এরপর ন্যাশ ডেসটারকে ডেকে কোনরকমে টানতে টানতে গাড়িতে তুলে বাড়ির পথ ধরলো।
এর মাঝে দুদিন কেটে গেছে। ইতিমধ্যে ন্যাশ সলির অফিসে গিয়েছিল। সলির থেকে সে জেনেছে, হেলেনের আগের স্বামী হেলেনের জ্বালায় তিতিবিরক্ত হয়ে জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
ন্যাশ ভাবল, হেলেন যদি তার অজান্তে ডেসটারের ক্ষতি করতে চায় আর সে যদি তা জানতে পারে তাহলে সে হেলেনকে ভয় দেখাবে। হেলেন ভয় পেলে তখন রাজকন্যার সঙ্গে রাজ্যলাভ দুটোই হবে।
ন্যাশের চিন্তার জাল ছিঁড়ে গেল একটা গাড়ির আওয়াজে। সঙ্গে সঙ্গে গ্যারেজে এসে সে দেখল হেলেন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।
ন্যাশ ভাবে এই ফাঁকে ডেসটারের কাছ থেকে কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়া যাবে। এই ভেবে ন্যাশ ডেসটারের ঘরে প্রবেশ করল।
ন্যাশ দেখল ডেসটার বিছানায় শুয়ে একটা পিস্তল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। তাকে দেখেই সেটা বালিশের তলায় চালান করল ডেসটার।
-স্যার, রাতে আপনি বেরোবেন?
–না।
–তাহলে আমি যাই।
–শোন, মিসেস ডেসটার তোমাকে চলে যেতে বলেছেন?
–হা স্যার, দুবার।
–আমি বললে তবেই যাবে। তুমি এখন এসো। ও হ্যাঁ, কাল সকাল দশটায় আমি বেরুবো। ন্যাশ ফিরে আসে, পরের দিন নির্দিষ্ট সময়ে ডেসটারকে নিয়ে গাড়ি বের করে।
গম্ভীর মুখে ডেসটার বলে, আজ স্টুডিও যাবো না।
–স্টুডিওতে যাবেন না? তাহলে কোথায় যাবেন স্যার?
–এয়ারপোর্টে চল।
–বিস্ময়ের সঙ্গে ন্যাশ বলে, এয়ারপোর্ট? কোথায় যাবেন স্যার?
–সানফ্রান্সিসকো।
ন্যাশ জানে, বীমা কোম্পানীর হেড অফিস সানফ্রান্সিসকোতে।
ন্যাশ এবার আমতা আমতা করে বলল, স্যার যদি কিছু মনে না করেন, একটা কথা বলতাম।
-না না, বল কি বলবে?
–আমার টাকাপয়সার অবস্থা এখন ভালো নয়। সাহেবের অসুবিধা না হলে…
ডেসটার পকেট থেকে চেক বের করে তাতে পুরো দু-হাজার ডলার লিখে দিলো। ন্যাশ তো মহা খুশী।
এরপর ডেসটার জানায়, শনিবার থেকে আমি নিজেই বেকার। চাকরি আর জুটছে না। চাকরি গেলেই পাওনাদাররা আমায় ছাড়বে না।
ন্যাশ ভাবে, তাহলে হেলেনের কথাই ঠিক। আর বীমা কোম্পানীর টাকাটা পাবার জন্য হেলেন তার স্বামীকে খতম করে দিতে চাইছে। কিন্তু ন্যাশ তা কিছুতেই হতে দেবে না।
এরপর ন্যাশ ডেসটারকে বিমানবন্দরে ছেড়ে দিয়ে এসে ব্যাঙ্কে চেক ভাঙিয়ে নিজের নামে অন্য ব্যাঙ্কে জমা রাখে।
একসময় সে বাড়ি ফিরে আসে। শুয়ে পড়ে।
ইন্টারকমটা বেজে ওঠে খানিক বাদে।
–আমি হেলেন বলছি।
–বলুন ম্যাডাম।
–আল আজ রাতে আর বেরুবে না। তাই তুমি আমাকে সন্ধ্যেবেলা পামগ্রোভ ক্লাবে পৌঁছে দেবে।
–কটা নাগাদ?
–ঐ আটটা নাগাদ। তবে তোমার উর্দি পরে যাওয়া চলবে না। রাত একটায় ফিরিয়ে আনবে।
তবে কি পরে যাবো?
–ভদ্র জামাকাপড় পরে যাবে। সে ব্যবস্থা আমি করবো।
হেলেন ঝপাং করে রিসিভার নামিয়ে রাখে। ন্যাশ ভাবে, ডেসটার তাহলে হেলেনকে সানফ্রান্সিসকোর ব্যাপারে কিছু বলেনি? নিশ্চয়ই না।
পামগ্রোভ নাইট ক্লাবে অন্যদিন একাই যায় কখন ফেরে ন্যাশ জানতে পারে না। আবার ড্রাইভারের উর্দি পরতে বারণ করলে, কেন? ওর মাথায় কি দুষ্টু বুদ্ধি উঁকি মারছে?
দুপুরের পর আবার হেলেনের ফোন এল, সে জানালো ন্যাশের জন্যে সে নতুন পোশাক কিনে এনেছে।
আর পরের দিন ন্যাশ হেলেনের প্রকৃত রূপ জানতে সলির অফিসে গেল।
সলি তাকে জানায়, হেলেনের প্রথম স্বামীর নাম ছিল হার্বাট ভ্যান টমলিন।
–হেলেন কি ওর স্ত্রী ছিল? ন্যাশ জিগ্যেস করে।
–না রক্ষিতা হিসেবে রেখেছিল।
–আচ্ছা, হেলেন কাজকর্ম কিছু করত?
–হ্যাঁ, ফি ফি-ক্লাবে সিগারেট ফেরি করতো।
–বাঃ, চমৎকার কাজ।
–এরমধ্যে টমলিন বিশ-হাজার ডলারের জীবনবীমা করে। আর ওয়ারিশান করে হেলেনকে।
–উস!
–সবে কিস্তির প্রথম টাকা জমা দিয়েছে, তারপরই জানালা দিয়ে নীচে পড়ে ওর মৃত্যু হল।
–জানালা দিয়ে কিভাবে পড়ে গেল?
–জানালাটা ছিল বড়। তাতে মজবুত গ্রিল ছিল না। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হেলেনই ওকে ধাক্কা মেরে নীচে ফেলে দিয়েছে তাতেই ও মারা যায়। ছোট কোম্পানী, বেশীদূর এগোতে সাহস পায় না। তবু হেলেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে, ঝামেলা এড়াতে ও সাত হাজারেই রাজী হয়ে যায়।
এরপর ন্যাশ সলির কাছে বিদায় নিল।
ওদিকে স্টুডিওতে আজ ডেসটারের শেষ দিন। দরকারী কাগজপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকী শুধু হুইস্কি বোতলগুলো আনা।
বড় স্যুটকেসে বোতলগুলো ভরে গাড়ি করে ন্যাশ ডেসটারকে বাড়ি পৌঁছে দিল।
বাড়িতে প্রবেশ করে ডেসটার ন্যাশকে একটা চিঠি দিয়ে বলে পোস্ট করে দিতে। চিঠিটা তার পকেটেই রয়ে গেছে।
এরপর গাড়ি গ্যারেজে তুলে, পোশাক বদলাতে গিয়ে ন্যাশ দেখে চিঠিটা সে পোস্ট করতে ভুলে গেছে।
তাতে ঠিকানা লেখা রয়েছে–
মিঃ এডুইন বার্নেট,
আইন উপদেষ্টা,
টোয়েনটিথ স্ট্রীট
লস এঞ্জেলস।
২. ন্যাশ ডেসটারের অনুরোধ
গত কয়েকদিন ধরে ন্যাশ ডেসটারের অনুরোধে তার পাশের ঘরে শুচ্ছে।
হয়তো ডেসটার নিজের নিরাপত্তার জন্যে কিংবা হেলেনের শয়তানীর কিছু আঁচ পেয়ে ন্যাশকে তার পাশের ঘরে শুতে বলেছে।
একদিন ন্যাশকে ডেসটার ডেকে পাঠায়। ডেসটারের ঘরে যেতে ন্যাশকে সে বসতে বলে। আর বলে, হেলেনকে আমি এখানে আসতে বলেছি?
ন্যাশ চলে যেতে চায় কিন্তু ডেসটার তাকে জানায়, তুমি আমাদের কথাবার্তার সাক্ষী থাকবে।