ন্যাশ দেওয়াল ঘড়িতে দেখল অনেক বেলা গড়িয়ে গেছে। হেলেন না আসায় তার আকাশ পাতাল চিন্তা হচ্ছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বন-বিভাগের লোকেরা কাজে এসে হেলেনকে খুঁজে পেয়েছে।
ন্যাশ বারে গিয়ে হুইস্কি খেল। ভাবে, মনটাকে চাঙ্গা রাখা দরকার।
হঠাৎ কি খেয়াল হতে সে ডায়াল করতে থাকে।
ন্যাশ বার্নেটকে ফোন করে জানাল যে, মিসেস ডেসটার এখনো বাড়ি ফেরেনি। বার্নেট জানাল, তার সঙ্গে পুলিশের বড় কর্তার আলাপ আছে। তাকে সে বলে দেবে। ন্যাশ তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখল।
ন্যাশ এবার জুলিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখল, সে সাংঘাতিক লোভনীয় অবস্থায় এখনও ঘুমিয়ে আছে। ওর কাছে নিজেকে সঁপে দেবার ইচ্ছে ন্যাশের আদৌ নেই।
এখন প্রায় সাড়ে দশটা বাজতে চলেছে। ব্রমউইচের সঙ্গে দেখা করলে হেলেনের কিছু খবর পাওয়া যেত। কিন্তু যাওয়ার আগে জুলিয়ানকে জানিয়ে না গেলে, সে ঘুম থেকে উঠে সন্দেহ করতে পারে।
ন্যাশ জুলিয়ানের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। সে ও ন্যাশকে প্রবলভাবে আঁকড়ে নিজের দিকে টানতে থাকে। ও মেয়ে দারুণ সেক্সি।
ন্যাশ তাকে জানায়, হেলেন এখনও ফেরেনি।
–ফিরবে কিনা সন্দেহ আছে। জুলিয়ান বলে।
–একথা বলছো কেন?
–কিডন্যাপ করেছে কিনা কে জানে।
–শোন, আমি এখন থানায় যাচ্ছি। এখুনি চলে আসবো।
জুলিয়ান ন্যাশকে কিছুতেই ছাড়বে না। সে কামনার তীব্র আগুনে তাকে যেন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিতে চাইছে। ন্যাশও রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। তারও কামনা বাসনা আছে। ন্যাশ ঘন্টাখানেক জুলিয়েনের উষ্ণ সান্নিধ্যে থেকে থানায় গেল।
থানায় গিয়ে ব্রমউইচের সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞেস করল, স্যার মিসেস ডেসটারের কোন খোঁজ পেলেন?
-না, এখনো কোন খবর পাইনি। কর্তা-গিন্নী একেবারে বেপাত্তা। ওঁরা দেনার দায়ে পালিয়েছে। তবে আমাদের দুজন সাইকেল পুলিশ ওদের দেখেছে।
–তখন ওরা কোথায় যাচ্ছিল?
–তা ওরা বলতে পারল না। তবে মিসেস ডেসটার রোলস গাড়িটা চালিয়ে যাচ্ছিল।
–স্যুটকেসটা পাওয়া গেছে?
–না, পাওয়া যায়ান।
–মিঃ ডেসটারের পক্ষে অসুস্থ অবস্থায় পালিয়ে যাওয়াও তো সম্ভব নয়।
তবে ধরা পড়ে যাবে।
–মিস জুলিয়ান বলছিল, কেউ ওদের কিডন্যাপ করতে পারে।
–না জানা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
–আমি চলি স্যার।
ন্যাশ থানা থেকে বেরিয়ে আসে।
রাস্তায় খানিকক্ষণ ঘুরে সে বাড়ি ফিরে আসে।
জুলিয়ান নগ্ন অবস্থায় একটা ম্যাগাজিন পড়ছিল।
ন্যাশ জানতে চায় কেউ এসেছিল?
-না।
–কেউ ফোন করেছিল?
—উঁহু, বলে জুলিয়ান ন্যাশকে জড়িয়ে ধরে খাটের দিকে টেনে নিয়ে গেল। ন্যাশও তাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। ফলে একে অপরকে চরম সুখের মাঝে মিলিয়ে দিতে থাকল।
তবু ন্যাশের মনে উৎকণ্ঠা। ফলে আর এসময় জুলিয়ানের উষ্ণ সান্নিধ্য তার ভালো লাগছে না।
ন্যাশ বেরোবার জন্যে তৈরী হতে থাকলে জুলিয়ান তাকে ছাড়তে চায় না। জুলিয়ান জেদ ধরে তাকে খেয়ে-দেয়ে যেতে হবে। লাঞ্চের পর জুলিয়ান ন্যাশকে নিয়ে আবার মেতে উঠলো। এটা সে আগেই ভেবে রেখেছিল। ন্যাশ প্রথমটা না না করেও পরে ওকে তুষ্ট করে। তারপর ন্যাশ কখন ঘুমিয়ে পড়ে। যখন ঘুম ভাঙলো অন্ধকার নেমে এসেছে। জুলিয়ানকে দেখলো, তখনও অকাতরে ঘুমচ্ছে।
ন্যাশ বুইক-টা নিয়ে বেরুলো এবং গাড়িটা একটা গোপন জায়গায় সে রাখবে যেখান থেকে সহজে কারোর নজরে আসবে না এবং কোথায় রাখবে তাও সে মনে ঠিক করে নিয়েছে।
ন্যাশ একটা ঢিপির আড়ালে বুইক-টা চালিয়ে রাখল। তার সঙ্গে সে একটা পেনসিল টর্চ এনেছে। ন্যাশ চারদিকটা আগে ভালো করে দেখে নিল। এত দূরে নিশ্চয়ই পুলিশ পাহারা থাকবে না। ধারে-কাছে কাউকে দেখতে না পেয়ে সে নিঃশব্দে হেঁটে বনবিভাগের নির্দিষ্ট ঘরটার সামনে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ ন্যাশের মনে হয়, ওখানে পুলিশ ওঁৎ পেতে বসে নেই তো? থাকলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করবে। তবু ন্যাশ ফিরে যেতে পারে না। এতটা পথ এসে কুঁড়েটা না দেখে সে ফিরে যাবে না, কপালে যাই থাক।
ঘরে ঢুকে ন্যাশ দেখল হেলেন ঘরের মাঝে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ন্যাশ বলে হেলেন কি এখন ঘুমচ্ছে? তার পায়ের শব্দ টের পায়নি?
ন্যাশ হেলেনের গায়ে হাত দিয়ে হাতটা সরিয়ে নেয়। সে চমকে উঠল। আবার সে হাত রাখে, যাচাই করার জন্যে।
ন্যাশ বুঝলো হেলেন আর বেঁচে নেই। আসলে তারই উত্তেজনার বশে জোরে মারা ঘুষিতেই হেলেন প্রাণ হারিয়েছে।
এখন তাকে এখান থেকে পালাতে হবে। ন্যাশের মধ্যে একটা মৃত্যুভয় দানা বেঁধেছে।
ন্যাশ বেরতে যাবে, এমন সময় দেখল একটা লাল আলো জ্বালিয়ে পুলিশের গাড়ি এদিকেই আসছে। এখন পালাতে যাওয়া মানে নিজেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া।
হঠাৎ ন্যাশের নজরে পড়ল দেওয়ালের দিকে চারটে মুখ খোলা পিপে রয়েছে। ওর একটাতে সে ঢুকে পড়ে।
ব্রমউইচ এবং লুইস এখানে এসে হেলেনকে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখল। তারা পরীক্ষা করে দেখল হেলেন মারা গেছে। ব্রমউইচ বলল, ভাবছি মিসেস ডেসটারকে কে বা কারা খুন করল। কেসটা যদি কিডন্যাপিং হয় তাহলে কাছে-পিঠে মিঃ ডেসটারের লাশ পড়ে থাকার কথা। ব্যাপার খুব জটিল মনে হচ্ছে।
কুঁড়ে ঘর হলেও পাশের ঘরে ফোন আছে। ব্রমউইচ বড়সাহেবকে ফোন করল।