ন্যাশ ইতস্ততঃ করে, কারণ হেলেনের স্বভাবচরিত্র তার জানা আছে।
ইতিমধ্যে হেলেন ঘরে প্রবেশ করে। সে ন্যাশকে দেখে ডেসটারের কাছে তার এই ঘরে থাকার প্রতিবাদ জানায়, কিন্তু ডেসটার তাকে স্পষ্ট জানায়, ন্যাশ তাদের কথাবার্তার সাক্ষী থাকবে এবং এই ঘরে সে বসে থাকবে।
–সাক্ষী? হেলেন অসহিষ্ণুভাবে বলে কিসের সাক্ষী?
–তুমি কি কিছু আঁচ করতে পারছো না?
–তা কথাটা কি? স্পষ্ট করে বলবে?
–তোমার জন্যেই আমি মদ ধরেছি?
–আমার জন্য?
–হ্যাঁ। রাতদিন শুধু ক্লাবে ঘুরে বেরিয়েছে, বয়ফ্রেণ্ডেরও তো অভাব নেই।
–কি দিয়েছো তুমি আমায়? বয়ফ্রেণ্ডের সঙ্গে সময় কাটাতে আমি বাধ্য হয়েছি। তোমার কাছে আমার জীবন যৌবন উপেক্ষিত, এ ব্যাপারে তুমি কি দিতে পেরেছো?
–সে মন নিয়ে তুমি এসেছো কোনদিন? তুমি আমাকে বিয়ে করেছো আমার টাকার জন্যে। আর আমি তোমাকে ভুলবার জন্যে মদ ধরেছি। ফলে আমার কাজকর্মে ভাটা পড়েছে, চাকরী যেতে বসেছে। আর কেউ আমায় চাকরী দেবে। মদে ডুবে থাকার জন্যে বাজারে আমার বদনাম হয়ে গেছে।
ডেসটার একটু থেমে বলে, পাওনাদাররা আমাকে হেঁকে ধরবে। গাড়ি-বাড়ি বেচে কদিন চলবে?
–সে তো নিশ্চয়ই, হেলেন বলে।
-ডেসটার হেলেনের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে, তুমি আমার জীবনবীমার সাড়ে সাত লাখ ডলারের আশায় বসে আছো না? টাকাটা যাতে তুমি না পাও, তার ব্যবস্থা আমি করবো।
-তার আবার কী ব্যবস্থা করবে?
দুর্ঘটনা ঘটলেই টাকাটা তুমি পেয়ে যাবে, তা হবে না। আগেও তুমি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আমায় মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে, পারোনি।
–আমি? তোমাকে?
–হা হা, তুমি।
–মিথ্যে।
-মিথ্যে, ঠিক আছে মিথ্যে। জীবনবীমা পলিসির একটা শর্ত ছিল, একবছর প্রিমিয়াম দেবার পর সে আত্মহত্যা করলে, ওরা পুরো টাকাটা দিতে বাধ্য থাকবে। শর্তটা আমি সানফ্রান্সিসকো গিয়ে বাতিল করে এসেছি। আত্মহত্যা করলে বীমা কোম্পানী তোমাকে একপয়সাও দেবে না।
–তার মানে?
–তোমার আসল রূপ চিনতে আমার বাকী রইল না। আর বেকার জীবন কাটাতে আমি পারবো না। হাতে একটা পয়সা নেই, বেঁচে থেকে কি লাভ? এর চেয়ে আমার মরে যাওয়া হাজার গুণ শ্রেয়। তবে আত্মহত্যাকে দুর্ঘটনা বলে সাজাতে গেলে ফেঁসে যাবে। বীমা কোম্পানীর ম্যাডক্স একজন ঝানু গোয়েন্দা। তার চোখকে ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়।
হেলেন ডেসটারের এসব কথা সহ্য করতে না পেরে রেগেমেগে ঘর ছেড়ে চলে গেল। ডেসটার তখন ন্যাশকে বলে, তোমার ব্যবস্থা আমি করে যাবো।
-স্যার, একজনের ওপর রাগ করে জীবনটা শেষ করে দেবেন না, আমার এটা অনুরোধ। ন্যাশ বলে।
–ভেবে দেখব, ডেসটার বলে। এরপর ন্যাশ নিজের ঘরে চলে আসে।
ডেসটার রিসিভার তুলে ডায়াল করে। সে তার অ্যাটর্নিকে সব কথা জানাতে চায়।
মিঃ রোজারিওর গলা শোনা গেল, হ্যালো, গুড ইভিনিং মিঃ ডেসটার।
–আমি আপনাকে একটা জরুরী কথা জানাতে চাই, আমি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছি।
–সে কি?
এছাড়া আমার আর উপায় নেই।
–আমি আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না, তবে সিদ্ধান্তটা নেবার আগে একটু ভেবে দেখবেন।
-আমি অনেক ভেবে দেখেছি। হ্যাঁ, আমি আত্মহত্যা করলে বীমা কোম্পানী যাতে এক পয়সাও না দেয়, সেটা আমি সানফ্রান্সিসকোতে গিয়ে ঠিক করে এসেছি। আর দেখবেন, আমার স্ত্রী আমার আত্মহত্যাকে যাতে অন্যকিছু বলে সাজাতে না পারে।
–আপনি এতটা এগিয়েছেন? আপনি একথা আর কাকে বলেছেন?
–আমার স্ত্রীকে আর গাড়ির ড্রাইভারকে। ড্রাইভারকে বলেছি আমার কথার সাক্ষী রাখার জন্যে।
–ঠিক আছে। তবে আমার কথাটা একটু ভেবে দেখবেন।
ডেসটার রিসিভার নামিয়ে রাখে।
হেলেন তার নিজের ঘরে ডেসটারের চোদ্দপরুষ উদ্ধার করে গালিগালাজ করছে।
ঠিক তখনই বন্দুক ছোঁড়ার আওয়াজ। ন্যাশও গুলির শব্দটা পেল। হেলেন আর ন্যাশ দুজনেই ছুটে গিয়ে দেখল একটা চেয়ারে বসে ডেসটার রগের পাশে গুলি চালিয়েছে। রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে।
হেলেনের সাড়ে সাত লাখ ডলার পাবার স্বপ্ন মিটে গেল। সে উভ্রান্ত। সে ভাবে, পুলিশ সন্দেহ করতে পারে, টাকার লোভে সে তার স্বামীকে খুন করেছে। এটা আত্মহত্যা নয়।
-কিন্তু এটাকে খুনের ঘটনা বলে সাজাতে পারলে টাকাটা ঠিক হাতে চলে আসবে। এর জন্যে ন্যাশের সাহায্যের প্রয়োজন। ওকে হাতে রাখতে হবে। নইলে ও পুলিশে সবকিছু জানিয়ে দেবে।
এরপর হেলেন ন্যাশকে নানা ছলাকলায় কাছে বসিয়ে বলে, শোন, আমার কথা মন দিয়ে শোন, বীমার টাকাটা অন্যভাবে আমাদের হাতে আসবে। আর তার জন্যে তোমাকে আমার দরকার। যা পাবো তাতে তোমাকে আমাতে অর্ধেক ভাগ করে নেবো। আর তোমাকে ড্রাইভারী করে খেতে হবে না। তার জন্যে একটু বুদ্ধি খাঁটিয়ে কাজ করতে হবে।
-কিন্তু ধরা পড়লে? ন্যাশ বলে।
-ধরা পড়বো কেন? হেলেন তার দুরন্ত যৌবন উজাড় করে ন্যাশকে নিষ্পেষণ করতে করতে বলে, তাছাড়া আমি তোমাকে ভালোবাসি।
–আমি? তুমি? রাজী হলাম। হেলেন ন্যাশকে চেপে ধরে চুমু দিতে থাকে।
তবে আমি যা বলবো তাই তোমাকে করতে হবে। আর সুবিধামত সাজাবার জন্য সময় চাই। ন্যাশ বলে।
-সে তো নিশ্চয়ই। এমনভাবে সব কিছু করতে হবে, যাতে কেউ কোন ব্লু না পায়। তবে যা করার তাড়াতাড়িই করতে হবে।
দুজনে ঠিক করল, ডেসটারের মৃতদেহটা কিচেনের পাশের ঘর স্টোররুমে একটা বড় ডীপ-ফ্রিজ আছে ওখানে রাখা হবে। তারপর একদিন রাতে এমন নির্জন স্থানে ফেলে রেখে আসা হবে যাতে হট করে লোকের নজরে পড়ার সম্ভাবনা কম।