দেখলাম জোয়ানা ঝা করে মিসেস সিমিংটনের দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু মেগানের বয়স তো কুড়ি, তাই না?
-হা হা, তাই তো? কিন্তু বয়সের তুলনায় ও বড্ড বেশি কাঁচা। আসলে আমার ধারণা সব মায়েরাই তার ছেলেপিলেদের কোলের শিশু করে রাখতে চান।
আমি খেয়াল করলাম মিসেস সিমিংটনের ঐ পাংশু, ম্লান সুশ্রীতার পেছনে একটা স্বার্থপর, আগ্রাসী প্রকৃতি লুকিয়ে আছে। আমার বিরাগ ভাবটা আরো বেড়ে গেল যখন উনি বললেন, আমার বেচারী মেগান। মেয়েটা রীতিমতো ঝঞ্ঝাটে। চেষ্টা করছি কিছু একটা কাজের মধ্যে ওকে রাখতে তা ও কিছুই শিখবে না।
–তা ওর খাতিরে একটা নাচের মজলিশ করুন না? জোয়ানা কৌতুক করে বলল।
–নাচ? না না, ওসব জিনিস আমাদের এখানে চলে না। মিসেস সিমিংটন বললেন।
আমরা এরপর ওঁদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
জোয়ানা উগ্রভাবে এ্যাকসিলেটারে চাপ দেয়। গাড়ি প্রায় লাফিয়ে ওঠে। বলে, মেগানের জন্যে আমার খুব দুঃখ হয়। ওর মাটা ওকে একেবারে দেখতে পারে না।
–আরে জোয়ানা, ব্যাপারটা অতো খারাপ কী আর?
-খারাপ নয়? এরকম অনেক মা-ই আছেন যারা বাচ্চাদের ভালোবাসেন না। অভিমান আছে এমন কোনো প্রাণীর মধ্যে এই বোধটা ভীষণ অসুখী ভাবের সৃষ্টি করতে পারে। মেগান যথেষ্ট অনুভূতিশীল।
-হ্যাঁ, আমারও তাই ধারণা, বলে আমি চুপ করে রইলাম।
জোয়ানা খানিকক্ষণ বাদে দুষ্টুমিভরা হাসি হেসে বলল, ঐ গভর্নেসের ব্যাপারে তোমার ভাগ্যটাই খারাপ। যতবার ওর দিকে চেয়েছে তোমার চেহারার পুরুষসুলভ হতাশার ভাবটা আমি বুঝি লক্ষ্য করিনি? তবে তোমার সঙ্গে একটা ব্যাপারে আমি একমত, অত রূপ, জলে গেছে।
-তুই কিসের কথা বলছিস আমি বুঝতে পারছি না।
–দেখতে তো সত্যিই ভালো মেয়েটা। অদ্ভুত, যে একটুও অন্য আবেদন নেই! এমন জিনিস যা কোনো মেয়ের আছে, কোনো মেয়ের আদৌ নেই। কোনো মেয়ে সামান্য কিছু বললেও পুরুষরা হাঁ করে তার কথা শুনতে চায়।
-জোয়ানা, তোর কথা শেষ হলো?
–আগে বল আমার কথা মানছো?
হার মেনেও মেনে নিচ্ছি।
তাছাড়া যুগ্যি আর কে আছে এখানে? হয়তো শেষে এমিলি গ্রিফিথকে বেছে নিতে হবে।
-ও তো আমার চোখে একটা পুরুষালি মেয়ে ছাড়া কিছু নয়। তোর নিজের বেলা কী করতে যাচ্ছিস শুনি?
-আমি?
–হ্যাঁ। তোরও তো একটু মুখ বদলাবার সময় এসেছে।
–তুমি পলের কথা ভুলে যাচ্ছো! জোয়ানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।
–তুই আর দশটা দিন পরই বলবি, কে পল? কোন পল? কোনো পল-টল চিনি না।
–তুমি ওকে কোনোদিনই পছন্দ করোনি। কিন্তু ও সত্যি একটা জিনিয়াস গোছের ছিল।
–হয়তো ছিল, তবে আমার সন্দেহ আছে, ঐ জিনিয়াস লোকদের ঘেন্না করা উচিত। তবে তুই এ তল্লাটে একটাও জিনিয়াস খুঁজে পাবি না।
জোয়ানা আফশোসের সুরে বলল, তা হতে পারে না।
-তোকে শেষে আওয়েন গ্রিফিথেরই শরণ নিতে হবে, তবে তুই যদি কর্নেল অ্যাপল্টনকে বেছে নিস। সারা বিকেলটা তোর দিকে ভুখা কুত্তার মতো তাকিয়েছিল।
–ঠিক ধরেছে। আমার ভীষণ বিব্রত লাগছিল।
জোয়ানা নীরবে গাড়ি গেটের ভেতরে দিয়ে গ্যারেজের সামনে আনে।
জোয়ানা বলে, আমি বুঝি না কোনো লোক কেন ইচ্ছা করে এড়াবার জন্যে অন্য পথ ধরে? ব্যাপারটা অভব্য।
-ও তাই। লোকটাকে ঠান্ডা মাথায় তক্কেতক্কে থেকে শিকার করছি।
ধীরে ধীরে সাবধানে গাড়ি থেকে বেরিয়ে লাঠিদুটো সামলে নিই।
আমি কঠিন গলায় বলি, আমরা এখানে এসেছি একটু নির্ঝঞ্ঝাট শান্তির খোঁজে যাতে তা পাই তাই দেখব। কিন্তু নির্ঞ্ঝাট শান্তি বোধহয় আমাদের কপালে ছিল না।
.
০৪.
হপ্তাখানেক পরের ঘটনা। প্যারট্রিজ এসে জানালো মিসেস বেকার আমার সঙ্গে দু-এক মিনিট কথা বলতে চান।
মিসেস বেকার? কিছুতেই নামটার হদিশ করতে পারলাম না। মিস জোয়ানার সঙ্গে তো সে কথা বলতে পারে। কিন্তু পরে বুঝলাম, মিসেস বেকার হল বিয়েট্রিজের মা এবং আমিই একমাত্র ব্যক্তি যার সঙ্গে সে সাক্ষাৎ করতে চায়। আমি সম্মতি জানালাম।
বিশাল বপু, পোড়খাওয়া চেহারার মিসেস বেকার অনর্গল দ্রুতগতিতে বলে যেতে লাগল, আমি ভেবে দেখলাম স্যার, আপনি একমাত্র লোক, যিনি আমার এ অবস্থায় কি করা উচিত তা বুঝিয়ে বলতে পারেন।
-হ্যাঁ, নিশ্চয়…ইয়ে আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারলে খুশী হবো
মিসেস বেকার একটা চেয়ারে বসে বললেন, হ্যাঁ স্যার, আমিও চাইছিলাম আপনার কাছে আসতে। আর কিছু করাও দরকার, জানেনই তো আজকালকার ছেলেছোকরাদের মাথা গরম, কোনো কথাই শোনে না। আমি বিয়েট্রিজকে বলেছি–তাকে আচ্ছা মতো শিক্ষা দিতাম, আর ঐ মিল পাড়ার মেয়েটাও, কী বলেন?
আমি হতভম্বের মতো বললাম। দুঃখিত, আপনার কথা আমি ঠিক বুঝছি না।
-ঐ তো, চিঠিগুলো স্যার। বিচ্ছিরি-নোংরা চিঠিগুলো। কথাগুলো কি নোংরা, ঐ একটাই পেয়েছিল। আর যার জন্য ওকে এ-বাড়ির কাজ ছাড়তে হলো।
আমি কিছু বলতে গেলাম কিন্তু মিসেস বেকার বাধা দিয়ে বলতে থাকলেন, আমাকে আর বলতে হবে না স্যার। ওতে যা লেখা ছিল তা ডাহা মিথ্যে কথা। আমি ভালোই বুঝি, আপনি ও জাতেরই নন স্যার, তার ওপর পঙ্গু। তবু মেয়েটাকে বলি এ বাড়ির কাজ ছেড়ে দিতে। একটা সমর্থ্য মেয়ে কতো সাবধান হতে পারে?
মিসেস বেকার আবার দম নিয়ে শুরু করল, ভেবেছিলাম, এবার বোধহয় বিষ ছড়ানো বন্ধ হলো কিন্তু জর্জ মানে ঐ গ্যারেজের ছেলেটা যার সঙ্গে বিয়েট্রিজ ঘোরাফেরা করত, সেও পেল ঐ রকম একটা চিঠি। যাতে লেখা ছিল, বিয়েট্রিজকে নিয়ে নাকি ফ্রেন্ড লেডবেটারের টম ফস্টিনস্টি করছে–আমি হলফ করে বলতে পারি স্যার, ও ভদ্রতা করেই যা একটু কথাবার্তা বলে ওনার সঙ্গে।