ন্যাশ তার পকেটে হাত দিতে সেই বার্নেটকে লেখা ডেসটারের চিঠিটা তার হাতে ঠেকে। পোস্ট করা হয়নি।
চিঠিটা খুলে ন্যাশ পড়ল, তাতে স্পষ্ট লেখা জীবনবীমার টাকাটা যেন হেলেন না পায়, সেইজন্য সে আত্মহত্যা করেছে। হেলেন যাতে মিথ্যে কিছু সাজাতে না পারে। চিঠির সইয়ের সাক্ষী হিসাবে তার সেক্রেটারী মিস লেমক্স সই করেছে। চিঠিটা ন্যাশ হেলেনকে দেখালো না।
ন্যাশ ভাবে এই চিঠিটা এবং ডেসটারের রিভালবারটা নিজের কাছে, কোথাও নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে।
আপাতত ন্যাশ রুমাল দিয়ে মুড়ে ডেসটারের রিভালবারটা অন্য পকেটে রাখলো। ডেডবডিটা ডিপফ্রিজে রাখা হল।
এরপর ন্যাশ হেলেনকে বলল, একটু বেরোচ্ছি।
-কোথায় যাবে?
–রাতে কোথায় ডেড বডি ফেলে আসতে হবে, সেটা দেখে আসছি। তুমি এখন বাড়িতে থাকো ।
ন্যাশ গ্যারেজ থেকে গাড়ি বার করে সারা রাত খোলা থাকে এমন একটা ব্যাঙ্কে হাজির হলো।
তারপর ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে, ম্যানেজারের নির্দেশে একটা চিঠি লিখে, ব্যাঙ্কের লকারে ডেসটারের চিঠিটা আর রিভলবারটা জমা করিয়ে দিয়ে এলো।
ন্যাশকে হেলেন পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছে না। তবে সে এটা বুঝেছে, ও টাকার নেশায় মরিয়া হয়ে উঠছে। ফলে সহজে তাকে ঘাঁটবে না এবং তাকেও ওর মন জুগিয়ে চলতে হবে।
ন্যাশ বাড়িতে ফিরে আসতে হেলেন বলল, তুমি এখানেই শোবে।
ন্যাশ রাজী হয়ে গেল। এরপর দুজন দুরন্ত স্রোতে যেন ভেসে গেল।
সকালে ব্রেকফাস্ট খাওয়ার সময় ন্যাশ হেলেনকে বলল, তোমাদের উকিল কে?
-ওর মুখে একদিন বার্নেটের কথা শুনেছিলাম।
–ওর ফোন নম্বর জানো?
–জানি। তবে কেন? এখনই ওকে খবর দিতে চাইছো কেন?
–ডেসটারের টাকাকড়ি কি আছে, তা জানা দরকার।
–তাহলে পাওনাদাররা যে খবর পেয়ে যাবে।
–ওদের মুখ বন্ধ করার জন্যে কিছু টাকার দরকার। অন্তত হাজার পাঁচেক ডলার দরকার।
শেষ রক্ষা করতে পারলে হয়।
–ঠিক হবে, তুমি শুধু আমার কথামতো চলো, তাহলেই হবে।
–আচ্ছা, ডেসটারের ব্যাপারে সকলে জিগ্যেস করলে কি বলবো? হেলেন জিগ্যেস করে ন্যাশকে।
–উত্তর আমার ভেবে রাখা আছে। বলবে, ডেসটার একটা টেলিভিশন কোম্পানীর চাকরির ব্যাপারে ইনটারভিউ দিতে গেছে। ব্যাপারটাকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন নির্জন স্থানে ডেসটারকে কেউ খুন করেছে। তখন ইনস্যুরেন্স কোম্পানী পয়সা দিতে পথ পাবে না। এক চুল এদিক-ওদিক হলেই হাজতবাস।
-সে তো নিশ্চয়ই, হেলেন বলে।
-শোন, এখন আমার আর ডেসটারের সাক্ষী হিসেবে বাড়িতে একটা কাজের মেয়ে রাখতে হবে।
–একে টাকার অভাব, তাতে কাজের লোক রাখার কি দরকার?
–তাকে বলতে হবে ডেসটার অসুস্থ। কদিন বাদে ডেসটারকে স্যাটেরিয়ামে ভর্তি করা হবে।
–সে যদি ডেসটারকে দেখতে চায়?
–তখন বলবে, ও ঘরে ডাক্তার ছাড়া কারুর যাওয়া বারণ আছে এবং এই অসুখের কথা ও যেন চারদিকে বলে না বেড়ায়। তাহলে ডেসটারের টেলিভিশনের চাকরির কথা গোপন থাকবে না।
এবার একটা কথা, তোমায় কিছু টাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
–টাকা আমার কাছে কোথায়? কি হবে টাকা?
–পাওনাদারদের দেনা মেটাতে হবে তো।
–হ্যাঁ, তা তো দরকারই। কিন্তু টাকা…।
-গ্যারেজে তিনটে গাড়ি আছে, ও থেকে একটা গাড়ি বেচে দিতে পারো। গাড়ি বেচেও আরো কিছু টাকা লাগবে। আমি কাজ করে আমার কিছু জমানো টাকা থেকেও কিছু দেব। তুমি তোমার গয়নাগাটি বেচে নয়তো বন্ধক দিয়ে কিছু টাকার জোগাড় করো।
-আমায় রাস্তায় দাঁড়াতে বলছো?
–হেলেন, পাঁচ হাজার ডলারের জন্যে তোমায় রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না। তোমার অনেক আছে। লক্ষ্মীটি অরাজী হয়ো না।
-না, না তা হয়না, কিছুতেই হয় না। হেলেন চীৎকার করে।
—ঠিক আছে, আমি চলি। পুলিশে গিয়ে বলবো, তুমি টাকার লোভে ডেসটারকে খুন করেছো। ঠিক আছে, তুমি যা বলছে তাই হবে। হেলেনের কথাটা বলতে বুক ফেটে যাচ্ছে।
থ্যাঙ্ক ইউ। প্রথমে গাড়ি বিক্রী করতে সানফ্রান্সিসকো যাবো। তারপর ফিরে এসে তোমার গহনা বন্ধক দেব, আমার ব্যাঙ্কের টাকাও তুলবো।
ন্যাশ বেরিয়ে গেল।
ন্যাশ বাড়ি ফিরে দেখে হ্যাঁমারস্টক নামের একজন লোক বসে। সে জানাল যে, সে মদের দোকান থেকে এসেছে। মিঃ ডেসটারের কাছে পাওনা টাকা নিতে এসেছে।
ন্যাশ জানালো, ডেসটার বাড়িতে নেই। একটা টেলিভিশন কোম্পানীতে ইন্টারভিউ দিতে গেছে। তবে আপনি বিল দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে পারেন। তবে আপনার সঙ্গে আমাদের কারবার এখানেই শেষ। অন্য দোকান থেকে মদ আনবো।
–থাক, থাক। আমার টাকা চাই না। ওনার মতো এমন শাঁসালো মক্কেল হাতছাড়া করা যায়!
-হ্যামারস্টক চলে গেল।
কিছু পরে হেলেন সঙ্গে করে একটি মেয়েকে নিয়ে এল।
ন্যাশ মেয়েটির দিকে তাকায়। বয়স উনিশ-কুড়ি। স্লীম, আকর্ষণীয়, সেক্সি ফিগার। পোশাকে আরো লোভনীয় হয়ে উঠেছে।
জুলিয়ানকে ন্যাশকে দেখিয়ে হেলেন বলল, ওর নাম ন্যাশ। আমাদের ফ্যামিলি ফ্রেণ্ড।
হেলেন ন্যাশকে জুলিয়ানের কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বলল।
ন্যাশ বলল, কাজ বলতে তেমন কিছু নয়। মিসেস ডেসটারের স্বামী খুবই অসুস্থ। ওঁকে স্যানটোরিয়ামে ভর্তি করতে হবে। ডাক্তার দিনরাত ওঁকে ওষুধে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন। বাইরের কেউ যাতে ওঁনার ঘরে না যায়, তা তুমি দেখবে। কারণ তাহলে উনি ভীষণ ক্ষেপে যাবেন। আর মিসেস ডেসটারকে তুমি একটু সঙ্গ দেবে, উনি খুবই অসহায় বোধ করছেন।