ন্যাশ ভাবল পুলিশকে ফোন না করলে জুলিয়ান তাকে সন্দেহ করতে পারে, তাই সে ডায়াল ঘোরাতে বাধ্য হল।
পুলিশ ফোন ধরল, হ্যালো।
–আমি আর্ল ডেসটারের বাড়ি থেকে ফোন করছি।
–বলুন কি হয়েছে?
–মিঃ ডেসটারের সঙ্গে ওঁর স্ত্রী গেছেন ওঁকে স্যানটোরিয়ামে ভর্তি করানোর জন্যে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন খবর না পেয়ে নার্ভাস ফিল করছি।
-ঠিক আছে, আমরা দেখছি। আপনার নাম কি?
ন্যাশকে এবার নিজের সত্যি নাম জানাতে হল। কারণ জুলিয়ান সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।
এরপর ন্যাশ বার্নেটকে ফোন করে ঐ একই কথা বলল। বার্নেট বলে, কি হলো আমায় খবর দিও।
–ঠিক আছে স্যার।
এই নাটকটুকু করতে হলো কেবল জুলিয়ানের মনে যাতে কোনরকম সন্দেহ না জাগে।
একটু পরে ইন্সপেক্টর ব্রমউইচ এবং সাব ইন্সপেক্টর লুইস এল।
ব্রমউইচ ন্যাশকে জিজ্ঞেস করল, এখন বাড়িতে কে কে আছেন?
–আমি আর জুলিয়ান।
–তুমি এখানে কি করো?
ড্রাইভারী করছি প্রায় মাসখানেকের মতো।
–দুজনেরই গাড়ি চালাও?
–হ্যাঁ, তবে মিঃ ডেসটারের বেশী।
–ওরা যখন স্যানটোরিয়ামে গিয়েছিল, তখন তুমি বাড়িতে ছিলে?
না, মিসেস ডেসটার তখন আমাকে একটা কাজে পাঠিয়েছিল।
-তোমার কি মনে হয়, তারা স্যানটোরিয়ামে না গিয়ে অন্য কোথাও যেতে পারে?
-হা স্যার, মিঃ ডেসটার প্রচুর মদ খান। তার চাকরির খবরও ভালো নয়, আবার বাজারে প্রচুর দেনাও আছে। মিঃ ডেসটার আমায় একথা বলেছেন। আমাকে রাখা একটা বাড়তি খরচ মিসেস ডেসটার এ ব্যাপারে হুশিয়ার ছিলেন। তাই আমার মনে হয়, ওরা পালিয়েছে।
–পালিয়েছে? কোথায় যেতে পারে?
–তা বলতে পারছি না। আবার নাও পালাতে পারে। এটা শুধু আমার ধারণা।
–এর আগে তুমি কি করতে?
–এক বিজ্ঞাপন কোম্পানীতে কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করতাম। কোম্পানীর নামটাও ন্যাশ জানাল।
ব্রমউইচ এবার জুলিয়ানকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার নাম?
-জুলিয়ান।
–তুমি এখানে কি করো?
–মিঃ ডেসটার অসুস্থ থাকায়, আমি মিসেস ডেসটারকে কাজে সাহায্য করতাম।
–তুমি মিঃ ডেসটারকে দেখাশুনা করতে না?
-না, স্যার। আমাকে প্রথম দিনেই বলে দেওয়া হয়েছে, ওষুধের জন্য মিঃ ডেসটার রাতদিন ঘুমিয়ে থাকেন। আমি যেন তার ঘরে গিয়ে তাকে বিরক্ত না করি। তাহলে উনি খুব চেঁচামেচি করবেন। আমিও যেতাম না ওঁনার ঘরে।
–আচ্ছা মিঃ ডেসটারকে স্যানটোরিয়ামে কে নিয়ে যায়।
–মিসেস ডেসটার।
–ন্যাশ তখন বাড়িতে ছিল?
–না। মিসেস ডেসটার তাকে একটা কাজে পাঠিয়েছিলেন। ও আমাকে একথা বলেছে।
–তুমি ন্যাশকে ভালোবাসো?
–না, আমার ক্ষেত্রে তা ঘটেনি।
–আচ্ছা, মিঃ ডেসটারকে নিয়ে যাওয়ার সময় তুমি তার মুখ দেখেছিলে।
-না। আমি ওদের পেছনটা দেখেছি। সিঁড়ির আলো তখন কম থাকায়, আমি ভালো করে তাকে দেখতে পাইনি।
–তখন মিঃ ডেসটারের পরণে কি পোশাক ছিল?
জুলিয়ান তার নিখুঁত বিবরণ দিল।
এরপর ন্যাশকে ডাকা হয় আবার।
–তুমি কোথায় থাকো?
–গ্যারেজের উপরে একটা ঘরে।
–আর কেউ থাকে তোমার সঙ্গে।
–না স্যার। আমি একাই থাকি।
ব্রমউইচ ন্যাশের ঘর সার্চ করে সন্দেহজনক কিছুই পেল না।
এরপর ব্রমউইচ মিঃ এ্যাণ্ড মিসেস ডেসটারের ঘর দেখতে চাইল। জুলিয়ান তাকে নিয়ে গেল।
-তুমি রাতদিন এখানে থাকো?
–না। জুলিয়ান বলে।
অন্য সময় কি করো? এখানে কতদিন কাজ করছো?
–কলেজে পড়ি। এখানে দিন কয়েক হলো কাজ করছি।
–তোমার নিশ্চয়ই বয়ফ্রেণ্ড আছে?
–আছে।
–এ বাড়িতে কখনো এসেছে?
–না।
ইদানিং মিঃ এ্যাণ্ড মিসেস ডেসটারের সম্পর্ক কেমন ছিল।
-আমি বলতে পারবো না। আমি এসে থেকেই দেখি মিঃ ডেসটারের ঘর বন্ধ। সুতরাং তাদের আমি কথা বলতে দেখিনি।
ওদের কথার মাঝে ন্যাশ বলল, সম্পর্ক খুব একটা সুবিধের ছিল না। দেনা নিয়ে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারত না। তবে মিঃ ডেসটার বড় ভালো মানুষ। ওঁকে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম বলে উনি আমাকে চাকরি দেন। ওঁরা দুজনে আলাদা ঘরে শুতেন।
মিঃ এ্যাণ্ড মিসেস ডেসটারের ঘরে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেল না। এরপর মিসেস ডেসটারের ঘরটাও ব্রমউইচ দেখল। তার ঘরে ড্রয়ার খুলতে গহনাগাটি বেরিয়ে পড়ল। অনেক গহনা। মেয়েরা কোথাও পালাতে গেলে এগুলো আগে নেবেই। ব্রমউইচ মন্তব্য করলেন, তাহলে ওরা পালায়নি। দেখা যাক, কোথায় আছে। এরপর তারা আরো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে গেল।
জুলিয়ান ন্যাশকে বলল, আমি বাড়ি যাবো।
-তুমি চলে গেলে আমি একা হয়ে যাবো। হেলেন নিশ্চয়ই পাওনাদারদের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।
–তাহলে তো মাইনেও মার গেল। জুলিয়ান বলে।
-আমারও কম টাকা লোকসান হবে না। তাহলে আমাদের দুজনের তো একই অবস্থা। ন্যাশ এগিয়ে গিয়ে চুমু খায় জুলিয়ানকে। বলে, বাড়িতে একটা খবর দিয়ে দাও ফোন করে।
জুলিয়ানও যেন এ সোহাগটুকু চাইছিল। সে ন্যাশের তপ্ত বুকের মধ্যে মিশে গেল। ন্যাশের যদিও এসব ভালো লাগছে না তবুও জুলিয়ানকে সে দেখাতে চায় যে ওদের চলে যাবার মধ্যে সে নেই। নেই তার মনে পাপও।
জুলিয়ান নিজেকে ন্যাশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে বাড়িতে ফোন করে এল।
পরের দিন সোমবার। বেলা গড়িয়ে গেছে।
ন্যাশ অশান্তভাবে ঘরে পায়চারী করছে। জুলিয়ান নগ্ন অবস্থায় শুয়ে ঘুমচ্ছে। তার দিকে তাকিয়ে ন্যাশের এতটুকু উত্তেজনা জাগছে না মনে।