ন্যাশের হাতে দস্তানা পড়াই আছে। সেই হাতে পকেট থেকে পিস্তল বের করে খোলা জানালা দিয়ে একটা গুলি ছোঁড়ে।
তারপর ন্যাশ দ্রুত জানালার ছিটকানি লাগিয়ে ডেসটারের মৃতদেহের পাশে পিস্তলটা রেখে দরজাটা বন্ধ করে বেরিয়ে আসে। নিজের ঘরে চলে আসে, তার দস্তানা, পাজামায় রক্ত লেগেছে। সে তাড়াতাড়ি সেগুলো জাজিমের তলায় রেখে দেয়। এরপর পোশাক পাল্টে নেয়। নীচে নেমে এসে জুলিয়ানকে ফোন করে ডেসটারের আত্মহত্যার কথা জানালো। জুলিয়ান তার কাছে আসছে বলে জানাল। সে খুব চমকে গেছে।
এরপর ন্যাশ ব্রমউইচকে ফোন করল। একই খবর তাকে দিল।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ব্রমউইচ পুলিশ ভ্যানে হাজির হলো। লুইসকে পাহারায় দেখতে না পেয়ে সে অবাক হলো। পরে সে তাকে খুঁজে বার করল।
এরপর ব্রমউইচ জুলিয়ানের খোঁজ করতে ন্যাশ জানালো সে গ্যারেজ ঘরে শুতে গিয়েছে। আজই ওখানে গেছে। তার এখানে শুতে ভয় করছিল তাই ওখানে শুতে গেছে। প্রথমে সে চলে যেতে চাইছিল, শেষে আমি অনেক করে বলতে তবে ওখানে শুতে রাজী হলো। জুলিয়ান আসতে ওকে জিগ্যেস করায় ও একই কথা জানালো।
–তুমি কোন গুলির আওয়াজ শুনেছো?
–শুনেছি। জুলিয়ান বলে।
–কাল তোমার সঙ্গে ন্যাশ ছিল।
–না।
এরপর ন্যাশের দিকে তাকিয়ে ব্রমউইচ জিগ্যেস করে, তুমি গুলির আওয়াজ শুনেছো?
–নিশ্চয়ই স্যার, ন্যাশ ভেতরে ভেতরে কাঁপছে।
–তারপর কি করলে।
–স্টাডিরুমে গিয়ে দেখি মিঃ ডেসটার এলিয়ে পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে জুলিয়ানকে ফোন করলাম। তারপর পুলিশে ফোন করি।
তারপর ডাক্তার ব্রমউইচের নির্দেশে মৃতদেহ পরীক্ষা করে এবং এক সময় ওরা লাশ নিয়ে চলে গেল।
পুলিশ চলে যেতে জুলিয়ান ন্যাশকে বলল, তুমি এখানেই থাকো, কোথাও চলে গেলে পুলিশ আরো বেশী সন্দেহ করবে।
–ঠিক বলেছো। ঝামেলা মিটলে আমি রোমে চলে যাবো। তুমি আমার সঙ্গে যাবে তো। ন্যাশ জুলিয়ানকে আদর করে বলে। জুলিয়ান এতে উত্তেজিত হয়ে ওকে বেডরুমের দিকে টানতে থাকে। জুলিয়ানকে সে অখুশী করতে পারে না। জুলিয়ান ঘুমিয়ে পড়ে।
এরপর ন্যাশ বৈঠকখানায় আসে। সে থমকে দাঁড়ায়। দেখে একটা ঢ্যাঙা লোক ওখানে বসে আছে। মুখে সিগারেট, হাতে মদের গ্লাস। কে লোকটা? ন্যাশ লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার নাম জানতে পারি? কোত্থেকে আসছেন?
–নিশ্চয়ই। আমি স্টিভ হারমাস। বীমা কোম্পানী থেকে এসেছি। ইনভেস্টিগেশনের ব্যাপার।
ইতিমধ্যে ম্যাডক্স এসে হাজির হলো।
ন্যাশকে দেখে ম্যাডক্স বলল, তুমি কোথাও বেড়িও না, বাড়িতেই থাকো। পরে তোমাকে দরকার হতে পারে।
ন্যাশ মাথা নেড়ে চলে গেল।
ম্যাডক্স এবার স্টিভকে বলে, বলো তোমার কি জিজ্ঞাস্য?
স্টিভ বলে, আমার প্রধান প্রশ্ন হলো, এটা খুনের না আত্মহত্যার ঘটনা? আত্মহত্যার ব্যাপারে বীমা কোম্পানীকে কোন টাকা দিতে হবে না। তবে খুনের কেসে টাকা দিতে হবে।
ম্যাডক্স বলে, দাবী ন্যায্য হলে, টাকা মিটিয়ে দিতে হবে, তাতে কোম্পানীরই সুনাম বাড়বে। তবে খুনের কেসে খুনীকে খুঁজে বার করতে হবে।
স্টিভ জানালো, এ বাড়ির সব জানালাগুলো বন্ধ ছিল, কেবল ছাতা-বর্ষাতি রাখার ঘরের একখানা জানালা ছাড়া। তবে সারারাত সে ঐ জানলার কাছে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকায়, সে নিশ্চিত যে ঐ জানালা দিয়ে কেউ ঢোকেনি। তবে ব্যাপারটাকে যদি কেউ আত্মহত্যার ঘটনা বলতে চায়, তবে সে মানতে নারাজ, কারণ মাথায় গুলি করলে সারা ঘর রক্তে ভেসে যেত। এক্ষেত্রে রক্ত পড়েছে সামান্যই।
ম্যাডক্স মাথা নাড়ে। বলে, আমি তোমার কথা মানতে নারাজ, কারণ আমার প্রথম থেকে মনে হচ্ছে টাকার লোভে এটা একটা জালিয়াতির চেষ্টা। তোমার কিছু বলার আছে?
–আঙুলের ছাপের প্রশ্ন। জানালা দিয়ে যদি ডেসটার ঢুকতো তাহলে তার আঙুলের ছাপ থাকতো। আত্মহত্যার চিঠি, টাইপরাইটার, মদের গ্লাসে, বোতেলে, পিলে কেহও আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। ডেসটার যদি দস্তানা পরা অবস্থায় এটা করে থাকে, তাহলে দস্তানা গেল কোথায়?
—হ্যাঁ, এটা চিন্তার কথা।
তাছাড়া ডেসটার বউয়ের সঙ্গে যে পোশাকে বেরিয়েছিল, মৃত ডেসটারের পরণে কিন্তু সে পোশাক নেই।
স্টিভ বলে, এ ব্যাপারে বলবো, বনবিভাগের কুঁড়েতে যদি ডেসটার হেলেনকে খুন করার আগে পোশাক বদল করে, তবে সেই পোশাকগুলোই বা গেল কোথায়? পুলিশ বনদপ্তরের আশেপাশে এ জামাকাপড় খুঁজছে। স্টিভ একটু হেসে বলে, এটা মিসেস ডেসটারের কোন গুপ্ত প্রেমিকার কাজ নয়তো?
স্টিভ বলে, খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে সাজাতে পারলে কোম্পানীকে সাড়ে সাত লক্ষ ডলারের দাবী মেটাতে হবে না ঠিকই কিন্তু প্রিমিয়াম যা দেওয়া আছে, তাতে এক লাখ চার হাজার জলার ফেরৎ দিতেই হবে।
ম্যাডক্স বলে, এখন বীমার টাকাটাই আসল লক্ষ্য নাও হতে পারে। ঐ এক লাখ চার হাজার ডলারই লক্ষ্য। এখন দুটো জিনিষ জানা খুব প্রয়োজন, এক মিসেস ডেসটারের কোন গুপ্ত প্রেমিক ছিল কিনা। দুই ডেসটারের ওয়ারিশান কে?
এবার ম্যাডক্স ন্যাশকে ডেকে পাঠায়।
–আচ্ছা, মিঃ ন্যাশ, মিসেস ডেসটারের সঙ্গে পুরুষ বন্ধুকে ইদানিং ঘোরাফেরা করতে দেখছো?
ন্যাশের গলা শুকিয়ে আসে, সে বলে, হ্যাঁ, সপ্তাহখানেক আগে ব্রাউন ডার্বি–নামের রেস্তোরাঁ থেকে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে মিসেস ডেসটারকে বেরুতে দেখেছি। বয়স বছর পঁয়ত্রিশ হবে। লম্বা, ফর্সা দেখতে বেশ সুন্দর।