-আমার মাথাটা গুলিয়ে যেতে লাগল, বললাম, দাঁড়ান, বুঝে নিই ব্যাপারটা। বিয়েট্রিজের… হয়ে জোয়ান বন্ধু..বেনামী চিঠি পেয়েছি যাতে অভিযোগ বিয়েট্রিজ অন্য ছেলের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়েছে, এই তো?
–ঠিক স্যার..আর তাতেই ঐ ছোকরা রেগে আগুন। বিয়েট্রিজ বলেছে, মিথ্যে কথা, কিন্তু ছেলেটা বিশ্বাস না করে মেজাজ দেখিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেছে। আর বেচারী বিয়েট্রিজ…ওকে এতো ভালোবাসতো…তাই স্যার আপনার কাছে ছুটে এলাম।
–তা আমার কাছে এসেছেন কেন?
-স্যার আমি জানি আপনিও ওরকম একটা চিঠি পেয়েছেন, তাই ভাবলাম স্যার আপনি তো লন্ডনের মানুষ, আপনি জানেন ওগুলো নিয়ে কি করতে হয়।
-আমি আপনার জায়গায় হলে পুলিশের কাছে যেতাম।
-না স্যার। পুলিশের কাছে যেতে পারবো না। কখনো পুলিশের সঙ্গে মেলামেশা করিনি, ও জিনিস আমরা কেউ কখনো করিনি।
–আমি তো আপনাকে শুধু এই পরামর্শ দিতে পারি।
মিসেস বেকার চুপ। আমার কথা শুনে তার একেবারেই মনঃপুত হয়নি। তখন আমি সামনে একটু ঝুঁকে প্রশ্ন করি, মিসেস বেকার, আপনার কোনো ধারণা আছে, এ ধরনের চিঠিগুলো কে লিখেছে?
ভেবেছিলাম কোনো নাম উল্লেখ করতে অনিচ্ছুক হবেন মহিলা, কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে ঝপ করে বলে মিসেস ক্লিট…আমাদের সকলের ধারণা স্যার, ঐ মিসেস ক্লিটই, কোনো সন্দেহ নেই।
–ক্লিট? মিসেস ক্লিট কে?
জানলাম, একজন বুড়ো ঠিকে বাগানমালীর স্ত্রী। মিলের দিকে যাবার রাস্তায় এক কটেজে থাকে।
অবশেষে তাকে বিদায় দিয়ে তার কথাগুলোই ভাবছিলাম। ঠিক করলাম, গ্রিফিথের কাছে গিয়ে সব ব্যাপরটা আলোচনা করব। সে তো ক্লিটকে চেনে।
অবশেষে গ্রিফিথের সার্জারির কাজ-শেষের সময়টা আন্দাজ করে তার সঙ্গে দেখা করলাম।
–ও হো, বার্টন যে?
আমি মিসেস বেকারের সঙ্গে কথাবার্তার বিবরণ দিয়ে তাকে আমার ধারণাটিও জানিয়ে দিলাম।
গ্রিফিথ আমাকে হতাশ করে জানালো, ব্যাপারটা অতো সরল নয়। তুমি জানো না, মিসেস ক্লিটকে এ অঞ্চলের সবাই ডাইনি মনে করে।
–কি আশ্চর্য! আমি অবাক হই।
-হ্যাঁ ভাই! এ যুগে শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ব্যাপারটা কিন্তু সত্যি। মিসেস ক্লিট এসেছে এক দিব্যজ্ঞানী পরিবার থেকে। এই অস্বাভাবিক, কিংবদন্তী মহিলা খুব সহজেই–কোনো বাচ্চা নিজের আঙুল কেটে ফেলেছে কিংবা আছাড় খেয়েছে কিংবা মাম্পসে ভুগছে, তো সে মাথা নেড়ে বলে দেয়, হবে না! খারাপ অভিশাপের হাত থেকে বাঁচতে মহিলারা ঘরে তৈরি কেক বা মধু এনে মিসেস ক্লিটকে দেয়। কুসংস্কার আর বোকামি জেনেও ওরা এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে আর ভেবে নিয়েছে সেই এ-সবের গোড়ায়।
–মিসেস ক্লিট যদি জড়িত না থাকে তাহলে চিঠিগুলো সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা—
না বার্টন, কিছুই জানি না। তবে এর থেকে কোনো ক্ষতি হতে চলেছে।
বাড়ি ফিরে দেখি মেগান হাঁটুর ওপর থুতনি রেখে সিঁড়িতে বসে আছে। বলল, আপনাদের এখানে দুপুরের খাবার খেতে পারি?
নিশ্চয়। বলে আমি রান্নাঘরের দিকে প্যারট্রিজকে জানিয়ে দিতে গেলাম। প্যারট্রিজ একবার জোরে নাক টেনে বুঝিয়ে দিল এই মেগান সম্বন্ধে তার ধারণা খুব উঁচু নয়।
আমি ফিরে এসে বললাম, আইরিশ স্টু হচ্ছে।
মেগান তার ধুলোমাখা পা-দুখানা ছড়িয়ে দিয়ে বলল, আমি নিজে মোজা রিপু করেছি।
আমি দেখলাম বিপরীত রঙের উলের একটা দলাপাকানো অংশই রিপু বলে ঘোষিত হয়েছে।
মেগান বলল, ফুটোর চেয়ে এটাই বেশি কষ্টকর।
-তাই মনে হচ্ছে। আমি সায় দিলাম, দুজনে চুপ করে রইলাম খানিকক্ষণ। বেশ সাহচর্যময় নীরবতা।
হঠাৎ নীরবতা ভেঙে ঝাঝালো গলায় মেগান বলে উঠল, আর সকলের মতো আপনিও নিশ্চয় আমাকে ভয়ানক কিছু মনে করেন?
আমি আরাম করে পাইপ টানছিলাম। ওর কথায় চমকে আমার পাইপখানা মুখ থেকে খসে পড়ল আর ভেঙে গেল। রাগ সামলে বললাম, দেখ তো কি করলে!
ও দন্তবিকশিত করে হেসে বলল, আপনাকে আমার ভালোই লাগে।
আমি ভাঙা পাইপের অংশগুলো তুলতে তুলতে বললাম, হ্যাঁ, কি যেন বলেছিলে?
আপনি কি আমাকে ভয়ানক কিছু ভাবেন?
-কেন সেরকম ভাববো?
কারণ আমি তো তাই।
আমি তীক্ষ্ণকণ্ঠে বললাম, বোকার মতো কথা বলো না।
–সেটাই তো কথা, মেগান মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, লোকে আমাকে বোকা ভাবে। কিন্তু সত্যিই আমি বোকা নই। আমি ওদের ঘেন্না করি।
মেগান ওর বিষাদমাখা, কিন্তু শিশুসুলভ নয় চোখে আমার দিকে তাকায়। বলে আমার মতো হলে আপনিও মানুষকে ঘেন্না করতেন। যদি কেউ আপনাকে না চাইত
–মনটা বেশ উগ্র বিকারের দিকে ঝুঁকেছে বলে আন্দাজ হয় না তোমার?
–হ্যাঁ, লোকে ওরকমই ভাবে। ব্যাপারটা তো ঠিকই। মা আমাকে পছন্দ করে না। আমি বোধহয় তাকে আমার সেই নিষ্ঠুর বাবার কথাই মনে করিয়ে দিই। লোকের কথায় যা বুঝি, বড়ো ভায়ানক লোক ছিলেন তিনি। বেড়ালেরা যে বাচ্চাটিকে পছন্দ করে না তাকে খেয়ে ফেলে, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে তা হয় না, তাকে পুষতেই হয়। আসলে মায়ের ইচ্ছে আমার সত্বাপ আর ছেলে দুটোকে নিয়ে আলাদা সংসার পাতা।
তাহলে তুমি সব কিছু ছেড়ে চলে গিয়ে কোনো কিছুর একটা ট্রেনিং নিয়ে, নিজস্ব জীবন বেছে নিচ্ছ না কেন। যেমন শর্টহ্যান্ড-টাইপ কিংবা বুককিপিং
-ওসব আমি পারব বলে মনে হয় না। তবে কেন আমি চলে যাবো। কেন আমায় যেতে বাধ্য করা হবে? ওরা আমাকে না চাইলেও আমি থাকবো। থাকবো আর প্রত্যেক হতচ্ছাড়া শুয়োরগুলোকে কাদাব। আমি গাধা? আমি কুচ্ছিত? আমি এই লিমস্টকের প্রত্যেকটা লোককে দেখিয়ে দেব।