- বইয়ের নামঃ আফটার দি ফিউনারেল
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, গোয়েন্দা কাহিনী
আফটার দি ফিউনারেল
১. বৃদ্ধ ল্যান্সকম্ব
প্রথম পরিচ্ছেদ
০১.
ঘরে গিয়ে বৃদ্ধ ল্যান্সকম্ব জানালাগুলো খুলে মাঝে মাঝে বাইরে উঁকি মারছিল।
এখুনি তারা ফিরে আসবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করে। বৃদ্ধ জানালাগুলি তাড়াতাড়ি খুলবার চেষ্টা করল, অনেক জানালা।
এণ্ডারবি হল একটা বিরাট বাড়ি ভিক্টোরিয়ার আমলের। বৃদ্ধ বাটলার মেন্টালপিসের ওপর রাখা একটা ছবির দিকে তাকাল, কর্ণোলয়াস এবারেনথী। এই এণ্ডারবি হল ওঁরই জন্য তৈরি হয়েছিল।
মিঃ রিচার্ড হল বৃদ্ধের প্রভু। খুব ভালো লোক ছিলেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ভীষণ আঘাত পেয়েছিলেন তরুণ মার্টিমারের মৃত্যুতে। এরপর বৃদ্ধ শোক সহ্য করতে না পেরে মারা গেলেন। প্রভুর মৃত্যু বৃদ্ধ এণ্ডারবিকে খুব আঘাত করেছে। যুদ্ধে মারা গেলেন মিঃ গর্ডন। এই আরেকটা শোক, মিঃ রিচার্ডের সহ্যশক্তিতে কুলোল না।
তৃতীয় জানালার ব্লাইণ্ড অর্ধেক খুলে আর খুলল না। আটকে গেছে। বিশেষ কেউ এ ঘরে আসে না। এই ঘরটা মেয়েদের জন্য। মাছ ধরা, বন্দুক চালানো আর সুইজারল্যাণ্ডে শীতের খেলাধুলো নিয়ে মত্ত ছিলো মার্টিমার তাই সুন্দর মেয়ে ঘরে আনল না। অনেক দিন কোনো বাচ্চার গলায় আওয়াজও শোনা যায়নি এ বাড়িতে।
বৃদ্ধ ল্যান্সকম্বের মনে ভেসে ওঠে অতীতের ছবিগুলো। মিঃ রিচার্ড ছিলেন পিতৃপ্রতিম। যখন ওঁর চব্বিশ বছর বয়স তখন ওর বাবা মারা যান। ব্যবসার ভার কাঁধে তুলে নেন রিচার্ড। সব সময় বাড়িটা আনন্দমুখর হয়ে থাকত, বাচ্চাদের চেঁচামেচিতে। কেমন যেন হয়ে গেল। এদিক ওদিক সবাই ছড়িয়ে পড়ল, মিঃ লিও মারা গেলেন। মিস লরাও চলে গেলেন। মিঃ টিমোথি পঙ্গু হলেন। বাইরে কোথাও মারা গেলেন মিস পেরালডিন। যুদ্ধ থেকে মিঃ গর্ডন আর ফিরলেন না, সবচেয়ে সে বড় ছিলো। এখন বাকি পঙ্গু টিমোথি এবং কোরা। সে ঐ অসুন্দর শিল্পীকে বিয়ে করেছে। ঐ ফরাসী লোকটাকে বিয়ে করে মিস কোরার সব গেছে। মেয়েটা খুব ভালোবাসত ল্যান্সকম্বকে। ওকে ওরা সবাই ভালোবাসত। তাদের লুকিয়ে ও জেলী দিত। এখন তাদের আর বিশেষ মনে রাখতে পারে না।
মাঝে মাঝে মিসেস লিও আসতো। ওকে প্রভু খুব ভালোবাসতেন, কিন্তু কোনো ছেলেপুলে ওঁর হল না।
উঠে দাঁড়াল ল্যান্সকম্ব, স্মৃতির জাল ছিঁড়ে সে তার বর্তমানে এসে দাঁড়াল। এখন তার কত কাজ।
.
০২.
রান্নাঘরে উঁকি মেরে ল্যান্সকম্ব বিরক্ত হল। এই সাতাশ বছরের মার্জোরীকে তার পছন্দ হয় না। এই বাড়িটাকে মাৰ্জোরী পুরনো সমাধি বলে। সে ভালো মাইনে পায় এবং মিঃ এবারেনথী তার রান্না ভালোবাসেন। একটা টেবিলে বসে জেনেট চা খাচ্ছিল। মিসেস জ্যাকস সাহায্য করার জন্য এসেছিলেন রান্নাঘরে।
তিনি বললেন, বিরাট ব্যাপার হয়েছিলো। উনিশটা গাড়ী, চার্চটা লোকে ভর্তি হয়েছিল। আহা এবারেনথী তুমি চলে গেলে। তোমায় কতলোক ভালোবাসত শ্রদ্ধা করত।
গাড়ীর শব্দ হল বাইরে। মিসেস বললেন, ওরা এসে গেছে।
কালো পোষাক পরা লোকেরা গাড়ী থেকে নেমে সবুজ বসবার ঘরে এসে হাজির হলেন। মিঃ অ্যান্টহুইল, অ্যান্টহুইল এণ্ড বোলার্ড ফার্মের সিনিয়র পার্টনার। দাঁড়িয়েছিলেন ফায়ার প্লেসের ধারে। একগ্লাস শেরী নিয়ে তিনি ঘরের অচেনা লোকদের তার অভিজ্ঞ আইনজ্ঞের দৃষ্টিতে দেখছিলেন। মিঃ অ্যান্টহুইলের বয়স বাহাত্তর। দু বছর আগে অ্যান্টহুইল্ল কাজপত্র ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু এই রিচার্ড পুরোন মক্কেল ও বন্ধু তাই তিনি না এসে থাকতে পারেননি। রিচার্ডের উইলের তিইি এক্সিকিউটার।
উইলের ব্যবস্থাগুলো তিনি ভাবছিলেন। মিসেস্ লিও হেলেন খুব সুন্দর ভদ্রমহিলা, তাকে উনি ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন।
হেলেনের কত বয়স হবে, পঞ্চাশ কি বাহান্ন। মিঃ লিওর মৃত্যুর পর ও আর বিয়ে করেনি। ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসত।
এবার তার চোখ মিসেস টিমোথির উপর পড়ল। সবসময় তার বায়ুরোগগ্রস্ত স্বামীকে দেখাশুনা করে। বেশ অমিতব্যয়ী টিমোথি, তবে যুদ্ধের পর থেকে এত ট্যাক্স বেড়ে গেছে যে ওকে এখন একটু দেখেশুনে খরচ করতে হচ্ছে।
অ্যান্টহুইসলের চোখ এবার জর্জ ক্রসফিল্ডের দিকে ঘুরল। লরার ছেলে, তাকে বিশেষ কেউ চিনত না। একটা অনামী সলিসিটারের অফিসে কাজ করে জর্জ। লরা ওর জন্য কিছুই রেখে যায়নি।
এবার দুটো মেয়ের ওপর চোখ পড়ল অ্যান্টহুইসলের। একজন জেরান্ডিনের মেয়ে রোজামণ্ড অপরজন সুন্দর দর্শন অভিনেতাকে বিয়ে করেছে।
শেষকালে কোরার ওপর চোখ পড়ল মিঃ অ্যান্টহুইসলের, রিচার্ডের ছোট বোন, তার মা প্রসবের সময় মারা যান। কোরার বিয়ে হয়েছিল ল্যান্স কোয়েনেটের সঙ্গে। কিন্তু রিচার্ড এতে রাজী ছিলো না। তবে রিচার্ড ওর উইলে কোরার উপর অবিচার করেনি। অবশ্য এখন কোরা বিধবা, প্রায় বার বছর আগে ওর স্বামী মারা গেছে। কোরাকে বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল, তার ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চয়ই তাকে আঘাত করেছে।
ঘরে ঢুকে ল্যান্সকম্ব নিচু গলায় বলল, লাঞ্চ দেওয়া হয়ে গেছে।
.
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
০১.
খাবারের টেবিলে সুখাদ্য ভারী আবহাওয়া হাল্কা করে দিল। খুব বেশি কেউ দুঃখ পায়নি এবারেনথীর মৃত্যুতে।