটু উপরে যেতে পারি?
নিশ্চয়ই।
সুসান উপরে এসে বলল : কাগজপত্রগুলো একটু ওলট-পালট করেছি আন্ট কোরার জিনিসপত্র দেখার সময়। তবে ডাক্তার আসার পর আমি আর গিলফ্রিস্টের ঘরে ঢুকিনি।
কিন্তু কে ওকে মারতে চাইবে? তার চোখ সুসানের চোখে, সুসান অস্বস্তিবোধ করল।
তুমি জান না? জিজ্ঞেস করল।
না, আমি জানি না।
তাহলে আমাদের খুঁজে দেখতে হবে।
.
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
০১.
একটা আধুনিকভাবে সাজানো ক্যাফেতে বসেছিলেন দুজন বৃদ্ধ।
সিরাফে চুমুক দিতে দিতে পোয়ারো মিঃ গোবির দিকে দেখছিলেন।
মিঃ গোবির গুণ হল তিনি ভালো তথ্য সংগ্রহ করেন। গোবির মত কেউ তাড়াতাড়ি খবর সংগ্রহ করতে পারে না।
তোমার জন্য যতখানি সম্ভব যোগাড় করে দিয়েছি, মিঃ গোবি পাশের ফায়ার প্লেসের দিকে চেয়ে বললেন, আজকালকার ছেলেগুলো ঠিকমত কাজ করতে চায় না।