–আমি যথেষ্ট পরিমাণে টাকা চাই। আমার বাবা জেলে গিয়েছিলেন ব্ল্যাকমেলের অপরাধে আমি তো তারই মেয়ে, তার সঙ্গেই আমার মিল। সেদিন আমার মার ঘরে ওষুধের পুরিয়াগুলো নিয়ে আপনাকে যা করতে দেখেছি, তা প্রকাশ করে দেব।
সিমিংটন ভাবহীন, বিস্মিত হয়ে পড়লেন। তিনি একটু ফ্যাকাসে হেসে টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে চেক লিখে মেগানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, তুমি কিসের কথা বললে ঠিক বুঝতে পারিনি। এই তোমার চেক।
আমি ওঁর মুখখানা দেখে একটু বেসামাল হয়ে পড়তে শুনলাম কানের কাছে ন্যাসের ফিসফিস আওয়াজ, চুপ বার্টন, ঈশ্বরের দোহাই। আমাকে জোর করে বাড়ির পেছনে টেনে নিয়ে গেলেন নিজের সঙ্গে। আমি তাগিদের সুরে বলতে থাকি, মেয়েটা নিরাপদ নয়। ওকে এখান থেকে বের করে আনতেই হবে।
.
ন্যাসের কথামতো আমাকে চলতে হবে। আমার মোটেই ভালো লাগেনি…তবু হার মানলাম। আমি শপথ নিয়েছি, ওঁদের কথামতো সব হুকুম মেনে চলব।
সেই শর্তেই আমি, ন্যাস আর পারকিন্সের সঙ্গে পেছনের দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। সিঁড়ির চাতালে জানলার কুলুঙ্গিতে ভেলভেটের পর্দার আড়ালে আমি আর ন্যাস লুকিয়ে রইলাম।
সিমিংটন চাতাল পেরিয়ে মেগানের ঘরে ঢুকলেন। আমি জানতাম পারকিন্স আগে থেকেই ভিতরে খোলা দরজার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে, তাই ভরসা পেলাম কিছুটা।
দেখলাম, সিমিংটন মেগানকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বেরিয়ে আসছেন আর রান্নাঘরের দিকে নিচের তলায় যাচ্ছেন। আমরাও অনুসরণ করলাম দূরত্ব বজায় রেখে।
সিমিংটন ওকে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে গ্যাস চুল্লির মধ্যে ওর মাথাটা রেখে সবে ওকে শুইয়েছেন। আর গ্যাসটা চালু করে দিয়েছেন এমন সময় ন্যাস আর আমি আলো জ্বালালাম।
সিমিংটন ধ্বসে পড়লেন। অমি গ্যাসটা বন্ধ করে মেগানকে টেনে তুললাম।
.
উপর তলায় আমি মেগানের জ্ঞান ফেরাবার চেষ্টা করছি আর বড়ো বেশি ঝুঁকি নেওয়ার জন্যে ন্যাসকে গালমন্দ করেছি।
ন্যাস বলতে লাগল, বিছানার পাশে দুধের বাটিটায় সামান্য ঘুমের ওষুধ। ওকে বিষ দিয়েও মারতে পারত সিমিংটন কিন্তু এখন আর ওঁর দ্বারা কোনো রহস্যময় মৃত্যু ঘটাতে চাননি। যেন মায়ের মৃত্যুকে মেনে নিতে না পেরে অস্বাভাবিক ধরনের মেয়েটা গ্যাসচুল্লিতে মাথা রেখেছে এটাই সকলে বিশ্বাস করবে।
মেগানের জ্ঞান ফিরল। সে আমাকে তার আমার উদ্দেশ্যে লেখা অসমাপ্ত প্রেমের চিঠিটা দেখাল। যেটা লিখতে লিখতে সে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঢলে পড়েছে।
.
১৪.
তাহলেই দেখেছেন মিঃ বাটন, বললেন মিসেস কলপ–একজন বিশেষজ্ঞ ডেকে এনে আমি ভুল করিনি কিছু।
বাইরে তুমুল বৃষ্টি। আমরা সবাই জুটেছি ওঁর বাড়িতে।
-কিন্তু আপনার বিশেষজ্ঞ ভদ্রলোকটি কে? অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করি।
-ভদ্রলোক নয় হে, হাত ঘুরিয়ে দেখালেন মিস মারপলের দিকে, বললেন, ইনি। এ পর্যন্ত যত মানুষকে জেনেছি তাদের সকলের চেয়ে উনি নানা মানব চরিত্রের নিচ প্রবৃত্তি সম্পর্কে বেশি খবর রাখেন। মিস মারপল লক্ষিতভাবে বললেন, এভাবে বলো না ডিয়ার। মিসেস কলপ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, কিন্তু ওটাই তো সত্যি?
আমরা সবাই কিছু জানতে প্রত্যাশা করছি বুঝে মারপল খুন সম্পর্কে একটা বিনীত বিবৃতি দিলেন।
ঘটনাটা ধীরবুদ্ধির সিদেসাধা কেস…যদিও একটু অপ্রীতিকর। অন্যদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়াই খুনীর একমাত্র উদ্দেশ্য, বুঝলেন…সকলেই ভুল মিনিস্টার দিকে তাকাচ্ছে–বেনামী চিঠি। আসলে তার কোনো অস্তিত্বই ছিল না। চিঠির ব্যাপারটা কিন্তু বাস্তব মোটেই নয়।
চিঠির ব্যাপারটা ঘটনা হিসেবে দেখলে স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগবে, তাহলে মিসেস সিমিংটনের খুনী কে? এসব ক্ষেত্রে যে ব্যক্তিটির ওপর প্রথম সন্দেহ জাগে সে হল স্বামী। আর যদি শুনি তার বাড়িতে একজন অতি আকর্ষণীয় যুবতী গভর্নের্স রয়েছে। মিঃ সিমিংটন অবদমিত ভাবাবেগশূন্য মানুষ…একজন ঝগড়াটে উকট স্নায়ুরোগী স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতে করতে হঠাৎ-ই আসে যৌবনময়ী প্রাণীটি। আর ঐ বিশেষ বয়সে ভদ্রলোক সেই মহিলার প্রেমে পড়ে তাকে বিবাহ করতে চাইলে, একমাত্র সমাধানের উপায় পথের কাঁটা স্ত্রীকে খতম করা।
ফৌজদারী অপরাধের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি চালাকি করে এক অস্তিত্বহীন বেনামী পত্রলেখককের সৃষ্টি করলেন, যাতে পুলিশের সন্দেহ কোনো মহিলার ওপর পড়ে। প্রত্যেকটা চিঠিই মেয়েমানুষের মতো করে লেখা, গত বছরের মামলায় ব্যবহৃত চিঠিগুলোর নকল করে লেখা হল।
পুলিশের কৌশলগুলোর (যেমন–হাতের ছাপ, টাইপের অক্ষর) হাত থেকে বাঁচতে তিনি টাইপ মেশিনটা মহিলা ইনস্টিটিউশনে দান করার আগেই সমস্ত খামগুলো টাইপ করে রেখেছিলেন। হয়তো কোনো একদিন লিটল ফার্জে গিয়ে সুযোগ বুঝে ঐ বইটার পাতাগুলো কেটে এনেছিলেন।
অবশেষে বিষকলম প্রতিষ্ঠা পেল। তবে তিনি আন্দাজ করতে পারেননি যে আগনেস তার বয়ফ্রেণ্ডের সঙ্গে ঝগড়া করে ফিরে আসবে।
-ঐ অ্যাগনেস মেয়েটি আক্ষরিক অর্থে কিছুই দেখেনি। সে তার ছেলেবন্ধুটির ক্ষমা চাওয়ার জন্যে ফিরে আসার অপেক্ষায় রান্নাঘরের জানালা দিয়ে তাকিয়েছিল। আর একটা ব্যাপার, ঐ বাড়িতে কেউই আসেনি, ডাকপিয়ন বা অন্য কেউ। ঢিমে বুদ্ধির জন্যেই ওর বুঝতে একটু সময় লেগে যায়। কারণ সে চোখের সামনে মিসেস সিমিংটনকে চিঠি পেতে দেখেছে।