ন্যাশ ফ্রিজটা ফাঁক করে দেখে নেয় দেহটা অবিকৃতই আছে, তারপর বন্ধ করে দেয়। ফ্রিজের সুইচটা অফ করে দেয়।
বাগানে গিয়ে সে দেখে ডেসটারের দেহটা কোথায় ফেলে রাখা যায়। এরপর রাত প্রায় বারোটায় সে জুলিয়ানের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
পরের দিন দুজনেরই বেলা করে ঘুম ভাঙলো।
ন্যাশ জুলিয়ানকে ডেসটারের কাগজপত্র গোছানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে বলল।
জুলিয়ান রাজী হলো। কাগজপত্র ঘেঁটে তারা অনেকগুলো বিল আর একটা মুখআঁটা খাম পেল। জুলিয়ান জিগ্যেস করে, ওটা কি?
-উইল, ডেসটারের উইল। এটা বার্নেটকে দিতে হবে। ন্যাশ সাধু সাজে।
–হ্যাঁ। সেটা মনে হয় গণ্ডগোলে। নইলে স্বামী-স্ত্রী ওভাবে কখনো গা ঢাকা দেয়?
হঠাৎ বাড়ির সামনের দৃশ্যটা পাল্টে গেল। গাড়ি থেকে নামল উকিল বার্নেট, পুলিশের বড় কর্তা ইভান্স, ব্রমউইচ, সাব ইন্সপেক্টর লুইস, বীমা কোম্পানীর মিঃ ম্যাডক্স।
বার্নেট ন্যাশের সঙ্গে ম্যাডক্স-এর পরিচয় করিয়ে দিল।
-আচ্ছা মিঃ ডেসটার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাই না?
–হ্যাঁ।
সারাদিন উনি কি করতেন?
–প্রায় সারাক্ষণই উনি ঘুমিয়ে থাকতেন। বাইরের কেউ ওঁর ঘরে গেলে ক্ষেপে যেতেন।
–ওঁর দেখাশোনা কে করতেন?
–মিসেস ডেসটার, মাঝে মধ্যে আমিও।
–আপনাকে দেখলে উনি কিছু বলতেন না?
–না, আমি তো বাইরের লোক নই।
–মিঃ ডেসটারকে চিকিৎসার জন্যে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে?
—হ্যাঁ, স্যানটোরিয়ামে।
-কে নিয়ে গিয়েছিল তাকে?
–মিসেস ডেসটার।
–তখন আপনি সঙ্গে যাননি?
–না, কারণ তখন আমি বাড়ি ছিলাম না।
–কোথায় ছিলেন?
–মিসেস ডেসটারের জন্য ঘরের কিছু কেনাকাটা করতে গেছিলাম।
মিসেস ডেসটারকে কাজে কে সাহায্য করতে?
মিস জুলিয়ান।
একটু পরে জুলিয়ান এল।
-আপনি এ বাড়িতে কতদিন আছেন?
–বেশী দিন নয়, সপ্তাহখানেক।
–মিঃ ডেসটারকে কে স্যানটোরিয়ামে নিয়ে যায়?
–মিসেস ডেসটার।
–আপনি তখন বাড়িতে ছিলেন?
–হ্যাঁ।
–সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় মিসেস ডেসটার আপনার সঙ্গে কোন কথা বলেছিলেন?
–সিঁড়িতে বেশী পাওয়ারের আলো নিভিয়ে দিতে বলেছিলেন। কম পাওয়ারের আলো জ্বলছিল।
–তখন মিঃ ডেসটারের গায়ে কি ধরনের পোশাক ছিল?
–উটের লোমের কোট, চওড়া কানওয়ালা টুপী, ধূসর স্যুট, সোয়েডের জুতো।
মিঃ ন্যাশ তখন বাড়িতে ছিলেন?
–না। ওরা বেরিয়ে যাবার পর ফেরে। ওরা বেরিয়ে গেছে শুনে ও বেরিয়ে যায়।
–ঠিক আছে, আপনি যেতে পারেন। জুলিয়ান বিদায় নেয়।
ম্যাডক্স ব্রমউইচ বলে, মিঃ ডেসটার স্ত্রীকে বিশ্বাস করতেন না। তিনি নিজেই আত্মহত্যার শর্ত বাতিল করেন। মিসেস ডেসটার টমলিন নামের একটা লোকের রক্ষিতা ছিলেন। টমলিন বিশ হাজার ডলারের বীমা করে প্রথম প্রিমিয়াম দেবার পরেই জানালা দিয়ে পড়ে মারা যান। নমিনি করে মিসেস ডেসটারকে। ঝামেলা এড়াতে মিসেস ডেসটার সাত হাজারেই তার দাবী মিটিয়ে নেয়।
এর আগে মিসেস ডেসটার এক বুড়ির সঙ্গিনী হিসেবে কাজ করতেন। বুড়ি পাঁচ হাজার ডলারের বীমা করেছিল এবং নমিনি ছিল মিসেস ডেসটার। কয়েকদিন বাদে দেখা গেল, বুড়ি সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়ে ঘাড় মটকে পড়ে রয়েছেন। মিসেস ডেসটার টাকা নিয়ে সরে পড়েন। অতএব মিসেস ডেসটার ডবল খুনী। তিনি যে মিঃ ডেসটারের জীবনবীমার ব্যাপারে কিছু জানবেন না এটা বিশ্বাস করা কঠিন। মিসেস ডেসটার যদি মিঃ ডেসটারকে খুন করতেন অন্য কথা, মিসেস ডেসটারকে কে খুন করলো? মিঃ ডেসটারই বা কোথায়? কিডন্যাপ করে তাকেও কি খুন করা হয়েছে? আমার ধারণা এই নিখুঁত পরিকল্পনার পেছনে তৃতীয় এক ব্যক্তির মাথা কাজ করছে। তাকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করুন। আর এ বাড়িতে পাহারার ব্যবস্থা করান। মিঃ ডেসটার কি উইল করে গেছেন? গেলে ওয়ারিশাণ কাকে করেছে, এগুলো জানা দরকার। ম্যাডক্স আবার ন্যাশকে ডেকে পাঠায়।
ম্যাডক্স তাকে জিজ্ঞেস করে, মিঃ ডেসটার কি কোন উইল করে গেছেন?
–উইল? না স্যার, তা আমার জানা নেই।
–ঠিক আছে, এবার আমরা উঠবো।
তারা সকলে বিদায় নেয়।
শেষটা ভালোয় ভালো না মেটা পর্যন্ত ন্যাশ ভালো করে ঘুমতে পারে না। বিছানায় ছটফট করে।
তার পরের দিন ব্রেকফাস্টের পর ন্যাশ জুলিয়ানকে বলে, চলো, ডেসটারের স্টাডিরুমে যাই।
-কেন ওখানে গিয়ে কি হবে?
দরকার আছে। ধরো উইলে ডেসটার যদি আমায় সমস্ত কিছু দিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো?
–ভালই তো হবে, তোমার আর কোনও অভাব থাকবে না।
–ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হবে আমাকে। কেন? ধরো, ডেসটার আমায় সমস্ত কিছু দিয়ে গেল, তাহলে ডেসটারের নিখোঁজ হওয়ার জন্য আমায় পুরোপুরি সন্দেহ করবে।
সন্দেহ? তোমাকে? কেন?
করবে এই কারণে যে, এর পিছনে আমার কোন গোপন হাত থাকতে পারে; এরকম একটা সন্দেহ করবে বই কি! ম্যাডক্স বলছে, এর মধ্যে তৃতীয় কোন ব্যক্তি চাল চেলে সাধু সেজে বসে আছে।
–তৃতীয় ব্যক্তি?
–হ্যাঁ, আমিও ভাবছি সে কে? সেজন্য উইলটা সবার আগে দেখা দরকার।
ন্যাশ একটু থেমে জুলিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবেগভরে বলে, জুলিয়ান, এইসব ঝামেলা মিটে গেলে, আমি…আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই। তুমি রাজী তো?
জুলিয়ান ন্যাশের বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে সংঘাতিক ভাবে আদর করতে থাকে। মুখে বলে, ন্যাশ! রাজী! রাজী! রাজী!