ন্যাশের প্রথম নজর যায় ক্যাডিলাকটার দিকে। টু-সিটার গাড়ি। ঝকঝকে নতুন।
এরপর ন্যাশ তাকালো বুইক টার দিকে। এটা ততটা নতুন নয়।
ন্যাশ রোল-টাকে জায়গামতো ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
শোবার ঘরটা তেমন পরিষ্কার নয়। কোণায় কোণায় নোংরা জমে আছে। যাক্, এখন তার একটু শোওয়া দরকার।
ন্যাশের বেরিলর কথা মনে পড়ল। বেরিল ওর বন্ধু। সে ওর ওখানে থাকতো। চাকরি-বাকরি মন্দ করে না। ছোট্ট একটা অ্যাপর্টমেন্টে থাকে। ইদানিং সে এসে জুটেছিল।
বেরি এই চাকরির কথা শুনলে খুশী হবে। একটা ফোন করতে পারলে ভালো হতো। কাল কালেই সে বেরিয়ে সুখবরটা দেবে।
ন্যাশ শোবার বন্দোবস্ত করে। ঘরটা ছোট হলেও মন্দ নয়। একটা আলনায় কিছু জামা-কাপড় ঝুলছে। হয়তো আগের ড্রাইভারের হবে। কেমন যেন একটা সন্দেহ জাগছে।
ন্যাশ ভাবে ঐ ড্রাইভারের খোঁজ তাকে করতেই হবে। জানতেই হবে তার আসল ঘটনা। ন্যাশ আরো ভাবে, হেলেন কি শুধু খরচের কথা ভেবেই তাকে ড্রাইভারী করতে দিতে চায় না? কিন্তু যাদের এত পয়সা..নাকি এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য কাজ করছে? বাড়িতে কি কোন ঝি-চাকর নেই? হয়তো কাল ভোরে আসবে। তাদের কাছ থেকে খবর পাওয়া যাবে। এবার সে শোবার জন্য তৈরী হচ্ছে। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। সে ভেজানো দরজা খুলে দেখলো হেলেন।
-আপনাকে একটা অপ্রিয় কথা বলবো। তা শুনতে আপনার হয়তো খারাপ লাগবে, তবু না বলে পারছি না। হেলেন বলল, আমাদের ড্রাইভারের কোন দরকার নেই।
দরকার নেই?
–না।
–কিন্তু মিঃ আর্ল ডেসটার…।
–ওর কথা বাদ দিন, ও একটা মানুষ নাকি? আমি বলছি, আমাদের ড্রাইভারের কোন প্রয়োজন নেই।
–ম্যাডাম, আপনার হুকুম আমি মানতে পারছি না।
–তুমি জানো না, আমাদের টাকা-পয়সা কিছু নেই। সব ধারে চলছে।
–সে কি। কথাটা আমি মানতে পারছি না।
–দু-সপ্তাহ বাদে আর্ল-এর চাকরী থাকবে না। পাওনাদারদের দাবী মেটাতে এ বাড়ি পর্যন্ত বিক্রী করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেনাটা আন্দাজ করতে পারছো?
–আপনি হয়তো ঠিক জানেন না, তাহলে মিঃ ডেসটার আমাকে অ্যাপয়েন্ট করতেন না।
-এটা তোমার কোন পারমানেন্ট চাকরী নয়। যে কোন মুহূর্তে চলে যেতে বলা হতে পারে। আমি তাই বলছি।
-ম্যাডাম আপনার হুকুম আমি মানতে পারছি না। বৃথা ভয় দেখাবার চেষ্টা করবেন না। ডেসটার ছাড়া আমি কারুর কথা শুনতে নারাজ।
–আগের ড্রাইভার মাইনে না পেয়ে চলে গেছে।
–কিন্তু মিঃ ডেসটার বলেছেন ও পালিয়েছে।
-মাইনে না পেয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। কথা শেষ করে হেলেন কোমরে গুঁজে রাখা একশো ডলারের একটা নোট ন্যাশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই টাকাটা নাও, তোমার বখশিস, তুমি আমার স্বামীর প্রাণ বাঁচিয়েছে।
–মাপ করবেন, আমি নিতে পারবো না। আপনি আমাকে তাড়াবেন বলে এমন উঠে পড়ে লেগেছেন কেন? আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। এসব আগে জানলে আমি মিঃ ডেসটারকে বাঁচাবার চেষ্টা করতাম না।
তার মানে?
–মানেটা কি আপনার কাছে স্পষ্ট নয়? যাক, ছাড়ুন ওসব, আমার যা বোঝার তা বোঝা হয়ে গেছে। আপনি দয়া করে এ ঘর থেকে চলে যান, আমার ঘরে এত রাতে আপনাকে কেউ দেখলে আপনার মান-ইজ্জত সব যাবে।
-ঠিক আছে, আমি দেখে নেবো, বলে হেলেন চলে গেল।
হেলেন চলে যেতে ন্যাশ ভাবে, এখন থেকে তাকে হেলেন-এর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। তার সঙ্গে মেপে কথা বলতে হবে আর ওর গতিবিধির উপর নজর রাখতে হবে।
চোখে-মুখে জল দিয়ে ন্যাশ শুয়ে পড়ল। পরক্ষণেই কখন সে ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন একটু দেরীতে ঘুম ভাঙায় ন্যাশ তাড়াতাড়ি কিচেনে চায়ের ব্যবস্থা করতে গেল।
হঠাৎ হেলেন ঘরে ঢুকে ঝাঁপিয়ে বলল, তুমি কিচেনে কেন? কে তোমাকে এখানে ঢুকতে বলেছে?
মিঃ ডেসটার আমাকে এ অধিকার দিয়েছেন। উনি আমার মনিব।
–রাখো তোমার মনিবের কথা! এ বাড়িতে আমি যা বলছি তাই হবে।
–আপনার কথা আমি শুনলাম, তবে মানতে পারবো না। বলে ন্যাশ কিচেন ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ফেরার পথে ফোন দেখতে পেয়ে তার বেরিলকে ফোন করার কথা মনে পড়ল। চারদিকে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই। ডায়াল করল।
-হ্যালো, বেরিল ফোন ধরেছে।
–আমি ন্যাশ বলছি।
–বল, বল। কাল থেকে একেবারে বেপাত্তা কেন? এরকম তো কোনদিন করিস না।
–একটা কাজ পেয়েছি। এখানে কতদিন থাকতে হবে জানি না। হেলেনের ব্যাপারটা খুলে বলল। তারপর বলল, কিন্তু এখানে এসে মহা ফাঁপরে পড়েছি। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।
–তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে, ও একজন সংঘাতিক মেয়েছেলে। আচ্ছা, ও কি স্বামীসঙ্গ পায় না?
-মনে হয় না।
–কোন বয়ফ্রেণ্ড আছে কিনা খোঁজখবর নে।
–ঠিক আছে, যখন যেমন ঘটবে তোকে জানাবো। এখন ছাড়ছি।
ন্যাশ আস্তে আস্তে ঘরে গিয়ে ঢুকল। ওর নজরে পড়ল একটা ছোট টেবিলের ওপর জামাকাপড় উঁই করে চাপা পড়ে আছে একটা ফোন।
একটু পরে ফোনটা বেজে উঠল।
হেলেন ফোনে তার কাছ থেকে জানতে চাইল সে চলে যেতে রাজী আছে কিনা।
ন্যাশ জানালো, সম্ভব হচ্ছে না।
হেলেন ঝপাৎ করে রিসিভারটা নামিয়ে রাখে।
ন্যাশ ভাবতে লাগল, দুর্ঘটনাটা ঘটেনি বলে কি এখন হেলেনের সমস্ত রাগ তার ওপর গিয়ে পড়েছে?
-প্যাকার্ড-গাড়িটার নম্বর বা ড্রাইভারের মুখ সে স্পষ্ট মনে করতে পারল না।
ন্যাশ এরপর আলনার জামাকাপড়ের পকেটগুলো পরীক্ষা করল। বাজে কিছু কাগজপত্র পেল, কোন ঠিকানা পেল না। সে নিশ্চিত হল, ওগুলো আগের ড্রাইবারের।