ন্যাশ এরপর একটা খাম ছিঁড়ে উইলটা পড়ে এবং তার পরে তার চক্ষু চড়কগাছ।
–আমার মৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারবে না, ন্যাশ মুখ শুকনো করে বলে।
জুলিয়ান বলে, তুমি একথা বলছো কেন?
ন্যাশ তখন উইলটা পড়ে, ডেসটার লিখেছে–ন্যাশ তার জীবন বাঁচিয়েছে। হেলেন তাকে অনেকবার মারার চেষ্টা করেছে, পারেনি। দেনাপত্তর শোধ করে যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে, তা সবই ন্যাশ পাবে। জীবনবীমা কোম্পানী যদি তার মৃত্যুর পর কিছু টাকা দেয় তাও ন্যাশ পাবে। পড়া হয়ে যেতে ন্যাশ ঠিক করে, এটা বার্নেটকে দেওয়া চলবে না।
তখন সে ঘরের মেঝেতে উইলটাকে পুড়িয়ে ফেলে ছাইটা পায়খানায় ফেলে, বেশ কয়েকবার সিসটেনে টান মারল। জলের তোড়ে ছাইটা কোথায় মিলিয়ে গেল।
এরপর খানিকটা স্বস্তি পেয়ে ন্যাশ জুলিয়ানকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। করতে বাধ্য হচ্ছে কারণ উইলের ব্যাপারটা জুলিয়ান জেনে ফেলেছে। খামে কি আছে ওকে না জানালেও হয়তো একথা অন্যকে বলে বসতো।
জুলিয়ান আনন্দে বিভোর হয়ে ওঠে। ন্যাশ তাকে প্রেমের কথা বলে চলেছে আর বেশী করে মদ খাওয়াচ্ছে। একসময় ও বেহুশ হয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। ন্যাশের মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে, যেটা জুলিয়ানকে জানানো ঠিক হবে ভেবেই এই ব্যবস্থা তাকে নিতে হয়েছে।
ন্যাশ লকারের পিস্তলটায় কয়েকটা গুলিও ভরে নিয়েছে। পরে কাজে লাগবে জেনে।
ন্যাশ ঘর থেকে বেরিয়ে দরজাটা ভেজিয়ে দেয়।
জানালা দিয়ে দেখে, ব্রমউইচ চলে গেল। যাবার আগে লুইসকে যেন ভাবভঙ্গীতে পাহারায় বসে থাকতে বলল। ন্যাশ মনে মনে ওদের চোদ্দ পুরুষ উদ্ধার করতে থাকে।
খানিকক্ষণ পরে ন্যাশ দেখে লুইস টুলে বসে ঝিমোচ্ছে।
ন্যাশ স্টাডিরুমে ফিরে এল। ডেসটারের কাগজপত্র একটু আগে ঘেঁটেছিল, সেগুলো গুছিয়ে রাখল। সে দরজাটা ভেজিয়ে দিল। একজোড়া দস্তানা হাতে পরে নিয়ে সে একটা চিঠি টাইপ করল। টাইপের বয়ান হল–হেলেনকে ডেসটার এত জোরে মারতে চায়নি। হেলেন মারা যেতে অনুশোচনায় তার মন ভরে যেতে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। চিঠিটা টাইপরাইটারে লাগিয়ে রেখে সে আলো নিভিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। জুলিয়ানের ঘরে এল। সে এখনও ঘুমোচ্ছে।
হঠাৎ ন্যাশ দেখল, লুইস বাড়ির মধ্যে চলে এসেছে। সে মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে এক গাল হেসে বলল, আসুন স্যার। স্যার বলায় লুইস খুশী হলো। ন্যাশ তাকে স্যাণ্ডউইচ হুইস্কি খাওয়ালো। এমন অভ্যর্থনা লুইস মোটেই আশা করেনি। এরপর সে চলে গেল।
লুইস চলে যাবার পর জুলিয়ান ন্যাশকে জিজ্ঞেস করল, লুইস এসেছিল কেন?
–কি জানি কি মতলবে এসেছিল।
–আমার পুলিশ-টুলিশ বড্ড ভয় করছে। আমার এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
-ও কথা বলে না ডার্লিং, মুখে ন্যাশ একথা বললেও মনে মনে সে চাইছে জুলিয়ান বাড়ি চলে যাক। কিন্তু এককথায় রাজী হয়ে গেলে ও আবার সন্দেহ করতে পারে। এরপর ন্যাশ বলে, জুলিয়ান তুমি কোথায় থাকতে চাও বলো।
জুলিয়ান ইতস্তত করে বলে, আমি…আমি…তোমার গ্যারেজ ঘরে থাকতে চাই।
–গ্যারেজ? তুমি শোবে? না না তা হয় না।
–কেন হয় না? জুলিয়ান বলে।
–ঠিক আছে, মানতে পারি, তবে শুধু আজকের দিনের জন্য।
ডিনারের পর জুলিয়ানকে গ্যারেজের ঘরে ছেড়ে দিয়ে আসে ন্যাশ।
বাড়ি ফিরে ন্যাশ ঘরে পায়চারী করতে থাকে। কখন লুইস ঘুমিয়ে পড়বে সেই অপেক্ষায় আছে সে। এখন রাত একটা। একসময় লুইস ঘুমিয়ে পড়ল। ন্যাশ খুব আস্তে আস্তে নীচে নেমে এসে ফ্রিজ থেকে ডেসটারের মৃতদেহ বার করে মেঝেতে রাখে। তারপর রান্নাঘর থেকে পেরিয়ে ডেসটারের স্টাডিরুমের আলো জ্বালিয়ে রেখে এসে ওর দেহটা কোনরকমে টেনে ঐ ঘরে বয়ে নিয়ে আসে। ফ্রিজ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে লাশটা ক্রমশ নরম হয়ে আসছে। ডেসটারের কপালের ক্ষত চুঁইয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এরপর সে আলো নিভিয়ে রান্নাঘরে ফিরে আসে।
ন্যাশ ফ্রিজটা খোলে। ফ্রিজের মধ্যে, কার্পেটের উপর দু-এক ফোঁটা রক্ত পড়েছে। সে একটা কাপড় দিয়ে রক্তগুলো মুছে দিল।
হঠাৎ কাঁচ করে একটা শব্দ হতে ন্যাশ সাবধান হয়ে ওঠে। রান্নাঘরের আলো নিভিয়ে ভাড়ার ঘরের দরজার আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতে একটা হুইস্কির বোতল। ভাবটা এমন যেন এই রাতে সে মদ খেতেই এখানে এসেছে। তার মনের মধ্যে কোন কিছু পাপ নেই।
লুইস দরজায় আচমকা ধাক্কা দেয়। তার হাতে পিস্তল। দরজাটা খুলে যায়। সে পিস্তল উচিয়ে ভাঁড়ারের দরজার দিকে ঘুরে চেঁচিয়ে ওঠে, মিঃ ডেসটার, মাথার ওপর হাত তুলে বেরিয়ে আসুন। কোন সাড়া-শব্দ নেই। লুইস একটু অপেক্ষা করে কোন জবাব না পেয়ে দু-এক সেকেণ্ড অপেক্ষা করে সে ভঁড়ার ঘরের দরজায় লাথি মারে। ফলে দরজাটা খুলে গেল। ওর পিছনটা ন্যাশের দিকে ফেরানো।
ন্যাশ মরীয়া হয়ে ভাবে তার এখন একটা কিছু করা দরকার। সে লুইসের মাথার ওপর দিয়ে হুইস্কির বোতলটা অপর দিকের দেওয়ালের দিকে ছুঁড়ে মারে। এতে লুইস হকচকিয়ে যায়। চকিতে ন্যাশ তার পিস্তলের বাঁট দিয়ে সজোরে মাথায় আঘাত করে। লুইস পড়ে যায়। ন্যাশ আবার আঘাত করতে সে লুটিয়ে পড়ে।
এরপর ভাঁড়ার ঘরের ছিটকিনি তুলে ন্যাশ স্টাডিরুমে ঢুকে ডেসটারের গায়ে হাত দিয়ে দেখে দেহ নরম হয়ে আসছে। কপালের ফুটো দিয়ে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে।