–স্যার মিসেস ডেসটারের খোঁজ আমরা পেয়েছি। তবে সে মৃত।
–ডেড? বড় সাহেবের মুখ কুঁচকে ওঠে।
–হ্যাঁ স্যার, আমরা খুব চেষ্টা চালাচ্ছি। সংবাদ মাধ্যমগুলো যেভাবে আমাদের সমার্লোচনা করতে শুরু করেছে, তা বন্ধ করতে আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করবো না স্যার।
-খবর পাওয়া মাত্রই আমাকে জানাবে।
নিশ্চয়ই স্যার। এবার বডিটা সরাতে হবে।
–ঠিক আছে, আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি।
ব্যাপার খুব ইলেও পারের খোঁজ ওঠে।
–থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার।
ব্রমউইচ ফোন রেখে দিল। ঘর ছেড়ে তারা বেরিয়ে যেতেই ন্যাশ পিপে থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। তাড়াতাড়ি ঝোঁপ-ঝাড়ের মধ্যে দিয়ে বুকে হেঁটে সে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তার হাত-পা ছড়ে যাচ্ছে। রক্তও বের হচ্ছে দু-একটা জায়গা থেকে। একটা কাঁটার তারে বাঁ-হাতের জামাটাও ছিঁড়ে গেল।
পুলিশের গাড়িটাকে চলে যেতে দেখেই মাটি থেকে উঠে একরকম দৌড়তে থাকে ন্যাশ। কোনরকমে ঢিপিটার কাছে পৌঁছে, তাড়াতাড়ি বুইক-টায় উঠে সে স্টার্ট দেয়। ভীষণ জোরে গাড়ি চালাচ্ছে সে। অনেকটা পথ পেরিয়ে সে একটা ফাঁকা জায়গায় এল।
সে পার্কিং জোন খুঁজতে থাকে। ইতিমধ্যে চুলটাও সে আঁচড়ে নিল। এভাবে বাড়িতে ঢুকলে জুলিয়ান জেরায় জেরায় তাকে অস্থির করে তুলবে। যদিও ন্যাশ তাকে ভয় পায় না। জড়িয়ে ধরে কয়েকটা চুমু খেলেই সে উত্তেজিত হয়ে পড়বে। সে ওষুধ তার জানা আছে। কিন্তু জামা কাপড়ের এমন অবস্থার সপক্ষে একটা সঠিক উত্তর তাকে খাড়া করতে হবে।
কিন্তু কি কথা বলবে? ন্যাশ ভাবতে থাকে।
একটু আগে এক পশলা বৃষ্টির ফলে রাস্তায় দু-এক জায়গায় জল জমে আছে।
ন্যাশ তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে সামনের একটা সিগারেটের দোকানের দিকে এগোতে গিয়ে ইচ্ছে করে পড়ে গেল।
সিগারেট বিক্রেতা তাড়াতাড়ি ছুটে এসে তাকে তুলে ধরে। জিজ্ঞেস করে, লাগেনি তো?
-না, তেমন লাগেনি। দু-এক জায়গা ছিঁড়ে গিয়ে সামান্য জ্বালা করছে। আমি বাড়ি গিয়ে ফাস্ট-এইড করে নেব। বলে ধন্যবাদ জানিয়ে ন্যাশ আবার গাড়িতে উঠে গাড়িতে স্টার্ট দেয়। এখন তাকে সাক্ষী-সাবুত তৈরী রেখে কাজে এগোতে হবে। যাতে সে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারে।
বাড়ি ফিরতে জুলিয়ান-কি করে তোমার অবস্থা হোল জিজ্ঞেস করায় ন্যাশ বলল, তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে পিছল রাস্তায় পড়ে গেছি। সিগারেটের দোকানের লোকটা এসে আমাকে তুলল।
–এত তাড়াহুড়োর কি আছে?
-করবো না? তোমাকে বলে গেছি এখুনি আসবো। ঐ তাড়াতাড়ি আসতে গিয়েই যত গণ্ডগোল।
-তুমি আমায় খুব ভালোবাসো না? জুলিয়ান ন্যাশকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে। ন্যাশও শরীরের ভাষায় তা জুলিয়ানকে বুঝিয়ে দেয়।
এরই মধ্যে ন্যাশ জিজ্ঞেস করে, কেউ ফোন করেছিল। জুলিয়ান মাথা নেড়ে বলে, এক পাওনাদার। ন্যাশ তখন কেউ দেখা করতে এসেছিল কিনা জিজ্ঞেস করায় জুলিয়ান বলে, উঁহু, বলে সে ন্যাশকে নগ্ন করে নিয়ে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। খানিকক্ষণ খুশীর জোয়ারের উষ্ণ খেলায় মেতে থাকার পর ন্যাশ উঠে পড়ে পাশের ঘরের বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। শরীরটাকে চাঙ্গা রাখতে সে অনেকটা হুইস্কি খেয়ে নেয়।
হেলেন মারা গিয়ে তার সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে গেছে।
ন্যাশ ভাবে, ডেসটারকে ফ্রিজে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে সে সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি। মৃতদেহটা বাগানে ফেলে রাখলে ক্ষতি কি হতো?
কোন ক্ষতি ছিল না। পুলিশ ভাবতো বউকে খুন করার পর অনুতপ্ত হয়ে ডেসটার আত্মহত্যা করেছে।
ন্যাশ আরো মদ খায়। এ মুহূর্তে সে সব কিছু ভুলতে চায়। কী দরকার ছিল ডেসটারকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর? সে তো পরবর্তীকালে নিজের মৃত্যু চাইছিল আর মরলোও। আর তাকেও ফাঁসিয়ে গেল। এখন ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে সে নিজের জালেই নিজে জড়িয়ে পড়েছে।
ন্যাশ ভাবে। এখান থেকে কি সে পালিয়ে যাবে। কিন্তু সাড়ে সাত লাখ ডলারের লোভ ছেড়ে পালাতে তার মন চায় না।
হঠাৎ ন্যাশের মনে পড়ে ব্যাঙ্কের লকারের পিস্তলটার কথা। একটু পরে সে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে, সংশ্লিষ্ট কর্মীর কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে জিগ্যেস করে যে, তার লকারের নাম্বারটার ব্যাপারে কেউ খোঁজ করতে এসেছিল কিনা।কর্মীটি জানায়, না।ন্যাশ পিস্তলটা ফেরৎ নিয়ে বুইক-টা চালিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এসে দেখল জুলিয়ান তখনো ঘুমোচ্ছে। ন্যাশ সেই সুযোগে বাইরের পোশাক বদলে বাড়ির পোশাক পরে জুলিয়ানের কাছে গিয়ে ওকে আদর করতে থাকে। জুলিয়ান জেগে ওঠে। তখন রাত নটা। দুজনে ডিনার খেতে বসলো। ন্যাশ নিজে অল্প অল্প খেলেও জুলিয়ানকে সে বারেবারে প্রচুর মদ খাইয়ে দিচ্ছে গল্পোচ্ছলে।
এরপর ন্যাশের মুখে প্রেমের বুলি শুনতে শুনতে জুলিয়ান একসময় অঘোরে ঘুমিয়ে পড়ে। ন্যাশ ওর মদের গ্লাসে ঘুমের হাল্কা ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল।
ন্যাশ চারদিকটা একবার তাকিয়ে নিয়ে ডীপ ফ্রিজের দিকে এগিয়ে যায়। ফ্রিজটা কিছুক্ষণ বন্ধ রাখলেই লাশটা স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। তারপরে বাগানে নিয়ে গিয়ে ঝোঁপের মধ্যে ফেলে রেখে শুন্যে একটা গুলি ছুঁড়ে ডেসটারের হাতে পিস্তলটা ধরিয়ে দিতে পারলেই হলো।