আমি জিজ্ঞেস করি, উনি আসলে চিঠি পাননি?
নিশ্চয়ই নয়। তিনি লাঞ্চের পর সায়াটিকার ব্যথা উপশমের জন্যে পুরিয়া খেতেন, মিঃ সিমিংটন তার ওপরেরটায় সায়ানাইড মিশিয়ে রাখলেন। তার একমাত্র কাজ বাকি রইল, এলসি বাড়ি ফেরার আগে বউয়ের নাম ধরে ডেকে সোজা তার ঘরে চলে গিয়ে স্ত্রী যে গ্লাসে জল খেতেন, ঐ গ্লাসে একদানা সায়ানাইড ফেলে বেনামী চিঠিটা পকেট থেকে বের করে দলা পাকিয়ে চুল্লির দিকে ছুঁড়ে ফেলা।
আর মিসেস সিমিংটনের লিখে যাওয়া কাগজটা একেবারে ধাপ্পা। মিঃ সিমিংটন কোনো এক সময় তার স্ত্রীর কাছ থেকে কোনো বার্তা পেয়েছিলেন যে বার্তায় ঐ কথাটা ছিল, আর পারছি না–তিনি প্রয়োজনীয় কথাগুলো চিঠি থেকে ছিঁড়ে নিলেন।
জোয়ানা বলল, অ্যাগনেসকে খুন করার প্রয়োজনটা নিশ্চয় ছিল না?
–মিঃ সিমিংটন নিঃসন্দেহেই শুনেছিলেন মেয়েটা প্যারট্রিজকে ফোনে বলছে, মনিব গিন্নির মৃত্যুর পর থেকে সে বিভ্রান্তবোধ করছে। সিমিংটন কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি।
-কিন্তু আপাত নজরে তো তিনি সারা বিকেলটা অফিসে ছিলেন।
–আমার ধারণা অফিস যাওয়ার আগেই তিনি মেয়েটাকে খুন করেন। মিস হল্যান্ডকে দেখিয়ে তিনি হলঘরে ঢুকেই সামনের দরজা খুলে আবার বন্ধ করে চট করে ঢুকে পড়েন ছোটো কামরাটায়। যেন তিনি বেরিয়ে গেলেন। অ্যাগনেস সামনের দরজা খুলতে গেলে পেছন থেকে নোড়া দিয়ে আঘাত করে, নিকি ঢুকিয়ে খুন করে মেয়েটাকে কাবার্ডে ঢুকিয়ে রেখে হনহন্ করে অফিসে চলে যান।
জোয়ানা জানালো, পুলিশ আওয়েনের ডিসপেনসারি থেকে হারানো নোড়া আর শিকটাও পেয়েছে। ওগুলো সিমিংটনের দফতরের একটা পুরানো জংধরা দলিলের বাক্সের মধ্যে পেয়েছে।
এদিকে এইনি গ্রিফিথের গ্রেপ্তারের দিন সিমিংটনের হাতে অ্যাটাচির মধ্যে বইয়ের কাটা পাতাগুলো আর নোড়াটা নিয়ে গিয়েছিলেন। তার আগের ঘটনা একটু বলি, মিস হল্যান্ড তাকে লেখা চিঠিটা মিঃ সিমিংটনকে দেখালে তিনি বুঝলেন ওটা কে লিখেছে। এরপর তিনি চিঠিটা থানায় নিয়ে গেলে আরো নিঃসন্দেহ হন এই শুনে যে, পুলিশ মিস গ্রিফিথকে ঐ চিঠিটা টাইপ করতে দেখেছে। এমন সুযোগ তিনি হাতছাড়া করলেন না।
–তিনি সেদিন সপরিবারে এইমির বাড়িতে চা খেতে গেলেন। হলঘর দিয়ে হেঁটে এইমি আর পুলিশের পেছনে আসার সময় দু-এক মিনিটের মধ্যে তিনি ঐ ছেঁড়া পাতা আর নোড়া এইমির কাবার্ডে লুকিয়ে দিলেন।
-কিন্তু মিস মারপল, আপনি এ ব্যাপারটায় মেগানকে জড়ালেন কেন? আমি বললাম।
–লোকটার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছিল না। তাই চেয়েছিলাম এমন কাউকে যে আমাকে সাহায্য করতে পারে, যার সাহস ধূর্ততা আর প্রচণ্ড বুকের পাটা আছে। ঐ মেগানই ছিল আমার হাতিয়ার।
-বুঝলাম মিস মারপল।
.
১৫.
হাইস্ট্রিটের সকালবেলা।
–মিস এমিলি বারটন মুদির দোকান থেকে বাজারের থলি হাতে বেরিয়ে আসছেন। চোখজোড়া উত্তেজনায় ভরা।
-ওঃ মিঃ বার্টন, এখন বড়ো ব্যস্ত আছি ভাই। ভাবুন তো শেষ অবধি সত্যি সত্যি আমি সাগর পাড়ি দিতে চলেছি।
আশা করি বেড়ানোটা খুব উপভোগ করবেন।
-একলা বেরুতে কি সাহস হত! কিন্তু সৌভাগ্য আমার কিভাবে সব কিছু হয়ে গেল নিজেই জানি না। অনেক দিনের চিন্তা ছিল, লিটল ফার্জ বেচে দেবার, আমার তো তেমন সঙ্গতি ছিল না। কিন্তু অচেনা উটকো লোক সেটা কিনে থাকবে এটা বরদাস্ত করতে পারতাম না। এখন আপনিই যখন ও বাড়িটা কিনে নিলেন আর মেগানের সঙ্গেই ওখানে থাকবেন–ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে গেল। তারপর এইমি…এতসব ভয়ানক ঝামেলার পর নিজেকে নিয়ে কি করবে তা ভাবতে না পেরে আমার সঙ্গে বেড়াতে যেতে রাজী হয়ে গেল। ওর ভাইটিও আপনার বোনকে বিয়ে করে আমাদের এই লিমস্টকে যে আপনারা দুজনে থাকতে মনস্থির করেছেন ভাবতে আনন্দ হয়। আমার সত্যিই ধারণা সব কিছু একসময় পরম মঙ্গলের মধ্যে শেষ হয়।
হাইস্ট্রিট ধরে হেঁটে যাই। সিমিংটনদের বাড়ির ফটক দিয়ে ভেতরে যাই। মেগান আমার সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে আসে।
খুব রোমান্টিক কিছু হলো না আমাদের, কারণ ওর সঙ্গে ছিল পেল্লায় আকারের একটা বুড়ো ইংলিশ শীপডগ।
-দরুণ কুকুর না? মেগান বলল।
–ওটা বুঝি আমাদের?
-হ্যাঁ, জোয়ানা আমাদের বিয়ের উপহার হিসেবে দিয়েছে। কত মজার্দার সব উপহার পেয়েছি জানো? ঐ যে নোমওয়ালা উলের জিনিসটা, ওটা পেয়েছি মিস মারপলের কাছ থেকে। আর চমৎকার ঐ ক্রাউন-ডার্টি চায়ের সেট, ওটা পাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া। আর এলসি আমাকে একটা রুটি সেঁকা টোস্টার
-যে যেমন তেমনি, বলে উঠি আমি। বিয়ের উপহার তো আগেভাগে পেলে এখন যদি মন বদল করো, তাহলে যার যার জিনিস ফেরৎ পাঠাতে হবে।
–আমি মন বদলাবো না। আরো কি এসেছে শুনবে? মিস কলপ পাঠিয়েছেন একটা মিশরীয় পাথরের ভ্রমণ।
–মৌলিক চিন্তা করেন তো! আমি বললাম।
–ওঃ হো! আসলটাই শোননি। প্যারট্রিজ একটা ছুঁচের কাজ করা চায়ের টেবিলের ঢাকা পাঠিয়েছে। আচ্ছা, একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, জোয়ানা কুকুরের নিজের বগলেশ আর শেকল ছাড়াও একজোড়া বকলেশ-শেকল পাঠিয়েছে। কেন? বললাম, ওটা ওর ছোট্ট রসিকতা।