খুব সামান্য, গিলফ্রিস্ট বলল।
ভদ্রভাবে মিঃ গাথরী বিদায় নিলেন, জানালা দিয়ে অপসৃয়মান মূর্তি দেখা যাচ্ছিল। গিলফ্রিস্ট বাইরে থেকে একটা পার্শেল নিয়ে ফিরলো, কি হতে পারে বলতো? ওয়েডিং কেক?
গিলফ্রিস্ট প্যাকেটটা খুললেন, ভেতরে একটা সাদা বাক্স, সিলভার রিবন দিয়ে বাঁধা।
রিবনটা খুলে ফেললেন মিস গিলফ্রিস্ট। বাক্সের ভেতরে সুন্দর একটা কেক। কে পাঠাল, তিনি কার্ডটা পড়লেন। জন এবং মেরী লেখা, এরা আবার কারা। পদবী লেখে না কেন?
.
দশম পরিচ্ছেদ
০১.
কেয়ারী থেকে গাড়ীটাকে বের করে সুসান আর্মে নিয়ে এল। ভেতরে বসে আছেন একজন বিদেশী ভদ্রলোক।
আনন্দিত হয়ে মিস্ গিলক্রিস্ট বললেন, ওঃ তুমি ফিরে এসেছ, চিন্তা দূর করলে। তারপরে বলল, তুমি স্পগেটী খেতে পারবে তো? আমি ভেবেছি আজ রাতে–ঠিক আছে, যা ইচ্ছে করবেন। গিলক্রিস্ট কিছুক্ষণ পরে কফি নিয়ে এলেন, সুসানকে ওয়েডিং কেকের এক টুকরো দিল। সুসান কেক খেল না।
কেকটা খুব ভালো, কেকটা খেতে খেতে গিলফ্রিস্ট বলল।
সুসান জিজ্ঞাসা করল : আঙ্কল রিচার্ড মৃত্যুর আগে এখানে এসেছিলেন তাই না?
হা এসেছিলেন।
ঠিক কখন এসেছিলেন?
ওর মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগে।
ওকে কি অসুস্থ দেখাচ্ছিল?
না তো, ওকে বেশ সুস্থ সবল ও হাসিখুসি মনে হয়েছিল।
একটু থেমে সুসান বলল : যখন উনি মারা গেলেন আন্ট কোরা কি অবাক হয়েছিলেন?
হা মৃত্যুটা বড় আকস্মিক ছিল তো?
আঙ্কল রিচার্ড কি আন্টকে এমন কোনো কথা বলেছিলেন যাতে বোঝায় তিনি দুর্বল ও বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
হা মিসেস ল্যান্স কোয়েনেট বলেছিলেন উনি খুব বৃদ্ধ হয়ে গেছেন এবং অথর্ব হয়ে পড়েছেন।
সুসান বলল, আপনি ওদের কথাবার্তা শুনেছিলেন?
না মিসেস ব্যাঙ্কস, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কথা শোনা আমার অভ্যেস নয়।
হা ঐ চাকরদের তিনি সন্দেহ করতেন, মানে ওরাই ওকে বিষ দিয়ে দিচ্ছে–
সুসান বলল, চাকর না হলে কোনো একজন লোক?
আমি জানি না মিসেস ব্যাঙ্ক, আমি সত্যি জানি না। ওর চোখের দিকে লক্ষ্য করে সুসান বুঝতে পারল মিস গিলফ্রিস্ট ওর চেয়ে বেশি জানেন।
সুসান একটু সহজ হয়ে বলল : আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
আমি অ্যান্টহুইসলকে বলেছি সবকিছু বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে থাকবো।
সুসান বলল, একটা কথা বলছি, আপনাকে তিন মাসের বেতন নিতে হবে।
আপনার খুব দয়া, আপনাকে একটা প্রশংসা দিতে হবে যে আমি আপনার এক আত্মীয়ের কাছে সন্তোষজনক ভাবে কাজ করেছি।
আমি বুঝতে পারছি না।
কাগজে এই খুনের কথাটা বেরিয়েছিল। সবাই সেটা পড়েছে। লোকে ভাববে আমি মৃত মেয়ের সাথে ছিলাম। আমিই বোধহয় খুনী। তাতে আমাকে কেউ কাজ দেবে না। আমি এ ব্যাপারে খুব চিন্তিত। রাতে আমার ঘুম হয় না। মনে হয় আমি আর কোনোদিন কাজ পাব না।
সুসান বলল, যদি ওরা খুনী ধরতে পারে, তাহলে কোনো সমস্যা থাকে না।
হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল।
ফোন ধরল সুসান।
হা হা আমি সুসান বলছি।
হ্যালো ডার্লিং…..হা ঠিক আছে….অচেনা কারুর দ্বারা হয়েছে….স্বাভাবিক ব্যাপার…শুধু অ্যান্টহুইসল। কি? বলা কঠিন তবে আমার সে রকমই হয়..হ্যাঁ যেমন আমরা ভেবেছিলাম …হ্যাঁ একেবারে প্ল্যানমত…আমি স্টাফের সাথে দেখা করব….আমাদের দরকারে কিছুই নেই। গুড নাইট ডার্লিং।
হঠাৎ সুসানের মাথায় একটা চিন্তা এল। নিশ্চয়ই, বিড়বিড় করে বলল, সেই জিনিসটাই। ফোন তুলে সে ট্রাঙ্ক এনকোয়ারী চাইল। পনের মিনিট পরে এক্সচেঞ্জ থেকে একটা অবসন্ন গলা বলল
কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
ওদের রিং করে যান।
দূরের একটা রিং শুনতে পেল সুসান, তারপর শব্দটা হঠাৎ থেমে গিয়ে একটা বিরক্ত পুরুষ কণ্ঠ শোনা গেল।
কে বলছেন?
আমি সুসান বলছি।
ওহ সুসান তুমি, কি হয়েছে? এত রাতে ফোন করছ কেন?
মড আন্টি কেমন আছে?
এই জন্য ফোন করলে? মড খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমরা বড় বিপদে পড়েছি।
সেই জন্যই ফোন করলাম, তুমি কি মিস গিলফ্রিস্টকে রাখবে?
কে সে?
আন্ট কোরার সঙ্গী, খুব ভালো মহিলা।
ভালো কথা, কিন্তু সে কখন আসবে?
ধন্যবাদ, সুসান।
ফোন রেখে সুসান রান্না ঘরে গেল।
তুমি কি ইয়র্কশায়ারে আমার আন্টকে দেখাশোনা করতে পারবে। আন্ট পা ভেঙে ফেলেছেন। আঙ্কেল পঙ্গু। তুমি একটু রান্না-বান্না করতে সাহায্য করবে?
ওহ মিসেস্ ব্যাঙ্ক আপনি খুব ভালো। আপনাকে ধন্যবাদ।
৩. সুসান শুয়ে পড়ল
একাদশ পরিচ্ছেদ
০১.
সুসান শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা শুয়েও সুসানের আজ ঘুম এলো না।
যেখানে কেউ খুন হয়, লোকে সেই বাড়িকে ভয় পায়। এটাও হয়ত ভৌতিক বাড়ি হয়ে যাবে।
এখানে আসার পর থেকে তার মনে হচ্ছে আন্ট কোরা তার কাছাকাছি আছে।
একটা আসবাবপত্রের শব্দ হল। চুপি চুপি কেউ পা ফেলে আসছে নাকি? সুসান আলো জ্বালাল…. কিছু না…নার্ভাস হচ্ছে ….ভেবো না …চোখ বোজ…।
ওটা কি? …কেউ গোঙাচ্ছে….মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে….
সুসান বলল, আমি আর এসব নিয়ে ভাবব না… ভাবব না।
আবার …আবার গোঙানি …আরও জোরে কেউ মরতে চলেছে…
এবার আর কল্পনা হয়। সুসান আলো জ্বালিয়ে শুনতে লাগল। গোঙানিটা সত্যি, পাশের ঘর থেকে আসছে।
হঠাৎ সুসান লাফিয়ে উঠে গিলফ্রিস্টের দরজায় কড়া নাড়ল। অপেক্ষা না করে ঢুকে পড়ল। আলো জ্বলছে ঘরে, গিলক্রিস্ট বিছানায় বসে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মুখটা বিকৃত।