–জানি। বাড়ির কোন উইল আছে? ভবিষ্যৎ সম্পত্তির মালিক কে হবে? আর ইনস্যুরেন্সের নমিনি কে?
–সম্ভবত হেলেন।
–এটা কি তোর বন্ধু বলেছে?
–ও অনুমান করেছে।
–ওর অনুমানটা মিথ্যে।
–হঠাৎ তুই একথা বললি কেন?
–পরে তোকে সব বলবো। এখন রাখছি।
পরে ন্যাশ নির্দিষ্ট কফিবারে গিয়ে ড্রাইভারের সঙ্গে দেখা করে।
তারপর ড্রাইভার তাকে লরেন্সের বাড়িতে সাহেবের গাড়ি করেই পৌঁছে দেয়। ড্রাইভার কিছুক্ষণের জন্যে বাইরে বেরিয়ে যায়।
লরেন্সের বয়স বছর চল্লিশ হবে।
এক কামরার ফ্লাট। ঘরের মেঝেতে ফাটল, দেওয়ালে ছোপ আসবাব বলতে একটা লোহার খাট আর একটা আলনা।
লরেন্স বলে, তুমি কতদিন হল ও বাড়িতে কাজ করছো?
-এই তো কদিন হলো।
–খুব সাবধানে থাকবে।
–এ কথা বলছো কেন? তুমি ওখান থেকে স্বেচ্ছায় এসেছে না পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলে?
–আমি বাধ্য হয়েছিলাম।
–কেন?
–হেলেনের জন্যে।
–কেন ও তোমায় কি করেছিল?
করতে চেষ্টা করেছিল, পারেনি। সাহেবের মদে চুর হয়ে থাকাও ঐ হেলেনের জন্যে। ও একটা শয়তানি।
খুলে বল।
-কদিন চাকরি করার পর হেলেন একদিন আমার ঘরে এসে বলল, আমরা আর ড্রাইভার রাখতে পারছি না, তোমায় চলে যেতে হবে। তার জন্যে তোমায় একশো ডলারের এই নোটটা দিচ্ছি, তুমি ড্রাইভার ভালো, তোমার কাজ জুটে যাবে।
-নোটটা তুমি নিলে?
–না নিইনি, নিলে কপালে হাজতবাস ছিল।
–হেলেন আমাকেও একটা নোট দিতে চেয়েছিল। আমি নিইনি।
–ভাল করেছে। নোটটা আমায় দেবার সময় হেলেন আলপিন দিয়ে ওটা ফুটো করে দিয়েছিল।
–আলপিন দিয়ে কেন?
-একটা বদ উদ্দেশ্য ছিল, প্রথমটা আমি দেখতে পাইনি। পরে নোটের কোণের দিকে আমার চোখ পড়ে। বাণ্ডিল করার জায়গায় থাকলে তবু একটা কথা ছিল। নোটটা আমি পুড়িয়ে ফেলি। পুড়িয়ে ছাইটাও ফেলে দিয়েছি।
–একশো ডলারের নোট পুড়িয় ফেললে? এসবের কারণ কি?
-ওখানকার কাজের লোকটা আমায় বলেছে এবং আমার অনুমানই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।
–কি বলেছে ও?
–আমার ওখান থেকে হেলেন পুলিশে খবর দিয়েছে। বলেছে, ওর একশো ডলারের একটা নোট চুরি গেছে। যথারীতি পুলিশ এল। হেলেনই আমায় দেখিয়ে দিয়েছিল। সত্যি বলতে কি, আমার কাছে নোটের কোন প্রমাণ না থাকলেও আমি বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম। পুলিশ হেলেনকে জিজ্ঞেস করেছিল নোটটা আপনি দেখলে চিনতে পারবেন?
নিশ্চয়ই। হেলেন বলেছিল, ওটা একেবারে চকচকে নোট ছিল। আর নোটের মাথার দিকে পিন দিয়ে ফুটো করা ছিল।
-ওটা কি আপনি করেছিলেন?
–না। নোটটা হাতে পাবার সময়ই আমি ওরকম দেখি।
পুলিশ তখন তন্নতন্ন করে আমার ঘর খুঁজলো, কিন্তু কিছুই পেল না। পুলিশ অফিসার দুঃখিত বলে বিদায় নিল। আমিও আর দেরী না করে পালালাম, কারণ হেলেন তখন রাগে জ্বলতে জ্বলতে আমাকে বলেছিল ঠিক আছে, এর প্রতিশোধ আমি নেব। না পালালে বিপদে পড়তাম।
-ন্যাশ গম্ভীরভাবে সব শুনলো৷ তারপরে বিদায় নিল। বাইরে বেরিয়ে চারদিকটা তাকিয়ে দেখে নিল। ধারে-কাছে কাউকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বাড়ি ফিরে এসে ন্যাশের মনে একরাশ চিন্তা এসে জড়ো হলো।
ন্যাশ মনে মনে ঠিক করল যে, এবার হেলেন শয়তানি করলে সে কিছুতেই সহ্য করবে না। হেলেনকে কোনরকম অন্যায় করতে দেখলে, সে তার মুখের গ্রাস কেড়ে নেবে।
হঠাৎ ন্যাশের কি মনে হলো গ্যারেজে গিয়ে হাজির হল। গ্যারেজের বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে দেখল হেলেনের স্ট্যাডিলক গাড়িটা ওখানে নেই।
বাড়িতে কেউ না থাকায় ন্যাশ সলিকে ফোন করল। সলি তার অফিসের বন্ধু। পুরো নাম জ্যাক সলি।
-হ্যালো, অপরপক্ষের গলা।
–আমি ন্যাশ বলছি।
–খবর কি তোমার?
–আমি মিঃ আর্ল ডেসটারের বাড়িতে ড্রাইভারের চাকরি নিয়েছি। ওর স্ত্রীর নাম হেলেন। বয়স ছাব্বিশের মতন।
-দেখতে কেমন?
–সহজে চোখ ফেরানো যাবে না। তবে হেলেন মোটেই সুবিধের নয়–খল, নিষ্ঠুর। অন্য জাতের মেয়ে।
–তাকে তোমার যৌবন দিয়ে তৃপ্ত করবে।
আমি শুনেছি, হেলেন ওর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। ওর তুলনায় বয়স অনেক কম। ওর পাশে বড় বেমানান লাগে।
-ঠিক আছে, তাহলে তুমিই হয়ে উঠলে নায়ক।
–শোন, গোপনে তোমাকে হেলেন, তার আগের স্বামী এবং মিঃ ডেসটারের সম্বন্ধে খোঁজ নিতে হবে। আর কদিনের মধ্যেই খবরটা তোমাকে জানাতে হবে।
-পারবে। তার জন্যে পারিশ্রমিক?
পাবে। পাঁচশো ডলার দেবো।
–রাজী। তবে একটা শর্ত আছে। এতে অফিসের সঙ্গে কোন সম্পর্ক থাকবে না, টাকাটা পুরো আমাকেই দিতে হবে।
–আমার আপত্তি নেই। ছাড়ছি।
রিসিভার নামিয়ে রাখল ন্যাশ।
এরপর সে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
তারপরের দিন চারটে নাগাদ ন্যাশ গাড়ি নিয়ে স্টুডিওতে গেল। এসময় ডেসটার তাকে আসতে বলেছে।
এরপর নির্দিষ্ট ঘরে গিয়ে ন্যাশ দেখে ডেসটার টেবিলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।
হঠাৎ কি খেয়াল হতে ন্যাশ ডেসটারের ড্রয়ার ঘাঁটতে লাগল। প্ল্যাস্টিকের খাপে মোড়া একটা ফোল্ডারের ভেতর সে একটা দলিল পেল। ক্যালিফোর্ণিয়া জাতীয় বীমা কোম্পানীর সাড়ে সাত লাখ ডলারের একটা জীবনবীমা পলিসি। দারুণ ব্যাপার চমকে ওঠার মতো খবর।
ন্যাশ বুঝতে পারে, হেলেন কেন ডেসটারকে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল।
ন্যাশ ভাবলো হেলেন এবার ডেসটারের কোন ক্ষতি করতে চাইলে সেও ছেড়ে দেবে না। সে তক্কেতক্কে থাকবে।